গণভবনের সামনে একটি মাঝ বয়সী বৃদ্ধকে ব্যাকুল হয়ে কাকুতিমিনতি করে কিছু একটা বলতে দেখা যাচ্ছে। বৃদ্ধটির মাথায় কাঁচাপাকা চুল, ময়লা পাঞ্জাবির উপর মুজিবকোট চাপানো, হাতে তাঁর ছেলের একটি ছবি। তিনি বলছেন, ‘ভাই আপনার ঘরেও তো ছেলে মেয়ে আছে, আছে না বলেন? এই আমি ত্রিশ বছর ধরে বগুড়া শহরে আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত ছিলাম। স্বৈরাচারী এরশাদকে হটিয়েছি। আমার ছেলে কে পুলিশেরা কোথায় যেন ধরে আটকে রেখেছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে একটু দেখা করতে চাই। আমাকে প্লিজ ঢুকতে দিন। ঠিক এমন সময়ে হুইসিল বেজে উঠলো। সাঁ সাঁ শব্দ করে করে করে বিশেষ সাজে সজ্জিত দুটি পুলিশের ভ্যান এসে থেমে সেই বৃদ্ধকে টেনে হিঁচড়ে সরিয়ে প্রধান মন্ত্রীর বাসভবনের পথকে জঞ্জাল মুক্ত করতে দেখা যাচ্ছে। এদিকে জটলা দেখে প্রধান মন্ত্রী গাড়ির কাঁচ নামিয়ে দুজন কনস্টেবল কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কে উনি ? কি চায় ? সাথে সাথে ওঁরা বললো, ‘ম্যাডাম ওনার ছেলে কে আন্দোলনকারীদের মিছিল থেকে ধরে নিয়ে গেছে, তাই ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্যে আপনার সাথে দেখা করতে চায়। মুহূর্তের মধ্যে প্রধান মন্ত্রী রেগে যেয়ে গাড়ির কাঁচ উঠাতে উঠাতে বললেন, ‘রাজাকারের বাচ্চা’।

‘রাজাকার’ শব্দটি বাংলাদেশে বহুল প্রচারিত একটি ঘৃণিত শব্দ। বিশেষকরে এবারের ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ে এবং ৫ আগষ্টের পরবর্তী সময়ে এই শব্দটি মানুষের মুখে মুখে ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হতে শোনা যাচ্ছে। আমি কৌতুহূল হয়ে বাংলায় ‘রাজাকার’ শব্দটি লিখে গুগুল সার্চ দিয়ে দেখলাম, উইকিপিডিয়ায় লিখেছে “রাজাকার (رضا کار) হলো একটি আরবি শব্দ যার শাব্দিক অর্থ হল সেচ্ছাসেবী। এটি একটি ধার করা শব্দ হিসেবে উর্দু ভাষায় এসেছে। বাংলাদেশে, রাজাকার একটি অপমানজনক শব্দ, যার অর্থ বিশ্বাসঘাতক বা প্রতারক। সেই অর্থে যে শাসনকর্তাকে জনগণ বিশ্বাস করে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো, সেই সরকার নির্বাচন নিয়ে প্রহসনের খেলা খেলেছে, ক্ষমতায় থেকে দেশের সম্পদ লুটেপুটে খেয়ে বিদেশে সম্পদ পাচার করেছে, তাদের কে কি রাজাকার বলা যায় না ??

সেদিন ফটকের সামনে প্রধান মন্ত্রী যদি আরও বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করতেন তবে হয়তো শুনতে পারতেন সেই মাঝবয়সী হিন্দু ধর্মাবলম্বী বৃদ্ধ টি তারই পার্টির একজন একনিষ্ঠ কর্মী। বৃদ্ধ নগেন বাবু তার জীবনের অধিকাংশ সময়ে আওয়ামী লীগ নামে অতি প্রাচীন একটি রাজনৈতিক দলের পেছনে ব্যয় করেছেন, অথচ পার্টি থেকে তেমন সুবিধা কখনো নেননি। আজ তিনি তার একমাত্র ছেলে কে পুলিশ থেকে ছাড়িয়ে নিতে তাঁর নেত্রীর কাছে ছুঁটে এসেছেন। বৃদ্ধটির মনে ক্ষীণ একটি আশা ছিল হয়তোবা পরিবার পরিজন হারা প্রধান মন্ত্রী সন্তানহারা বাবার ব্যাদনা বুঝতে পারবেন। জগতের নিয়ম খুব অদ্ভুত। এই জগতের কিছু মানুষ নিজেদের জীবনে ঘটে যাওয়া অন্যায় অত্যাচার সমূহ কে সহজেই ভুলে যেয়ে একই অন্যয় অত্যাচার অন্যদের উপর চাপিয়ে একধরণের বিকারগ্রস্ত মানসিকতার পরিচয় দিতে দেখা যায় । সম্ভবত সেই কারণেই, ১৫ আগস্ট ট্রাজেডি থেকে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সন্তান শোকে কাতর নগেন বাবুকে পাত্তা না দিয়ে পতাকাবাহী গাড়িতে করে বীর দর্পে গণভবনে প্রবেশ করলেন।

রাত প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে। সতীশের বেশ ক্ষুধা লেগেছে, কিন্তু বন্ধু নগেনের জন্য অপেক্ষা করছে। বন্ধু এলে তবে এক সাথে রাতের খাবার খাওয়ার পরিকল্পনা। ক্ষুধা কে সাময়িকভাবে কাবু করার ক্ষেত্রে চা সিগারেটের জুড়ি নেই। চাএর কথা মনে হতেই সতীশ তাঁর বড়ো মেয়ে শ্যামলী কে ডাক দিলেন, ‘ বড়ো মা কই গেলি এক কাপ চা নিয়ে আয় তো রে মা।’ বড় মেয়ের কোন পাত্তা পাওয়া গেলি না। ঠিক একই ভঙ্গিতে তিনি ছোট মেয়েকেও ডাক দিয়ে চা এর কথা বললেন। কোন ফল হল না। কেউ তাঁর ডাকে সাড়া দিল না। সহসাই সতীশ বাবুর মনে হল, সে খামাকাই মেয়েদের ডাকছিল। মেয়েদুটি তো তার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে। বন্ধুর ছেলে পরিমল কে বাসা থেকে বের করে দেয়ার পর থেকে সতিশ বাবুর বাসায় নতুন করে অশান্তি শুরু হয়েছে। তাঁর দুই মেয়ে শ্যামলী ও অর্চনা তার সাথে কথাবলা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। স্ত্রী প্রভা রানীও বেশ বেজাড়। প্রভা রানী মনে মনে পরিমল কে বড় মেয়ের জামাই হিসেবে ভেবে রেখেছিলেন। এই সোনার টুকরো ছেলেটিকে তাঁর বেকুব স্বামীর বোকামিতে হাতছাড়া হওয়ার পথে। ছেলেটিকে কোথাও কেউ খুজে পাচ্ছে না।

প্রভা রানী পিরিচে একটি টোস্ট বিস্কিট ও এক কাপ লেবু চা নিয়ে স্বামীর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘আপনি আর আপনার বন্ধু তো এক সাথেই বাসা থেকে বের হলেন, আপনি ফিরলেন উনি ফিরলেন না ?’ সতীশ স্ত্রীর হাত থেকে কাপ পিরিচ নামিয়ে গম্ভীর ভাবে চায়ে বিস্কুট চুবিয়ে খেতে খেতে বললেন, ‘ বের হলাম তো একসাথেই, কিন্তু দুপুরের দিকে ও বললো তুই বাড়ি যা, আমি প্রধান মন্ত্রীর সাথে দেখা করবো। ছেলে ছেলে করে বেচারা পাগল হয়ে যাচ্ছে ।’ প্রভা রানী একটু সাহস করে বললেন, ‘ আপনিই তো আপনার বন্ধু কে পাগল বানিয়েছেন ছেলেটা কে সেদিন ওভাবে বের করে না দিলে এতো কিছুই হতো না। কথাবার্তার এই পর্যায়ে দরজার কলিংবেলের শব্দে অর্চনা হুড়মুড় করে যেয়ে দরজা খুলতেই দেখতে পেলো ‘নগেন কাকা মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

রাতে খাবার টেবিলে খেতে খেতে নিস্তব্দতা ভেঙে নগেন মেয়ে দুটির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘বুজলি মা, আমি গেলাম গণভবনে, আমি এতো করে সিকিউরিটি গার্ডদের বোঝালাম শুধু এক মিনিট শেখ হাসিনার সাথে দেখা করবো, আমার কথা শুনলোই না।’ পাশে বসা সতীশ বাবু বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর খেয়ে দিয়ে কাজ নেই মফস্সল শহরের এক পাতি নেতার সাথে দেখা করবে।’ নগেন খাওয়া থামিয়ে বললেন, ‘তা হলে কি আমার ছেলে কে ফিরে পাবো না ? ওকে কি ওঁরা গুম করে ফেলেছে ? মারা গেলেও তো ডেড বডি টা একবার দেখতে পাবো ? আমি ওর মা কে কি জবাব দিবো !! বলেই নগেন বাম হাতে মুখ চেপে ধরে হুহু করে বাচ্চা ছেলের মতো কেঁদে ফেললেন। শ্যামলী ও অর্চনা দুই বোন উঠে যেয়ে নগেন বাবুর দুই পাশে দাঁড়িয়ে কাকার পিঠে হাত বুলিয়ে শান্তনা দিতে থাকলো। শ্যমলী ইদানিং বাবাকে মোটেই তোয়াক্কা করে না। শ্যামলী বাবাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো, ‘কাকা, চিন্তা করেন না, এই সরকার আর বেশিদিন নেই। সরকারের পতনের পর পরিমলদা কে ঠিকই পেয়ে যাবেন। মেয়ের মুখে সরকার পতনের এই আগাম ভবিষৎবাণী শুনে সতীশ বাবু মনোক্ষুন্ন হয়ে প্লেটের খাবার রেখে উঠে পড়লেন।

সতীশ বাবু খাওয়া ছেড়ে উঠে গেলেও এদিকে সারা দেশে সরকারের বিপক্ষে একেবারে ফুঁসে উঠেছে। আর ওদিকে ক্ষমতালোভী সরকারও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ক্রমশ হিংস্র থেকে হিংস্রতর হয়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন অবরোধের জন্য ইতিমধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রসমন্বয়কেরা ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছেন। মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি প্রথমে ৬ আগস্ট ঘোষণা করা হলেও ব্যাপক জনসমর্থনের কারণে সমন্বয়কেরা সেই ঘোষণাটিকে পরিবর্তন করে ৫ আগস্ট তারিখে এগিয়ে আনেন। আমি রাজ্যার উৎকণ্ঠা নিয়ে ইন্টারনেটে দেশের খবর পড়ে ছটফট করছি। নিজের ফেসবুকে পোষ্ট দিয়েছে, ‘এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন অনিবার্য্য, শুধু সময়ের ব্যাপার।

৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সারা দেশের বিভিন্ন জেলা শহরগুলোর মতো বগুড়া শহরেও আরো কিছু লাশ পড়লো। শহরের নবাববাড়ি ডায়াবেটিস হাসপাতালের সামনে পাকা রাস্তায় সরকারি শান্তি রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় তৃতীয় বাহিনীর ছোড়া গুলি, ককটেল ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কমর উদ্দিন বাঙ্গী নামে এক ব্যক্তি গুরুতর জখম হয়ে পড়েন । পরে , ছাত্র-জনতা তাকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার চেষ্টা করলেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কমর উদ্দিন মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন । একই দিনে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথার কাছেই স্টেশন রোডে আইএফআইসি ব্যাংকের সামনে শিবগঞ্জ উপজেলার পালিকান্দার সেকেন্দার আলীর ছেলে সেলিম হোসেন কেও একই কায়দায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতেজখম হতে দেখা যায়। সেলিম হোসেন ঘটনাস্হলেই মারা যান। এছাড়া ওই দিন কাঁঠালতলা থেকে বড়গোলা পর্যন্ত রাস্তায় সরকারি শান্তি রক্ষাকারীবাহিনী ও তাদের ছত্রছায়ায় দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আব্দুল মান্নান নামিক ব্যক্তি জখম হলে ছাত্র-জনতা তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিনিও অত্যধিক রক্তক্ষরণে মৃত্যুর মুখে পতিত হন । আগস্ট ৪ তারিখে বগুড়ায় আরো দুটি মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। শহরের ২ নম্বর রেল গুমটির উত্তরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে থেকে ঝাউতলায় রিপন ফকির এবং গাবতলীর গোড়দহ উত্তরপাড়ার মৃত মুসা সরদারের ছেলে জিল্লুর রহমান নামে আরেক ব্যক্তি কে জখম করা হয়। পরে, দুজনকেই মুমূর্ষু অবস্থায় রিকশা-ভ্যানযোগে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে দুজনই মারা যান। এভাবে সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলনে বগুড়ায় একই দিনে পাঁচটি লাশ পড়ার ঘটনা বগুড়াবাসী আগে প্রত্যক্ষ করেননি।

আগস্ট ৪ তারিখে বগুড়ার এই পাঁচটি লাশের খবর আমি পেয়েছি নভেম্বর মাসে। বাংলা নিউজ নেট ওয়ার্ক নামে একটি অনলাইন ভিত্তিক পত্রিকার মারফতে এটি জেনেছি। খবরে এই পাঁচটি মৃত্যুর কথা জানিয়ে বলা হয়েছে এই পাঁচটি মৃত্যুর ব্যাপারে বগুড়ায় পৃথকভাবে পাঁচটি মামলা দেয়ার করা হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৫৬৭ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১ হাজার ৬৫০ জন। এসব মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাড়াহুড়া করে ময়না তদন্ত ছাড়া দাফনকৃত ওই লাশগুলোকে কবর থেকে আবার উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করে যথাযোগ্য মর্যদায় লাশ দাফন করার জন্যে আদালত নির্দেশ দেন। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এরকম সহস্রাধিক লাশের খবর পাওয়া যায়। এসব লাশের মধ্যে যেমন ছাত্রজনতার লাশ রয়েছে তেমনি রয়েছে পুলিশবাহিনীর অনেক সদস্যদের। খবরের পাওয়া যায় শুধুমাত্র আগস্ট ৪ তারিখেই সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে
সহিংসতায় অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে গুলিতে ৩ জন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে থানায় অগ্নি সংযোগ করে ‘গণপিটুনিতে’ ১৩ জন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনা সরকারকে আতংকিত করে।

আগষ্টের ৪ তারিখের রাতে টরেন্টোতে আমার এক বন্ধুর বাসায় রাতে দাওয়াতে এসেছি। যে বন্ধু দাওয়াত দিয়েছেন তাঁর কড়া নির্দেশ আমরা যেন রাজনীতি নিয়ে হট্টগোল করে দাওয়াতের পরিবেশ নষ্ট না করি। আমাদের সাথে দাওয়াতে নানান মতের অতিথিগণ এসেছেন। টেবিলভর্তি নানান সুস্বাদু খাবারদাবার। তবুও সে সমস্ত খাবার আমাদের কাউকেও তেমন একটা টানছে না। আমরা সবাই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ফিসফিস করে আগামী কালের লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি নিয়ে জল্পনা কল্পনা করছি। কেউ বলছেন সরকারের কাছে এসব টুটুকো ফুটকো আন্দোলন ট্যাকেল করা কোনো ব্যাপারই না। এসব নিয়ে টেনশন করার কোনো মানেই হয় না। যারা এসব বলছেন আমি অতীতে এনাদের মধ্যে অনেক দেশ প্রেমের নজির দেখেছি। কানাডার হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় রাত বারোটায় এনারা শহীদ মিনারে যেয়ে ভাষা শহীদদের নিয়ে গভীর মমতায় গান গেয়েছেন, বেদিতে ফুল দিয়েছেন। ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসম্বরের বাংলা পাড়ায় অনুষ্ঠানে রাজাকার আলবদরদের গুষ্টি নিপাত করে শহীদদের স্বরণে লম্বা বক্তৃতা দিয়েছেন। অথচ এই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শত শত শহীদ ছাত্রজনতার লাশের প্রতি এনাদের আজকের এসব মমতাহীন মন্তব্য আমাকে ও আমাদের কয়েকজনকে বিমর্ষ করে তুললো।

সেরাতে দাওয়াত থেকে বাসায় ফিরে গভীর উৎকণ্ঠা নিয়ে অনেক রাত অবধি জেগে থেকে বিছানায় এপাশ করলাম। কিছুতেই ঘুম আসছে না । অবশেষে ঘুম যখন এলো ততক্ষনে ঘড়ির কাটা আগস্ট মাসের ৫ তারিখ কে স্পর্শ করেছে । সেই বিখ্যাত ৫ আগস্ট অর্থাৎ ৩৬ শে জুলাই!!

পূর্ববর্তী নিবন্ধহালচাল : বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোতে অপরাধের হার সবচেয়ে বেশি ।
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন