ইংলিশ নাম: Rose
বৈজ্ঞানিক নাম: Rosa spp.
পরিবার: Rosaceae

ভূমিকা:
গোলাপ তার সৌন্দর্য আর সুবাসের জন্য দুনিয়া ব্যাপী অতি পরিচিত আর ব্যাপকভাবে সমাদৃত ও জনপ্রিয় একটি ফুলের নাম ! ছোট বড়ো সবাই গোলাপ ফুল ভীষণ ভালোবাসেন ! গোলাপ ফুলের ব্যবহারও ব্যাপক ! বাসা বাড়ী সাজানো, বিয়ের অনুষ্ঠানে, জন্ম দিনের অনুষ্ঠানে, বাবা দিবস, মা দিবস, ভ্যালেনটাইন ডে, নতুন অতিথি অভ্ভর্থনা,  মৃত ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানানোতে, কোন মাননীয় রাষ্ট্রীয় অতিথিকে সাদরে গ্রহণ করার সময়, ইত্যাদি অনেক উপলক্ষকে কেন্দ্র করে গোলাপ ফুলের ব্যবহার হয়ে থাকে ! বিভিন্ন হারবাল ঔষুধ ও সুগন্ধি আতর তৈরীতেও গোলাপ ফুলের (damask rose) ব্যবহার হয়ে থাকে ! গোলাপের ফল দেখতে অনেকটা বেরী ফলের মতো যাকে রোজ হিপ (rose hip) বলা হয়ে থাকে এবং অনেকে খেয়ে থাকেন বা প্রিজারভেটিভ তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে ! গোলাপের হিপ্স এ প্রচুর ভিটামিন C রয়েছে, তা ছাড়া এর দ্বারা চা তৈরি করা হয়ে থাকে ! Hip rose এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো Rosa Rogusa !

গোলাপের জন্ম স্থান:
অধিকাংশ গোলাপ ফুলের বিভিন্ন জাতের জন্ম স্থান এশিয়া, কিছু জাতের উদ্ভব হয়েছে উত্তর আমেরিকাতে এবং অল্প কিছু হয়েছে ইউরোপ ও উত্তর পশ্চিম আফ্রিকাতে !

গোলাপের জাত ও রং:
Rosa Genus এর অন্তর্গত বিভিন্ন রং ও ঘ্রানের প্রায় শতাধিক গোলাপের জাত রয়েছে ! গোলাপের বিভিন্ন বাহারি চোখ জুড়ানো রং রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো সাদা, লাল. হলুদ, কালো, পিঙ্ক, ঘন ক্রিমসন ও মেরুন ! এদের অধিকাংশেরই মন মাতানো সুগন্ধ রয়েছে যা জাত ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে !

গোলাপের জাতের বিভিন্ন শ্রেণী রয়েছে ! এর মধ্যে Hybrid Tea Rose (common garden rose) যা খাড়া ও বেশ বড় আকারের হয়ে থাকে ! ডাবল ডেলাইট হলো হাইব্রিড টি রোজ এর একটি জাত যা খুবই সুগন্ধ যুক্ত ও প্রচুর ফুল দিয়ে থাকে পুরা মৌসুমে ! এছাড়াও Miniature rose, Centifolia rose, Polyantha rose, Grandiflora rose, Floribunda rose বেশ জন প্রিয় !

এ ছাড়াও বেশ কিছু বন্য জাতের গোলাপ রয়েছে যা বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন Virginia rose (originate from eastern north america) এদের পেটাল এর সংখ্যা পাঁচ ! অপর দিকে চাষ কৃত জাতে দ্বিগুন বা তার চেয়ে বেশি লেয়ার এ পেটাল থাকে !

গোলাপ ফুলের আকার অতি ক্ষুদ্র 1.25 cm বা 0.5 ইঞ্চি (tiny miniature) থেকে 17.5 cm বা 7 ইঞ্চি (hybrid rose) পর্যন্ত হয়ে থাকে !

গোলাপ চাষের উপযুক্ত মাটি ও মাটি তৈরী: দোআঁশ (loamy) মাটি ও প্রচুর জৈব সার গোলাপ চাষের জন্য প্রয়োজন ! গোলাপ চাষের জন্য জমিতে পানি নিস্কাশণের ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে ! মাটির pH বা অম্লত্ব 6-7 এর মধ্যে থাকা উত্তম ! জমির মাটিতে পানির প্রাকৃতিক লেভেল (land water table) উঁচু না হয়ে কিছুটা নিচু হওয়া ভালো ! জমিকে আগাছা মুক্ত করে মাটি উত্তম রূপে তিন চার বার 20-25 cm গভীর করে চাষ করতে হবে এবং 15 দিন সূর্যের আলোয় খোলা রেখে দিতে হবে ! জমি চাষের সময় পর্যাপ্ত কম্পোস্ট বা গোবর সার কিংবা গাছের বাকল গুঁড়া মিশিয়ে দিতে হবে ! অনেকে গোলাপ গাছে মাস্টার্ড অয়েল কেক বা সরিষার খৈল দিয়ে ভালো গোলাপ পেয়ে থাকেন !

আবহাওয়া:
ঈষৎ ঠান্ডা থেকে অল্প গরম আবহওয়া, উজ্জ্বল সূর্যের আলো (6-8 ঘন্টা) এবং মুক্ত বাতাস গোলাপ চাষের জন্য উপযোগী! গোলাপ চাষিদের মতে 15-27 ডিগ্রি তাপমাত্রায় প্রায় সকল জাতের গোলাপের ফুলের গুনগত মান ও পরিমান খুব ভালো হয়ে থাকে !

রোপন পদ্ধতি:
গোলাপের গাছ লাগানোর পূর্বে 30×30 cm সাইজের গর্ত করে নিতে হবে যাতে নতুন গোলাপ গাছের চারার গোড়ার মাটির বালতি সহযে বসিয়ে দেয়া যায় !

রোপণ সময়:
মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত গোলাপের চারা রোপণ করা যায় তবে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস গোলাপের চারা লাগানোর জন্য সব চেয়ে উপযুক্ত সময় ! পাহাড়ী এলাকার জন্য ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাস ভালো সময় !

রোপন দূরত্ব:
গোলাপ গাছের চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব নির্ভর করে কি উদ্দেশ্য ও কোন ধরণের জাত আবাদ করা হচ্ছে তার উপর ! এছাড়াও আবহাওয়া ও মাটির গুনাগুন জাত নির্বাচনের জন্য গুরুত্ব পূর্ণ ফ্যাক্টর ! Hybrid Tea and Floribunda roses বাগানের সৌন্দর্যের জন্য 75 cm দূরে দূরে লাগানো হয় ! Polyantha and Miniature roses 45 cm দূরে আর climbers and standards গোলাপ প্রায় 2 মিটার দূরে দূরে লাগানো হয় ! গ্রীন হাউসে ঘন করে 40×20 cm দূরত্বে লাগানো হয় !

অনেকে সাধারণত 2-3 ফুট দূরে দূরে লাগিয়ে থাকে ! গোলাপ গাছের চারিপাশে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা রাখা হলে বায়ু চলাচল ভালো থাকে ও রোগ বালাই কম হয় ! সাধারণত একটা গোলাপ গাছের ঝাড় তার চারি পাশে কেন্দ্র থেকে 18 ইঞ্চি জায়গা নিয়ে বিস্তৃত হয়ে থাকে ! তাই লাগানোর সময় এই বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে ! বড়ো কোন গাছের ডালের নিচে গোলাপ না লাগানোই ভালো কারণ এতে গাছের ছায়ার জন্য সূর্যের আলো কম পাই !

পানি দেয়া:
নতুন লাগানো গাছে নিয়মিত পানি দিতে হবে ! পানি দেয়ার জন্য Watering Can ব্যবহার করা যেতে পারে ! প্রতি একদিন পরপর যত টুকু সম্ভব গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে ! সরাসরি পাতার উপর বা ফুলের উপর পানি না দেয়াই উত্তম কারণ এতে রোগবালাই বেশি হবার সম্ভাবনা থাকে ! প্রতিটি গাছে 5-10 লিটার পানির দরকার হতে পারে! গোলাপ গাছে বিকালে পানি দেয়া ভালো অথবা খুব সকালে ! অতিরিক্ত সূর্যের আলোতে বা প্রখর রোদের সময় পানি না দেয়া ভালো !

রোগ বালাই:
গোলাপের অনেক রকমের রোগ বালাই হয়ে থাকে তবে বেশির ভাগই ফাংগাস বা ছত্রাক বাহিত রোগ ! তন্মধ্যে কচি পাতা ও কাণ্ডের পাউডারি মিলডিউ, পাতার ব্ল্যাক স্পট (পাতা ঝরে যায়), রাস্ট বা পাতার মরিচা ধরা রোগ ! তবে বাজারে বেশ কিছু রোগ প্রতিরোধী জাত পাওয়া যায় ! খুব গরম, বাতাসে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প, মেঘলা আবহাওয়া, পরিমিত আলো ও বাতাসের অক্সিজেন এর অভাবে গোলাপের রোগবালাই বেশি দেখা যায় ! এফিড (aphid) গোলাপের পাতা ও কচি কাণ্ডের প্রধান পোকামাকড় (insect pest) !

পাউডারি মিলডিউ:
এক গ্যালন পানিতে 1 টেবিল চামুচ বেকিং সোডা, 1/2 টেবিল চামুচ নন- ডিটারজেন্ট সোপ মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে প্রয়োগ করুন !
আমরা প্রতিদিন যে মাউথ ওয়াস ব্যবহার করি তাও গাছে দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে ! মিল্ক ও পানি 1:2 অনুপাতে আক্রান্ত গাছে প্রয়োগ করেও উপকার পাওয়া যাবে ! এ ছাড়াও যেকোনো সালফার ফাঙ্গিসাইড প্রয়োগ করা যেতে পারে !

পাতার ব্ল্যাক স্পট:
আক্রান্ত পাতা ও কান্ড কেঁটে ফেলে দিতে হবে ! সম্পূর্ণ গাছের কাণ্ডে ও পাতার উভয় পার্শে যে কোনও রাসায়নিক বা জৈব ছত্রাক নাশক (কপার, লাইম সালফার, নীম তৈল) প্রয়োগ করতে হবে !

পাতার মরিচা রোগ:
এটা গোলাপের একটা সাধারণ রোগ যা সম্পূর্ণ ভাবে নির্মূল করা কঠিন ! Tobe শুরুতেই akranto পাতা তুলে ফেলে ধ্বংস করে ফেলুন ! এবার যেকোনো ভালো ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে (organic or synthetic) প্রতি 7-14 দিন পর পর ! এই রোগ সাধারণত ভেজা, মেঘলা ও 55-75 deg F তাপমাত্রায় বেশি হয়ে থাকে !

গোলাপগাছের রোগ বালাই ব্যবস্থাপনার জন্য নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে !

রোগ প্রতিরোধক জাত নির্বাচন, উঁচু দোআশ জমি যেখানে পানি জমবে না, পর্যাপ্ত পঁচা গোবর বা কম্পোস্ট সার ব্যবহার, গাছ থেকে গাছের ও সারি থেকে সারির দূরত্ব, প্রচুর আলো ও পরিমিত বাতাস লাগে এমন জায়গায় গোলাপের চাষ, পরিমিতি সেচ, আগাছা ও আবর্জনা মুক্ত জমি, সঠিক নিয়মে প্রুনিং করা ইত্যাদি !

প্রুনিং:
প্রুনিং এর কলাকৌশল গোলাপের জাতের উপর নির্ভরশীল ! সাধারণত 3-5 ফুট উচ্চতার গাছে বছরে একবার প্রুনিং দরকার হবে ! প্রুনিং করার উপযুক্ত সময় হলো Early Spring ! এসময় যেকোনো ধরণের মরা ডাল বা কান্ড ও অন্নান্য জীবিত ডাল পালা যা ঝোপ ঝাড়ের মতো আকার ধারণ করেছে তা কেটে দিতে হবে ! এমন ভাবে প্রুনিং করবেন যাতে prune করা গাছটি V shape বা Vase shape ধারণ করে￰ !

লেখক: ডক্টর আব্দুল মতিন
ভ্যাঙ্কুভার, কানাডা
Email: [email protected]

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন