( দুই)

বৃষ্টি থেমে গিয়েছে অনেকক্ষণ। আকাশে একটুও মেঘ নেই। ঝড়ের গতিবেগ স্থিতিশীল প্রায়। ঝুরু ঝুরু শীতল বাতাস বইছে। গর্তের ব্যাঙগুলি গ্যাঙর গ্যাঙর করে ডাকছে। কতগুলি বাইরে বেরিয়ে থপ্ থপ্ করে লাফাচ্ছে। ঝাঁড়-জঙ্গলে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। নিকটস্থ কোনো প্রতিবেশীর পালতু কুকুর অনবরত ঘেউ ঘেউ করছে। মনে হচ্ছে যেন পাড়ায় ডাকাত পড়েছে। তাড়া করছে কাউকে। ততক্ষণে ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল মহুয়ার। ঠান্ডায় হাত-পা কুঁকড়িয়ে শুয়েছিল। হঠাৎ দেওয়ালের বিশাল ঘড়িটার ঢং ঢং শব্দে চোখ মেলে মাথা তুলে দ্যাখে, ন’টা বাজে। নেশা খোরের মতো টলতে টলতে শিথিল ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ায়। হাত বাড়িয়ে কম্বলটা কোনরকমে টেনে নিয়ে গায়ে জড়িয়ে পা-দুটো টান টান করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু কখন যে চোখে তন্দ্রা লেগে গিয়েছিল, খেয়ালই করেনি। হঠাৎ নড়ে ওঠে সদর দরজার কড়া। সে একেবারে কানে তালা লেগে যাবার উপক্রম। তবু কর্ণগোচর হয় না মহুয়ার। অঘোরে ঘুমোচ্ছে। কিন্তু অনবরত দরজার কড়া নড়তে থাকলে হঠাৎ স্বপ্ন দেখার মতো লাফ দিয়ে ওঠে। বুক ধড়্ফড়্ করে ওঠে। মুহূর্তের জন্য স্বপ্ন না বাস্তব, ঠাহর করতে পাচ্ছিল না। কিছুক্ষণ শুনলো কান পেতে। -নাঃ, এ তো স্বপ্ন নয়। সত্যিই দরজার কড়া নড়ছে।
ভাবল, মালতি এসেছে। কাজের মেয়ে। ওঠার প্রয়োজন নেই। সঙ্গে চাবি আছে, পিছনের দরজা খুলে নিজেই ঢুকে পড়বে। এইভেবে বিছানা ছেড়ে উঠে আসার কোনো তাগিদবোধই করলো না। লম্বা একটা হাই তুলে বলল,-‘এই দুর্যোগের মধ্যে আজই তোর আসার সময় হলো মালতি! একেবারে ঝড়-তুফান মাথায় নিয়ে। কাল সকালে এলেই তো পারতি।’

মনে মনে অনুমান করছিল, হাজারটা কৈফেয়ৎ দিতে দিতে এক্ষুণি ঘরে ঢুকবে মালতি। কিন্তু কোথায় মালতি, কোনো সাড়া শব্দ নেই ওর। ওদিকে দরজার কড়া নড়া বন্ধ হয়ে শুরু হয় খস্ খস্ শব্দ। একেই বিরাট দালান বাড়ি। চারদিক অন্ধকার। গাছ-গাছলায় ভর্তি। কেউ এসে গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকলে বোঝার সাধ্য নেই। মহুয়া দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত হয়, নাঃ, মালতি নয়! এলে এতক্ষণ চুপ করে থাকতো না। কিন্তু খস্ খস ্শব্দটা কিসের? কোনো চোর গুন্ডা নয় তো! সর্বণাশ! একেই লোডসেডিং। চারিদিকে অন্ধকার। জানালা খুলে দেখবে, সে সাহসেও কুলোচ্ছে না। ভাবতেই ভয়-ভীতিতে আড়ষ্ঠ হয়ে যায়। র্থ র্থ করে গা কেঁপে উঠছে। কিন্তু কেউ যে বাড়ির সীমানায় ঢুকে পড়েছে, সেটা দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত হয়। আবার পরক্ষণেই ভাবে, না, পাড়ার কুকুর, বিড়াল হবে হয়তো! তবু মনের সন্দেহ যায় না। শুকনো একটা ঢোক গিলে ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল,-‘কে, কে ওখানে?’
বলতে বলতে পরনের কাপড়টা কোনরকমে গায়ে জড়িয়ে দ্রুত জানালার দিকে এগিয়ে যায়। জানালার কাপাট খুলে উঁকি দিয়ে দেখবার চেষ্টা করে। কিন্তু অন্ধকারে কাউকে দেখতে পেলো না। ইতিমধ্যে খস্ খস শব্দটা বন্ধ হয়ে গেল। ভাবল, জয়ন্ত এসেছে। এসব ওরই কান্ড। মহুয়াকে একলা পেয়ে ভয় দেখাচ্ছে। কখন কি মতিগতি ওর, বোঝা ভার। যতসব দুষ্টু বুদ্ধিগুলি সবসময় ওর মাথায় খ্যালে। দাঁড়াও, তোমায় দেখাচ্ছি মজা। এইভেবে একটা শক্ত কাঠের ডান্ডা নেয় হাতে। জয়ন্তকে আজ কষে লাগাবে এক ঘা। অনেকক্ষণ ধরে জ্বালাতন করছে। কিন্তু দরজার ওপ্রান্তে কার যে আবির্ভাব, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি মহুয়া। ছিটকিনি টেনে দরজাটা খোলা মাত্রই হাতের ডান্ডাটা ছিটকে পড়ে মাটিতে। আর তক্ষুণিই ধপ্ করে জ্বলে ওঠে বিজলীবাতি।

বিস্ময়ে একেবারে থ্ হয়ে যায় মহুয়া। অভিভূতের মতো পলকহীন নেত্রে হাঁ করে চেয়ে থাকে। বিশ্বাসই হয়না নিজের চোখদু’টোকে।-জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে না তো! না কি মনের ভ্রম! অবিশ্বাস্য হলেও এ যে নিতান্তই বাস্তব। মাত্র একহাত দূরত্বের ব্যবধানে এ্যাটাচি হাতে নিয়ে জিজ্ঞাস্য দৃষ্টিতে সশরীরে দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে নিখিলেশ চ্যাটার্জী, ওরফে নিলু। মাসতুতো দিদি শুভ্রার দেবর। শুভ্রাদির বিয়েতেই প্রথম দেখা হয়েছিল ওর সাথে।

প্রায় বছর ছয়েক আগের কথা। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দলবেঁধে শুভ্রাদির বাসররাতে কি কান্ডটাই না করেছিল নিখিলেশ। সুরভীত রজনীগন্ধায় সুসজ্জিত চন্দন পালঙ্কে শায়িত নব বিবাহিত দম্পতীর মধুর প্রেমালাপ আড়ি পেতে শুনতে শুনতে হঠাৎ বন্ধ দরজাটা বেকায়দায় খুলে গিয়ে একঝাঁক যুবক-যুবতী হুমড়ি খেয়ে মেঝেতে পড়ে গিয়ে সে কি কান্ড। মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল যেন, বড় একটা বিস্ফোরণ ঘটে গেল। ওদিকে যুগলবন্দী নব দম্পতীর তখন বেহাল অবস্থা। যা ক্ষণপূর্বেও কেউ কল্পনা করতে পারেনি। ভাগ্যিস মশারিটা টাঙ্গানো ছিল। সুস্পষ্টভাবে কিছুই দেখা যায়নি। কিন্তু আচমকা অনাকাক্সিক্ষত বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় বর-কনে দুজনেই এ্যম্বেরেসিং ফিল করে। দিশাহীন হয়ে পড়ে। চোখেমুখে শর্ষে ফুল দেখছিল তখন। তন্মধ্যে হঠাৎ হাস্যোধ্বনিতে লজ্জায় মুখ লুকোবার জায়গা পায় না। এসব শুনে ওর জ্যাঠতুতো বৌদিরা সবাই হাসতে হাসতে মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছিল। লজ্জা আর অপরাধবোধে শুভ্রাদিকে ক’দিন মুখই দেখাতে পারেনি নিখিলেশ। সেই তখন কয়েক পলকের দেখা। তার কিছুদিন পর উচ্চশিক্ষার্থে নিখিলেশ পাড়ি জমায় ইংল্যান্ডে। আর দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। যোগাযোগও হয়নি। সেই আভিজাত্যেভরা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হ্যান্ডসাম্ মার্জিত চেহারা নিখিলেশের। লম্বা সুঠাম দেহী। উজ্জ্বল গৌরবর্ণের সুন্দর সুদর্শণ এবং প্রসন্ন মেজাজের একজন সুপুরুষ। যার প্রথম দর্শণে যে কোনো মেয়েই চুম্বকের মতো আকর্ষিত হবে। প্রেমে পড়ে যাবে। মহুয়াও যে পড়েনি তা নয়, অবশ্যই পড়েছিল। তখন ওর যৌবনের প্রথম প্রহর। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে পর্দাপণ করেছে মাত্র। উপছে পড়া যৌবনের ঢেউএ প্লাবিত হচ্ছিল ওর সারাশরীর। বাবা-মায়ের একমাত্র তনয়া। কত আদরের, তাদের চোখের মণী। যার অন্ত ছিল না স্বাধীনতার। ছিল না কোনো দায়বদ্ধতা। চিন্তাহীন, বন্ধনহীন মুক্ত জীবন। উরু উরু মন। ঠেকায় সাধ্য কার। ভিতরে ভিতরে সবার অলক্ষ্যে নিখিলেশের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল। অথচ ভালোবাসা নামে চির সত্য ও পবিত্র শব্দটা মুখ ফুটে উচ্চারণ করতে লজ্জা হলেও অভাব ছিল সাহসের। পারেনি ওর মনের একান্ত ইচ্ছাটা ব্যক্ত করতে, নিখিলেশকে জানাতে। আর পারেনি বলেই মহুয়ার একান্ত ভালোবাসার ফুলটি নিঃশব্দে ঝরে গিয়েছিল ওর হৃদয় থেকে। অপসারিত করে ফেলেছিল মন থেকে। ভুলে গিয়েছিল সেদিন, যেদিন স্কলারশীপ্ নিয়ে নিখিলেশ ডাক্তারি পড়তে পারি দিয়েছিল ওর স্বপ্নের দেশ, ইংল্যান্ড। বুঝেছিল, নিখিলেশ ওর নাগালের বাইরে। ওকে কোনদিনও ধরা ছোঁয়া যাবে না। বিদেশী মেয়েদের সাথে পড়াশোনা করবে, মেলামেশা করবে, সেখান থেকেই বেছে নেবে ওর জীবন সঙ্গিনী।

আজ এতকাল পর অপ্রত্যাশিত হঠাৎ নিখিলেশের আগমনে অপ্রস্তুত মহুয়া স্তম্ভিত হয়ে যায় বিস্ময়ে। রুব্ধ হয়ে যায় ওর কণ্ঠস্বর। লজ্জায় দিশা হারিয়ে ফ্যালে। কি বলবে, ভাষা খুঁজে পায়না। কি করবে, দিশা খুঁজে পায়না। অথচ কি আশ্চর্য্য, দীর্ঘদিনের ব্যবধানে নিখিলেশ এতটুকু বদলায় নি, পরিবর্তনও হয়নি। সেই অকৃত্রিম হাসি, সেই মাসুম চোখের চাউনি। এতক্ষণ সহাস্যে উৎসুক্য হয়ে অপেক্ষা করেছিল মহুয়ার সাদর অভ্যর্থনার জন্যে। কিন্তু মহুয়ার আপাদমস্তক লক্ষ্য করে অস্বস্তিবোধ করে মনে মনে। ক্ষণপূর্বে যে অকপট সারল্য দেখা গিয়েছিল, সদ্য তরতাজা হাসির সঙ্গে সঙ্গে সেটাও মিলিয়ে গেল। মনে মনে বলে,-সামথিং ইস্ রং। চেহারা, বেশভূষার এ অবস্থা কেন মহুয়ার? এ কি হাল করে রেখেছে? হয়েছে কি ওর? ঘরের ভিতর থেকে হু হু করে বের হচ্ছে ঠান্ডা হাওয়া। সারাঘরে উড়ছে পারফিউমের গন্ধ। সাজ-সজ্জার বালাই নেই। কেশ-বিন্যাশ এলোমেলো। পড়নের কাপড়টাও শরীরে একরকম জড়ানো। চোখদুটোও অস্বাভাবিক লাগছে।
ইতিপূর্বে কানে তালা লাগিয়ে রেকর্ড-প্লেয়ারটা হঠাৎ বিকট একটা শব্দ করে থেমে গেল। নিখিলেশ কেঁপে ওঠে। ভ্যারী ইন্টারেষ্টিং! হোয়াটস্ রং উইথ হার? কিন্তু মহুয়া অমন হাঁ করে চেয়ে আছে কেন? ও’কি আমায় চিনতে পারছে না!
ক্ষণিকের বিভ্রান্তিতে বড্ড ইতস্ততবোধ করে নিখিলেশ। দ্বিধা-দ্বন্দের টানাপোড়ণে মুহূর্তের জন্য বিপাকে পড়ে গিয়েছিল। অবলীলায় ভদ্রতার সৌজন্যে মৃদু হেসে বলল-‘এক্সকিউজ্ মী ম্যাম, মিস্ ব্যানার্জী, আই মিন….!’

তক্ষুণি ঠোঁটের কোণে হাসির ঝিলিক দিয়ে ওঠে মহুয়ার। ওর চোখেমুখেও অপার বিস্ময়। যেন অনেকক্ষণ অন্ধকারে ডুবে ছিল। এতক্ষণে কিনারা খুঁজে পেলো। নিখিলেশের কথা শেষ না হতেই একগাল মুক্তাঝরা হাসি ছড়িয়ে বলে,-‘আ-আপনি নীলুদা না, মানে নিখিলেশ বাবু না? লন্ডন থেকে কবে ফিরলেন?’

এতক্ষণ পর লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে নিখিলেশ। অস্ফূট হেসে বলল,-‘ভাগ্যিস চিনতে পেরেছেন, নইলে এক্ষুণিই দিচ্ছিলেন বিপদে ফেলে।’

-‘কিন্তু আপনি এভাবে, বিনা নোটিশে! এতকাল পর কোথা থেকে আসছেন?’

মুখের হাসিটা মুহূর্তে মিলিয়ে গেল নিখিলেশের। খানিকটা বিস্ময় নিয়ে বলল,-‘সে কি! বৌদি কিছু বলে নি?’

-‘কই, না তো। গতকাল এতক্ষণ কথা হলো, আপনি আসছেন, সেকথা একবারও তো বলল না শুভ্রাদি!’

-‘কিন্তু আপনার কাছে নোটিশ ছাড়া আসা যাবে না, তা তো জানতাম না!’

নিখিলেশের ঠোঁটের কোণে চোরা হাসির ঝিলিকটা নজর এড়ায় না মহুয়ার। হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বলল,-‘আপনারা দেবর বৌদির মধ্যে কখন কি কথা হয়, তা আমি জানবো কিকরে বলুন!’

-‘দেখলেন তো, যোগাযোগ না থাকলে এই অবস্থাই হয়!’

আশ্চর্য্য! ভাবতেই অবাক লাগছে মহুয়ার। কথাবার্তায় এতটুকু জড়তা নেই নিখিলেশের। যেন কতদিনের চেনা, পরিচয়, কত ঘনিষ্ঠতা। অথচ তেমনভাবে কখনো আলাপচারিতাই হয়নি ওর সাথে। মনেই হচ্ছে না নিখিলেশ একজন বিলেত ফেরৎ ডাক্তার। চাইল্ড্ স্পেশালিষ্ট। এখনও সেই স্বতঃস্ফূর্তির প্রলেপ মাখা ওর চোখেমুখে।

হঠাৎ নিরবতা ভঙ্গ করে নিখিলেশ বলল,-‘দরজা থেকেই বিদায় দেবেন না কি! ভিতরে আসতে বলবেন না! এসে বোধহয় ডিষ্টার্ব করলাম, তাই না!’

চকিতে থতমত খেয়ে গেল মহুয়া। ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল,-‘না, না, তা হবে কেন! বরং এসে ভালোই করেছেন। ভীষণ বোর ফিল করছিলাম। বাড়িতে আজ কেউ নেই। আমি একা।’

-‘সে কি! মাশিমা-মোশোমশাই বাড়িতে নেই! কোথায় গেছেন?’ বলে থমকে দাঁড়ায় নিখিলেশ।

পিছন ফিরে মহুয়া বলল,-‘ওমা, দ্যাখো কান্ড! আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আসুন, আসুন। ভিতরে আসুন!’

সলজ্জে নিখিলেশ বলল,-‘বৌদিরা পার্টিতে যাবে বলল, ভাবলাম এই অবসরে ঘুরেই আসি, তাই চলে এলাম।
আর তা’ছাড়া সম্পর্ক তো একটা আছেই। আফটার অল্ দাদার শ্যালিকা বলে কথা।’

হেসে ফেলল মহুয়া। -‘তাই বুঝি! দেখে তো চিনতেই পারছিলেন না। অবশ্য না পারারই কথা।’

নিখিলেশ ভাবল, সাড়ে ন’টা বাজে এখন। মহুয়া একা বাড়িতে। এতরাতে ওর সাথে আড্ডা দেওয়াটা মোটেই শোভনীয় নয়। শুনলে মাশিমা-মেশোমশাই নিশ্চয়ই অসন্তুষ্ট হবেন, নিন্দে করবেন। তারচে’ বরং ফিরে যাওয়াই বেটার। কিন্তু যাই বললে কি আর যাওয়া যায়। পড়েছে মহুয়ার পাল্লায়, রেহাই নেই। সহজে ছাড়বার পাত্রী সে নয়।
হলোও ঠিক তাই। ভ্রু-যুগল উত্তোলন করে মহুয়া বলল,-‘ও কি, আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন? এতো কি ভাবছেন বলুন তো? ভিতরে ঢুকতে ভয় হচ্ছে বুঝি!’
ফিক্ করে হেসে বলল,-‘মশাই, এখানে বাঘ ভাল্লুক নেই যে আপনাকে খেয়ে ফেলবে। আপনি না একজন পুরুষ মানুষ। এতো ভয় কিসের? আরে আসুন আসুন, ভিতরে আসুন।’

মৃদু হাসল নিখিলেশ।-‘কি যে বলেন না, তা হবে কেন! একচুয়েলি, লং জানিং করে এসেছি তো! টায়আর্ড ফিল করছি। দেখা তো হয়েই গেল! তাই বলছিলাম, আজ যাই মিস্ ব্যানার্জী। আরেকদিন আসবো।’

মুখখানা ব্যাঁকা করে মহুয়া বলল,-‘হুঁমঃ, যাই বললেই হলো! ঘরের দুয়োরে এসে ফিরে যাবেন, তা হবে না।’

ঝট্ করে নিখিলেশের হাত থেকে এ্যাটাচিটা টেনে নিয়ে বলে,-‘জায়াগার অভাব? এখানেও রেষ্ট নেওয়া যাবে। মামনি বাড়ি থাকলে এতক্ষণে গল্প করতে বসে যেতেন। জিজ্ঞ্যেস করতেন, ইংল্যান্ড্ দেশটা কেমন! ওখানকার মানুষজন কেমন! খাবার দাবার কেমন! আপনি এসে ফিরে গেছেন শুনলে ভীষণ রাগ করবেন। শুভ্রাদিকে এক্ষুণিই ফোন করে ম্যাসেজ্ রেখে দিচ্ছি, আপনার ফিরতে দেরি হবে।’
কিছুক্ষণ থেমে বলে,-‘বাব্বা, সন্ধ্যে থেকে কি ঝড়-বৃষ্টিই না বয়ে গেল। ভাবলাম, আজ আকাশটাই বুঝি ফুটো হয়ে গেল। যাক্, ভালোই হয়েছে আপনি এসেছেন। বাইরে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। এবার গরমাগরম একটু চা হলে কেমন হয় বলুন তো! সাথে মুখরোচক কিছু….! ওয়েট এ মিনিট। আমি এক্ষুণি আসছি। বলে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল অন্দর মহলের দিকে।’

মনে মনে ভীষণ রাগ হলো নিখিলেশের। কিছু বলবার সুযোগই পেলো না। এসেছিল বাহানা করে মহুয়ার সাথে দেখা করতে। কিন্তু বাড়িতে যে কেউ থাকবে না, তা কে জানতো! অগত্যা, অনিচ্ছা সত্ত্বেও মহুয়াকে অনুসরণ করে নিখিলেশও অন্দর মহলের দিকে এগিয়ে গেল।

(চলবে)

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন