নরওয়ে থেকে:-
আফসার চৌধুরীর বাড়ি সিলেটের কানাইঘাটের এক গ্রামে, ও মুক্তিযুদ্ধা বাবার সংগ্রামী এক ছেলে। এত কম বয়সে সুন্দর ভবিৎষতের জন্য মানুষ যে কি রকম সংগ্রাম করতে পারে , আফসারের প্রতিদিনকার জীবন যাপন না দেখলে বাংলাদেশ থেকে আপনি তা কল্পনাও করতে পারবেন না। আমার বাড়িও সিলেটের গোলাপ গঞ্জের ছোট্ট একটা গ্রামে। আফসার চৌধুরী উদার মানুষিকতার একজন মানুষ, যার কারণেই ওকে আমার অনেক ভালো লাগে । ও আমার ছোট ভাইয়ের মতো। আমাদের মধ্যে অনেক মিল, আমাদের দুজনেরই বেড়ে উঠা গ্রামে, আমরা দুজনই সিলেটের ছেলে এবং এক সময় আমরা দুজনই সিলেট এম সি কলেজের ছাত্র ছিলাম এবং সিলেটে টিলাগড়ের সাথে আমাদের জীবনের অনেক মধুর স্মৃতি লুকিয়ে আছে । জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত অবলোকন করে আমরা বড়ো হয়েছি , তবে ঝুঁকি নেবার ব্যাপারে আমরা একটুও পিছ পা নোই। নিজেদের কর্ম ও সততার উপর আত্মবিশ্বাস আছে বলেই আমরা ঝুঁকি নিতে ভয় পাইনা। নরওয়ে যেহেতো খুবই ব্যায় বহুল একটা দেশ, তাই সত্যিকার অর্থে নরওয়েতে স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করাই যেখানে অনেক কষ্ট সাদ্ধ, সেখানে কোটি টাকার লোন নিয়ে শুধু মাত্র নিজেদের আত্ম বিশ্বাসের উপর ভর করে বিলিওনের ব্যাবসায়ীদের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্রিস্টিয়ানস্যান্ড ও ম্যান্ডাল দুটো শহরে আমরা দিনের পর দিন ব্যবসা করে যাচ্ছি যা করতে হলে সত্যি কার অর্থে বুকের পাটা অনেক বড়ো হওয়া লাগে। কেই বা বলেন অহেতুক নিজের ভবিষৎ জীবনের উপর এত টাকার ঝুঁকি নিতে চায় ?? কিন্তু আমরা নিয়েছি।
আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে যে আমরা পারবো। যেহেতো নরওয়ে খুবই নিয়মতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র তাই এখানে কোনো কিছুতে হেরফের করার কোনো সুজুগ নাই এবং আমাদের নিজেদেরও হেরফের করবারও কোনো রকম ইচ্ছা নাই। আর এ কারণেই আমরা যারা ছোট খাটো ইনভেস্ট নিয়ে ব্যবসা করি তাদের পক্ষে বিলিওনিয়ারদের সাথে পাল্লা দিয়ে ঠিকে থাকাটাই কষ্ট সাদ্ধ। তারপরও আমরা গ্রামের ছেলে, সংগ্রামময় জীবনে আমরা কক্ষনো হাল ছাড়িনাই , আর তাইতো কোনো একদিন নরওয়ের মতো দেশে বুক উঁচু করে চলার মতো রাস্তা আমরা ঠিকই করে নেবো। আমাদের এ হার না মানা সংগ্রাম হয়তোবা আগামীতে নরওয়েতে অনেক বাংলাদেশির ব্যবসায়িক হবার স্বপ্ন পূরণের পথকে প্রশস্ত করবে। বাংলাদেশের মতো একটা গরিব ও অব্যাবস্তাপনাময় দেশ থেকে উঠে এসে অল্প সময়ের মধ্যে নরওয়ের মতো একটা দেশে কোনো কিছু খুলে বসা চারটি খানি কথা নয়, কেননা এখানে কোনো কিছু খুলতে গেলে শুধু পয়সা থাকলেই হয়না, যে জিনিসটা খুলছেন তার উপর নিজের প্রফেশনাল যুগ্যতা, নিয়ন্ত্রণ, অনেক সার্টিফিকেট, ডকুমেন্টস ও অন্য অনেক কিছু ব্যবস্থাপনার দরকার পড়ে, যা আমি এ আফসার সফলভাবে করতে সক্ষম হয়েছি। ২ বা ৬ মাসের জন্য নাম মাত্র অনেকেই ব্যাবসায়ী নামদারী হতে পারেন , তবে অন্য অনেকের মতো আমরা শুধু মাত্র নামে নয়, শিগ্রই কোনো একদিন আমরা সফলকামো উদ্দ্যুক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে ছাড়বোই। আফসার ও আমি যেভাবে দিন রাত ১৬ ঘন্টা করে কাজ করি , একদিন না একদিন এর সুফল আসবেই। যে যাই বলুক না কেন , আমরা জানি যে আমাদের শিক্ষা ও আত্মবিশ্বাস আমাদের সাথে প্রতারণা করবে না। অনেক দূর পাড়ি দিয়ে এসেছি,, নীলকণ্ঠের মতো আরো কয়েকটা বৎসর পরিশ্রমের বিষ গলায় ঢেলে যাবো। কিন্তু তার পর যা করবো, তা শুধু স্বপ্নপূরণের ইতিহাস হয়ে জীবনের পাতায় লেখা থাকবে।
আসফার চৌধুরীর জন্য অনেক শুভ কামনা রইলো।