ক্রিস্টিয়ানস্যান্ড, নরওয়ে থেকে,
পলাশ দাদার সাথে আমার পরিচয় ২০০৩ সালের দিকে, সিলেটের মেজরটিলার ফ্যান্টাসি জিমনেসিয়ামে।
সিলেটের বেশিরভাগ ছেলেরা যখন সন্ধ্যার সময় চায়ের আড্ডায় পলিটিক্স নিয়ে আলোচনায় মত্ত থাকতো, তখন আমি, পলাশ দাদা, জুনু, মতি, রনি, মামুন, দীপক সহ আরো অনেক ছেলেরা সারা সিলেটজুড়ে বিভিন্ন জিমনেসিয়ামগুলোতে নিজেরদের শরীর স্বাস্থ ভালো রাখার জন্য খুব মনোযোগ দিয়ে শরীর চর্চা করতাম। আর স্বপ্ন দেখতাম লেখাপড়া শেষ করে একদিন লন্ডন যাওয়ার।
২০০৩ সালের দিকে জিমনেসিয়ামে পলাশ দাদার সাথে প্রথম দেখা হলেও অল্প পরিচয়েই উনি আমার বন্ধুর মতো হয়ে যান। দাদার সাথে বিয়ে, গায়ে হলুদ সহ আরো নানা অনুষ্টান অনেক উপভোগ করেছি সিলেটের সেই উত্তাল দিনগুলোতে।
পলাশ দাদার একটা কথা এখনো কানে ভাসে,
উনি সব সময় বলতেন, শরীফ তুমি ফিজিক্সের ছাত্র, অনেক ভালো একটা ছেলে, দেখো পলিটিক্স এর ভেতর ঢুকে নিজের শিক্ষা জীবনটাকে নষ্ট হতে দিওনা। পড়ালেখা করলে অনেক কিছু করতে পারবে কিন্তু পলিটিক্সে জড়িয়ে পড়লে হয়তোবা সব খোয়াবে।
উনার ভাই রণজিৎ সরকার, সিলেটে আওয়ামীলীগের টিলাগড় অঞ্চলের সবচেয়ে পাওয়ারফুল নেতাদের একজন ছিলেন, পলাশ দাদা নিজ মুখে কোনোদিনও আমাকে তা বলেনি। কতটুকু অমায়িক হলে একজন মানুষ তার পরিবারের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিপত্তিকে লুকিয়ে রাখে তা পলাশ দাদাকে যারা চেনেন না তারা তা বলতে পারবেন না।
পলাশ দাদা আমাদের চেয়ে বয়সে ৩ কিংবা ৪ বছরের বড়ো হবেন।আমি পড়তাম অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে। (2002-2003) উনি তখন সিলেট এম সি কলেজে ইসলামের ইতিহাসে মাস্টার্সের ছাত্র। অনেক সুন্দর করে কোরান শরীফের নানা সূরা বলতে পারতেন পলাশ দা, সাথে করে সে সকল সূরার তর্জমাও করতে পারতেন।
বর্তমানে সপরিবারে কানাডার, মন্ট্রিলে বসবাস পলাশ দাদার,, অনেক ভালো মনের মানুষ পলাশ দা কানাডায় ভালো আছেন, প্রকৃতির নিয়মেই পলাশ দাদার মতো মানুষেরা সব সময়ই ভালো থাকেন।
অনেক মিস করি উনাকে, মিস করি পিছনে ফেলে আসা সিলেটের সেই উত্তাল দিনগুলোকে। যে দিনগুলোতে সুশিক্ষা এবং সুশিক্ষিতদের একটা মূল্য ছিল, মানুষের মাঝে একে ওপরের প্রতি ভালোবাসা ছিল, ছোটো বড়োর ভেদাভেদ ভুলে ছিল বন্ধুত্ব আর অতিত্বটার এক অনন্য মেলবন্ধন।
গোলাকার পৃথীবির কোনো এক শহরে কোনো একদিন আবার দেখা হবে পলাশ দাদার সাথে । ভাতৃত্ব, স্নেহ আর ভালোবাসার বন্ধনটা যেন সেদিন পর্যন্ত অটুট থাকে।
ভদ্র, মার্জিত, সুদর্শন এবং অমায়িক পলাশ দাদা যেন সারাজীবন সুখী থাকতে পারেন এ কামনা সব সময়।