আকাশভরা সূর্যতারা, বিশ্বভরা প্রাণ…., দিনভর লাউডস্পীকারে ফিল্মের গান, পূজো প্যান্ডেলে সন্ধ্যা-আরতি, কিংবা ভোরবেলায় ফুল চুরি করতে গিয়ে কানাই মাস্টারের তাড়া খেয়ে পালানো …_ কিছুই ভুলে যাইনি এখনো!
সকালে খালিপেটে অঞ্জলি দেয়ার পর একপাতা প্রসাদ মেরে দিয়ে সদ্য ইস্ত্রী করা মাড় দেয়া কড়কড়ে নতুন জামা আর ইংলিশ প্যান্ট পরে পকেটে প্লাস্টিকের পিস্তল ফেলে দলবেঁধে প্রতিমা দেখতে যেতাম। সন্ধ্যেবেলায় ধূপের ধোঁয়া, হাজারো রঙীন বাতির আলো আর ঢাক-ঢোলের শব্দ মিলিয়ে মায়াবী পরিবেশের সৃষ্টি হতো। বাতাসা-নাড়ু বিতরণের সময় হুরোহুরি, পুজো প্যান্ডেলে নতুন রঙিন সাজে হাজার মানুষের ঢল, ছেলেপিলেদের শোরগোল, মায়ের হাত থেকে ফস্কে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া শিশুর কান্না, উলুদ্ধনী আর শাঁখের শব্দে মুখরিত আশপাশ…_ আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে! কোনো এক গ্রামীন দুর্গাপূজোয় হারিকেনের আলোয় প্রথমবার যাত্রা দেখেছিলাম জীবনে,…কোথায় গেল সেইসব দিন!
মনে আছে, পুকুরের ওপর ঝুলে থাকতো ভোরের কুয়াশা, শূন্য পুকুরঘাটের কোনায় কালো বেড়াল,…শিশিরে ভেজা পা পিছলে যেতো বলে কচ্ছপের পিঠের মত বাঁকা পুরনো রবারের স্যান্ডল হাতে নিয়ে শূন্য মাঠ পেরিয়ে যেতাম নদীতীরে, ফুলে ফুলে শাদা কাশবন দুলতো শরতের বাতাসে, মনে হতো শিশিরভেজা ঘাস থেকে আকাশের নীল অব্দি ভরে আছে শিউলি ফুলের গন্ধে। সেসব দিন আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবে না,… জানি। বুক ভরে শরতের বাতাসে শ্বাস নেবার ইচ্ছে হলে দীর্ঘশ্বাস আসে শুধু!
প্রবাস জীবনে এসবের কিছুই নেই,…তবে বহুদূর থেকে এখনো শিউলির গন্ধ পাই। এবং যথেষ্ট মূল্যবান স্মৃতির অংশবিশেষ এখনো ধুয়েমুছে যায়নি বলে “bliss of solitude”-এর মত কখনো কখনো মনে করে জাবর কাটার দুর্লভ আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করি না।
❝ শারদীয়া শুভেচ্ছা সবাইকে! …অভাববোধ এবং হারানোর ব্যাথা য্যানো কখনো কাউকে সইতে না হয়! ❞
ধন্যবাদ..এই সুন্দর উপহারের জন্য।
আপনার জন্যে রইলো শারদীয়া শুভেচ্ছা।
খুব উপভোগ্য একটি লেখা. চিরায়ত বাংলার এসব পালা পার্বনের মধ্যেই মিশে আছে আমাদের বাংলা সংস্কৃতি এবং সাংস্কৃতিক সত্তা. প্রবাসের এই “Life on Treadmill” এর মধ্যেও এই সত্তাকে ধারণ এবং শিখরের অন্নেষণ সহজ সাধ্য নয়. ধন্যবাদ অমিতাভ ভাই. আপনার কাছ থেকে আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম.