কবি আমিনুল ইসলাম তাঁর সাহিত্যে সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে একটি’শক্তিশালী এবং অনন্য বৈচিত্র্যের স্বতন্ত্র অবস্হান সৃষ্টি করেছেন l কবিতায় তাঁর অনুপম শব্দশৈলী ও বাক্য ব্যাঞ্জনায় পাঠককে সমৃদ্ধ করেছে বারবার l ভাষার সাবলীল বির্নিমানে আধুনিকতার আবহে তিনি পূর্ণাঙ্গ এক মানবতাবোধে পূর্ণ জীবন প্রবাহের চিত্রকল্প উপস্থাপন করেন l কবিতায় বিশ্বজনীনতা , সমাজের অসঙ্গতি , ইতিহাস বোধ সম্পর্কে টানা পোড়েন , প্রেম, বিচ্ছেদ বিভাজন হীন সমাজ সৃষ্টি ,অভিসার ,বিশ্ব রাজনীতি, নারীর অধিকার, পরবাসী জীবন,মানবাধিকার সামাজিক অবক্ষয় পরিবর্তনের অসাধারণ বিস্মৃত ও স্বতন্ত্র পরিমার্জিত প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়।

কবিতার ভাষায় তাঁর অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দ্বারা তিনি অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের পথ নির্দেশনার আলোকে এক অসাধারণ আলোকিত মেলবন্ধনের এবং ত্রিকালদর্শনের স্বরূপ উন্মোচন করেন l

বাংলা সাহিত্যে তাঁর আত্মপ্রকাশ এবং সফল যাত্রা শুরুর নেপথ্যের কাহিনী প্রসঙ্গে তিনি জানান ‘আমি প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই ছড়ার ভক্ত। রূপকথারও। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় অন্ত্যমিলযুক্ত কবিতা লেখা শুরু করি। কিন্তু আমি তখন একটা চর এলাকার কিশোর। প্রকাশের মাধ্যম থেকে বহু দূরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কবিতা আর গান লিখে ডায়েরী ভরে তুলি। কিন্তু প্রকাশ মাধ্যমের কাছে যাইনি। সেটা গতশতকের আশির দশক। অতঃপর চাকরি। চাকরিজীবনে নব্বইয়ের দশকে আবার কবিতা রেখা শুরু করি এবং এবার স্থানীয় সংবাদপত্র, লিটল ম্যাগাজিন ইত্যাদিতে লেখা পাঠাই । প্রকাশিত হতে থাকে। আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘‘তন্ত্র থেকে দূরে’ প্রকাশিত হয় ২০০২ সালে। কাব্য, প্রবন্ধগ্রন্থ, ছড়ার বই, গবেষণাগ্রন্থ ইত্যাদি মিলিয়ে ২০২৪ সাল নাগাদ প্রকাশিত বই ২৯টি। নেপথ্যে কাজ করেছিল পিতার কাছ থেকে পাওয়া কাব্যপ্রীতি এবং অচরিতার্থ প্রেম।

কবিতাকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় এবং স্বলিখিত প্রিয় কবিতা প্রসঙ্গে তাঁর মতামত দেন এভাবে ‘কবিতা কি সেই বিষয়ে নানাবিধ সংজ্ঞা আছে l কবিতা হচ্ছে নির্বাচিত শব্দের নির্বাচিত বাক্যে প্রকাশিত অনুভব-আবেগ-অভিজ্ঞান। কবিতার একটা দিক হচ্ছে আঙ্গিক বা ভাষা যার মধ্যে আছে জুতসই শব্দের জুতসই ব্যবহার, উপমা, চিত্রকল্প, উৎপ্রেক্ষা, ছন্দ ইত্যাদি । তবে মূল বিষয়টি হচ্ছে প্রাণ ও উপভোগ্যতা। প্রাণহীন শব্দের গাঁথা কোনো কবিতা নয়। আবার উপভোগ্যতা না থাকলে সেটা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

আমি এযাবৎ কয়েক শত কবিতা লিখেছি। আমার বহু কবিতাই পাঠক-সমালোচকদের কাছে সমাদর লাভ করেছে। সবচেয়ে প্রিয় কবিতাটি হয়তো এখনও লেখা হয়নি। তবে ‘‘ পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি’’ নামক নয় পর্বের দীর্ঘ কবিতাটি আমার খুব প্রিয়। তেমনি প্রিয় ‘‘ মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম’’ কবিতাটি। পাঠক হিসেবে আমি সর্বভুক এবং সর্বগামী। ‘

নিজের প্রিয় কবিদের বিষয়ে তিনি বলেন ‘রুমি, হাফিজ, খৈয়াম, চণ্ডীদাস, শেক্সপীয়ার, গালিব, মীর তকি মীর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বোদলেয়ার, র‌্যাবোঁ, কীটস, টি এস এলিয়ট, জীবনানন্দ দাশ, আল মাহমুদ, ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, শঙ্খ ঘোষ, আবুল হাসান, সাদাত হোসেন মান্টো, বেগম রোকেয়া, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, মানিক বন্দোপাধ্যায়, বনফুল, মহাশ্বেতা দেবী, হুমায়ূন আহমেদ, গৌরকিশোর ঘোষ, দীনেশচন্দ্র সেন, বুদ্ধদেব বসু, সৈয়দ আলী আহসান, অরুন্ধতী রায়, ইরফান হাবীব, রোমিলা থাপার, বিনয় ঘোষ, অন্নদাশঙ্কর রায়, শিবনারায়ণ রায়, আহমদ ছফা, অমর্ত্য সেন, ফরহাদ মজহার, যতীন সরকার, হাসনাত আবদুল হাই, আলি আকবর খান, সলিমুল্লাহখানপ্রমুখকবি-কথাসাহিত্যিক-সমালোচক-ইতিহাসবিদ-সমাজচিন্তক আমার প্রিয় পাঠ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত এবং এমন আরও নাম আছে।

সুসাহিত্য’এই বিষয়টিকে কি ভাবে তাঁর বিবেচনায় সংজ্ঞায়িত করেন আর বর্তমানে পাঠকের সংখ্যা কি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে সেই বিষয়ে প্রশ্নের প্রেক্ষিতে তাঁর মতামত দেন ‘সুসাহিত্য বলে আলাদা কোনোকিছু আছে বলে শুনিনি। তবে যে সাহিত্য মানুষের কাছে দীর্ঘদিন বা চিরকালের জন্য আবেদন ধরে রাখতে পারে এবং যা মানুষকে উজ্জ্বল মানবিকতার দিকে পরিচালিত করে, তাকে আমরা সুসাহিত্য বলতে পারি ,যেমন আরব্য উপন্যাস। যেমন ফেরদৌসীর শাহনামা , রুমির মসনবী, গালিবের গজল, খৈয়ামের রুবাইয়াৎ কিংবা রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি। নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটিও সুসাহিত্যের একটি উজ্জ্বলতম উদাহরণ । শেক্সপীয়ারের একাধিক নাটকও সুসাহিত্য বলে গণ্য হওয়ার যোগ্য। সাহিত্যের পাঠক কিছুটা কমেছে বলা হলেও কোনো জরিপ হয়েছে কি না আমার জানা নেই। বিশ্বায়ন প্রযোজিত বাধাহীন আকাশ মিডিয়া, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইন্সট্রোগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, ইত্যাদি মানুষকে দ্রুততম সময়ে আনন্দ ও তথ্য দান করছে। মানুষ অনেক বেশি ভোগবাদী ও পণ্যমনস্ক হয়ে উঠেছে। কয়েকশত পৃষ্ঠার একটি বই পড়ার ধৈর্য বা মন অনেকেরই থাকছে না। তবে এ অবস্থা কেটে যাবে এবং মানুষ আবারও বইমুখী হবে বলে আমার মনে হয়।

প্রেম ও মানবতা এই দুই বিষয়কে নিজের জীবননির্ভর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে তাঁর মতামত প্রসঙ্গে তিনি বলেন : প্রেম এবং মানবতা একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। দুটো নরনারীর শরীর-মনের মিলনই সবখানি প্রেম নয়। প্রেম আরও অনেক বড়ো ব্যাপার। প্রেম চায় আকাশের উদারতা। একজন প্রকৃত প্রেমিক অন্য কোনো নারীকে অসম্মান করতে পারে না। একজন প্রকৃত প্রেমিক অন্য কোনো মানুষকে হত্যা করতে পারে না। একজন প্রকৃত প্রেমিক বেনজামিন নেতানিয়াহুর মতো গণহত্যার নায়ক হতে পারে না। প্রেম মানে শান্তি । অপ্রেম মানে অশান্তি। আর অশান্তির উৎস হচ্ছে অমানবতা তথা যুদ্ধ, হানাহানি, লুণ্ঠন, উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, ধর্ষণ, বোমবাজি ইত্যাদি। আমি আগাগোড়া একজন প্রেমিক মানুষ। আমি এই জীবনকে ভালোবাসি, যুদ্ধবাজ-সাম্প্রদায়িক হানাদার-সাম্রাজ্যবাদী-উপনিবেশবাদী মানুষগুলো ছাড়া দুনিয়ার সকল মানুষ, প্রাণী ও প্রকৃতিকে গভীরভাবে ভালোবাসি। আমি প্রেমের ভেতর দিয়ে মহাবিশ্বকে দেখি এবং সেজন্য আমি সবচেয়ে বেশি লিখি প্রেমের কবিতা। প্রেম ও মানবতায় ভাবনায় আমি কাজী নজরুল ইসলামের অনুসারী।

কবিতা , নিবন্ধ বা গবেষণাধর্মী কাজ সব বিষয়ে সফল পদচারণার পথে কোন বিষয়গুলির দিকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি লিখতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেই বিষয়ে তিনি জানান ‘ দেখুন আমি মূলত কবি। আমার ২৯টি বইয়ের মধ্যে ২২টি কাব্যগ্রন্থ। আমার কবিতা নিয়ে প্রচুর প্রবন্ধ-নিবন্ধ-রিভিউ লেখা হয়েছে। একাধিক গ্রন্থ রচিত হয়েছে। কবিতার জন্য অনেকগুলো সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছি। আবার ‘‘নজরুল সংগীত : বাণীর বৈভব’’ নামক গবেষণাগ্রন্থটির জন্য আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, ভারতের গ্রেস কটেজ নজরুল সম্মান ইত্যাদি নামিদামি পুরস্কার পেয়েছি। আমি ছড়া লিখি । ৩টি বই আছে ছড়ার। প্রচুর প্রবন্ধ লিখেছি আর প্রবন্ধের বইও আছে। আমি সবখানেই সাবলীল তারপরও আমি মূলত কবি। কবিতা লেখাতেই আমার সবচেয়ে বেশি আনন্দ। আমার প্রতিটি লেখাই আমার ভাবনার ও ভালোবাসার ভাষারূপ। আমি প্রেমের পক্ষে, উদার মানবিকতারপক্ষে,উপনিবেশবাদ-সাম্রাজ্যবাদ-সাম্প্রদায়িকতা-শোষণ-লিঙ্গভেদ ইত্যাদি থেকে মুক্ত প্রেমময় এক পৃথিবীর পক্ষে। আমার সকল লেখার পেছনে আমার এই জীবনবোধ কাজ করে। আর বৈচিত্র্য আমার অন্যতম ভালোবাসা । আমার চেতনে-অবচেতনে ধরা পড়ে এমন কোনোকিছুই আমার লেখার বাইরে নয়।

দীর্ঘ সফল সাহিত্য জীবনের কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন আর জীবনের বিশেষ স্মরণীয় দিন অথবা কোন অভিজ্ঞতা বিশেষে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন ‘ দৃশ্যমান অথবা অদৃশ্য, চেনা অথবা অচেনা, অনুমিত অথবা অপ্রত্যাশিত প্রতিবন্ধকতা জীবনচলার পথেরই অচ্ছেদ্য অংশ। আমি মূলত রাজধানীর বাইরের মানুষ। প্রায় ৪০ বয়স পর্যন্ত রাজধানীর সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না। সাহিত্য সম্পাদক-লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকদের সঙ্গে মুখোমুখি পরিচয় ছিলো না। দেশের প্রখ্যাত কবিদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ ছিলো না। ফোনালাপ ছিলো না। পেশায় ছিলাম আমলা কিন্তু কোনো সরকারের আমলেই ক্ষমতাঘেষা ছিলাম না। সবসময় না হলেও অনেক সময় বিভিন্ন সাহিত্য সম্পাদকের কাছে উপেক্ষার শিকার হতে হয়েছে ,এখনও হই। আমি যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি, তখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। আমাদের গ্রামের বাড়ি ছিলো সীমান্ত এলাকায়। আমি নিজচোখে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, গোলাগুলি, বোমা বিস্ফোরণ, মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার, পাকবাহিনী এসব দেখেছি। বড়ো হয়ে এসব নিয়ে অনেকগুলো কবিতা লিখেছি। স্মৃতিগদ্য লিখেছি। আরও কত ব্যক্তিগত স্মরণীয় ঘটনা আছে আমার জীবনে! কত অচরিতার্থ প্রেম! নাটকীয় ঘটনায় উচ্চকিত কত পেশাগত দিন রাত!

কবি তাঁর অবসর ও পারিবারিক জীবন প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে জানান
‘আমি প্রায় ৩৫ বছর সরকারি চাকরি করে ২০২৩ সাল থেকে অবসর জীবন যাপন করছি। কিন্তু বাস্তবে কোনো অবসর নেই আমার । আমি ৫/৬ ঘণ্টা বিছানায় থাকি রাতে। বাকি সবগুলো সময় বই পড়ি, গান শুনি, লেখালেখি করি।’নিজেকে তিনি অভিহিত করেন এভাবে আমি হচ্ছি একজন Voracious reader. আমার জন্ম পদ্মা-মহানন্দা-পাগলা-পাঙ্গাশমারী নদীবিধৌত টিকলীচর নামক গ্রামে এক সাধারণ কৃষক পরিবারে। আমার আব্বা-আম্মা মারা গেছেন। জীবনসঙ্গী রোকশানা পারভীন লীনা অর্থনীতিতে এমএ, সৌন্দর্যে একজন বিউটি কুঈন। তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তিনি একজন মেধাবী ও সহযোগিতাপরায়ণ জীবনসঙ্গী, যোগ্য মা এবং উদার মনের– সুন্দর মনের মানুষ। তাকে চারপাশের সবাই ভালোবাসে। আমার মেয়ে লুবনা কুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ার — ৪১ বিসিএস এর একজন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ছেলে সজন চুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ার। সকল অর্থেই আমি একটি মেধাবী, উজ্জ্বল, উদার ও সুখী পরিবারের সদস্য।

তার প্রকাশিত গ্রন্থ প্রসঙ্গে চলমান ২০২৪ সালের আজকের দিন অবধি আমার প্রকাশিত গ্রন্থ ২৯টি। তারমধ্যে ১টি সংগীত বিষয়ক গবেষণার বই, ১টি প্রবন্ধের বই, ৩টি ছড়ার বই, অবশিষ্ট ২৪টি বই কবিতার। পাঠকগণ আমার সব ধরনের লেখাই গ্রহণ করেছেন। আমার কবিতা নিয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক নাজিয়া ফেরদৌস ‘‘আমিনুল ইসলামের কবিতা: ভিন্নধারায় সত্যানুসন্ধান ‘’ নামে একটি বই লিখেছেন ২০১৯ সালে। ‘‘ দৃষ্টি ‘’, ‘‘ পাতাদের সংসার ‘’, “ অদ্রি’’ , “ পুনশ্চ’’ প্রভৃতি লিটল ম্যাগাজিন আমার সৃষ্টিকর্ম নিয়ে বিশেষ সংখ্যা/ ক্রোড়পত্র করেছে, বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট কবি-সমালোচকগণ প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন এবং তাদের সংখ্যা একশোর কাছাকাছি। বাচিকশিল্পীরা আমার কবিতা আবৃত্তি করেছেন।

সাহিত্য জীবনের তাঁর সফল পদচারণার কি কি স্বীকৃতিএসেছে তিনি জানান ‘‘বগুড়া লেখকচক্র পুরস্কার ২০১০’’ , কবিকুঞ্জ পদক ২০২১’’, “ দাগ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮’’, ‘‘ এবং মানুষ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭’’, ‘‘ পূর্ব পশ্চিম সাহিত্য পুরস্কার ২০২১’’, “ আইএফআইসি সাহিত্য পুরস্কার ২০২১’’, “ বিন্দু বিসর্গ পদক ২০২৩’’, ‘‘ গ্রেস কটেজ নজরুল সম্মান ২০২৩’’, ‘‘ কাহ্নপা সাহিত্য পদক ২০২৪’’ ইত্যাদি পেয়েছি আমার সৃজনশীল-মননশীল উভয় ধরনের কাজের জন্য। তাঁকে নিয়ে রচিত গ্রন্থ আমিনুল ইসলামের কবিতা : ভিন্ন ধারায় সত্যানুসন্ধান’ নাজিয়া ফেরদৌসসহকারী অধ্যাপক
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
২. সমবায় আঙিনায় সৃজনশীলতার আলো : একজন আমিনুল ইসলাম’
সম্পাদনায়: হরিদাস ঠাকুর lলিটল ম্যাগাজিন গুলি হচ্ছে
১. রবু শেঠ সম্পাদিত ‘পুনশ্চ’ ( বিশেষ ক্রোড়পত্র) ২০০৮
২. অচিন্ত্য চয়ন সম্পাদিত ‘অদ্রি( বিশেষ ক্রোড়পত্র) ২০১০
৩. হারুন পাশা সম্পাদিত : পাতাদের সংসার: আমিনুল ইসলাম সংখ্যা: ২০১৮;৪. বীরেন মুখার্জী সম্পাদিত ‘দৃষ্টি; আমিনুল ্সিলাম সংখ্যা ২০১৯। উল্লেখ্য কবি আমিনুল ইসলামের সাহিত্য সৃষ্টিকর্ম নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের এবং বাংলাদেশর শতাধিককবি-গবেষক-অধ্যাপক প্রবন্ধ-নিবন্ধ-আলোচনা লিখেছেন এবং উভয় দেশেই প্রকাশিত হয়েছে l

দুই বাংলার সমকালীন বাংলা সাহিত্যের বিকাশ ও চর্চার বিষয়ে প্রসঙ্গে তিনি মতামত দেন ‘ দুই বাংলা ছিলো ১৯৪৭ সালের মধ্য আগস্ট অবধি। অতঃপর ভিন্ন কিছু। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র । পশ্চিমবঙ্গ বিশাল ভারতের একটি রাজ্য। উভয় ভূগোলে প্রধান ভাষা বাংলা। উভয় ভূগোলের ‍ুসংস্কৃতির মধ্যে মিল আছে, তেমনি স্বাতন্ত্র্যও আছে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং হুমায়ূন আহমেদ বাংলাভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় দুজন কথাসাহিত্যিক। কিন্তু দুজনের সাহিত্যে উপস্থাপিত জীবন, ধর্ম, রাজনীতি, শিক্ষা, পরিবেশ, চরিত্র, কথপোকথন, সামগ্রিক ভাষা ইত্যাদির মধ্যে যতখানি মিল আছে, বৈসাদৃশ্য বা স্বাতন্ত্র্য কিন্তু কম নেই। সমকালেও এই সাদৃশ্য ও ব্যবধান রয়ে গেছে যুগপৎভাবেই এবং যথাযথ কারণেই। শামসুর রাহমানের জনপ্রিয় কবিতাগুলোর একটা বড়ো অংশই পশ্চিমবঙ্গের পাঠকদের কাছে আবেদনহীন, প্রসঙ্গবহির্ভূত। কারণ সেসব কেবলই আজকের বাংলাদেশ নামক পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের মানুষের জীবন-সংগ্রাম-সংস্কৃতির কাব্যরূপ।

বর্তমান সমাজের নুতন প্রজন্ম পাঠ বিমুখ কিনা সেই বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান ‘ দুনিয়ার মানুষ এখনও পুরোপুরি পাঠবিমুখ হয়ে যায়নি। এখনও প্রতিবছর লাখ লাখ বই প্রকাশিত হচ্ছে। প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যাও বাড়ছে। তবে নতুন প্রজন্ম বই পাঠে সেভাবে এগিয়ে আসছে না, একথাও সত্য। ইন্টারনেট, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সট্রোগ্রাম, নগদ ভোগবাদ, মূল্যবোধের ব্যাপক পরিবর্তন, পণ্যসংস্কৃতির আগ্রাসন এর জন্য দায়ী। এখন বিশ্বায়নের যুগ। কোনো রাষ্ট্র এককভাবে বা বিচ্ছিন্নভাবে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবে না । নতুন প্রজন্ম কি ধরনের পড়তে চায় এটা জানা দরকার। প্রকাশক-লেখক-পরিবেশকদের সম্মিলিতভাবে পাঠক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মিডিয়ার সহায়তা নিয়ে ব্যাপক ও ধারাবাহিক প্রচার চালাতে হবে।

সুসাহিত্য বা ভালো বই’এবং অনুবাদ সাহিত্যের সম্পর্কে তিনি বলেন ‘আমি আগেই বলেছি। অনুবাদই তো সব। কবিতা, উপন্যাস, গল্প, গান , নাটক, চিঠি এই সবই তো আসলে মানুষের মনের অনুবাদ। অনুবাদের মাধ্যমেই তো আরব্য উপন্যাস সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিলো এবং ফিকশনের নজিরবিহীন এক নতুন পৃথিবী তৈরী করেছিলো । অনুবাদ ছাড়া রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেতেন না । অনুবাদের কারণেই ফারসি ভাষার কবি রুমি, হাফিজ, খৈয়াম সারা পৃথিবীতে আজও রাজত্ব করছেন। ল্যাটিন আমেরিকার সাহিত্য আজ অনুবাদের পথ ধরেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে অনুবাদের অভাবে কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, আল মাহমুদ, হুমায়ূন আহমেদ প্রমুখ বিশ্বমানের লেখক বাংলাভাষী অঞ্চলের বাইরে আজও অচেনা। অন্য ভাষার সাহিত্যকর্ম বাংলা ভাষায় অনূদিত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাভষার বিশেষত বাংলাদেশের সাহিত্যকর্ম অনুবাদের অভাবে ক্ষুদ্র খোয়াড়ে বন্দী হয়ে পড়ে আছে। বাংলা সাহিত্যকে অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে তুলে ধরা সবচেয়ে বড়ো প্রয়োজন আজ। অনুবাদের অভাবে একটি বিশ্বমানের সমৃদ্ধ সাহিত্যভাণ্ডার এভাবে অপঠিত, অমূল্যায়িত থাকা বিশ্বমানবসম্প্রদায়ের জন্য লোকসানজনক ব্যাপার।

কবি আমিনুল ইসলাম তার চিন্তার স্বাতন্ত্রময় আলোকিত করবেন আমাদের সাহিত্য ভান্ডার ও পাঠককে আরো দীর্ঘ সময়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ“জেন-জি”: এ জার্নি ফ্রম এক্স টু জেড- পর্ব ৭
পরবর্তী নিবন্ধফারজানা নাজ শম্পা
ফারজানা নাজ শম্পা
কানাডার বৃটিশ কলোম্বিয়ায় স্বপরিবারে বসবাসরত ফারজানা নাজ শম্পা একজন লেখক , সংবাদ প্রতিনিধি ও অনুবাদক l নব্বই এর দশক হতে লেখালিখির সাথে সম্পৃক্ত ফারজানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক প্রশাসন বিষয়ে মাস্টার্স ও নরওয়ের বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয় নোরাড ফেলোশীপ নিয়ে 'জেন্ডার উন্নয়ন ‘বিষয়ে এম ফিল সমাপ্ত করেন ।কর্মসূত্রে তিনি বাংলাদেশের 'দি ডেইলি ইনডিপেন্ডেন্ট ' এ সাংবাদিক ও ফিচার লেখক হিসেবে ও পরবর্তী তে নেদারল্যান্ডসের একটি গবেষনা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পুস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের " উইমেন ও জেন্ডার স্টাডিজ" বিভাগের একটি প্রজেক্ট অফিসিয়ালের দায়িত্বে কিছুদিন কর্মরত ছিলেন l যুগান্তর , কানাডার জনপ্রিয় পরবাসী ব্লগ , ঢাকা প্রকাশ , ভারতের র কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় নিয়মিত ভাবে তার লেখা প্রকাশিত হচ্ছে । ফারজানা টরেন্টোর কানাডিয়ান বাংলাদেশি নিউজ সি বি এন ২৪ এর সাথে একজন উপদেষ্টা সংবাদ প্রতিনিধি ও নিয়মিত লেখক হিসেবে সংযুক্ত আছেন । ফারজানা বর্তমানে উত্তর আমেরিকা প্রথম আলোর কানাডার আটলান্টিক সংবাদ প্রতিনিধি হিসেবে সম্পৃক্ত আছেন l তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি কানাডার সাহিত্যের সাথে বাংলা সাহিত্য ও সংষ্কৃতির মেলবন্ধন স্থাপন করে দুটি দেশের লেখক ও পাঠক সমাজে ভাষাগত পরিচয় ও সাংষ্কৃতিক ভাব বিনিময়ের সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপনের প্রত্যয় নিয়ে তিনি বর্তমানে কানাডার মূল ধারার কয়েকজন লেখকদের বিশেষ সম্মতিক্রমে তাঁদের সাহিত্য কর্ম অনুবাদের প্রয়াস নিয়েছেন l সম্প্রতি কানাডার জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক ব্রুস মাযারের নির্বাচিত কবিতার সমন্বয়ে বাংলা দেশের আরো প্রকাশনী হতে তার প্রথম ভাবানুবাদ গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে ,যা ২০২২ সালের অমর একুশের বই মেলায় যথেষ্ট পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে l কানাডার সাহিত্য ইতিহাসের পাশাপাশি তিনি বাংলাদশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ,যুদ্ধশিশু ও মহিয়সী বীরাঙ্গনা নারীর জীবন, আত্মত্যাগ ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর লেখা ও গবেষণার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করেছেন l তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছয়টি , একটি বই এর নুতন সংস্করণ জার্মানির একটি প্রকাশনা হতে প্রাকাশিত হয়েছে l

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন