সারা পৃথিবী যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছিল ঠিক তখনি প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা স্তব্ধ এবং রুদ্ধ করে দিলো সেই গতি। কি মহা দুর্যোগের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা, সারা পৃথিবীর মানুষ। কি এক অসীম অনিশ্চয়তা আর অসহায়ত্বের মধ্যে কাটছে মানব জাতির প্রতিটি মুহূর্ত ! ২০১৯ সালের শেষে চীনের উহান প্রদেশে এই ভাইরাস ধরা পড়ে। অদ্যাবধি (মার্চ ২১) পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বে ১৮৬টি দেশে ২,৮৪,৫২৫ জন আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে মোট ১১,৮৪২ জন। ইতালিতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে- ৪০৩২ জন মারা গেছে দেশটিতে। চায়নাতে মারা গেছে ৩,২৫৫ জন, ইরানে মারা গেছে ১৫৫৬ জন, স্পেনে ১,৩২৬ জন, ফ্রান্সে ৪৫০ জন, আমেরিকাতে ২৭৬ জন, ইংল্যান্ডে ১৭৭ জন, কানাডাতে ২ জন , বাংলাদেশে ২ জন সহ বিভিন্ন দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
এখনো পর্যন্ত এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের কোনো মহৌষধ আবিষ্কৃত হয় নি। কেবল মাত্র এন্টার্টিকা ছাড়া এশিয়া, ইউরোপ, নর্থ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আমেরিকা, আফ্রিকা সহ সকল মহাদেশেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। ইতোমধ্যেই ইতালি, আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা সহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ লক ডাউন করে দিয়েছে। আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা , ফ্রাঞ্চ, জার্মানি সহ বিশ্বের সকল পরাক্রমশালী দেশ গুলো তাদের দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে। প্রত্যেককে নিজ নিজ বাস স্থানে সোশ্যাল আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়েছে, স্কুল, কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয় , মিল, কল কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট, চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, ব্যাঙ্ক, বীমা,সব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কেবলমাত্র হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, লং টার্ম কেয়ার, শেল্টার খোলা আছে এবং এসব জায়গা থেকে জরুরি স্বাস্থ সেবা প্রদানের অক্লান্ত চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা সবখানে একসাথে প্রার্থনা বন্ধ রাখা হয়েছে- এই রোগের সংক্রমন ঠেকানোর জন্যে।
এমন একটি ক্রান্তি লগ্নে আমরা সবাই মানুষ, স্রষ্টার সর্ব শ্রেষ্ঠ জীব এটিই আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচয়। আমরা কে কোন দেশের, সাদা না কালো, দেশী না প্রবাসী, উন্নত না অনুন্নত দেশে থাকি, হিন্দু না বৌদ্ধ না খ্রিস্টান নাকি ধর্মহীন সব পরিচয়ই তুচ্ছ এবং গৌণ। বাতাস,পানি যেমন ভাগ করা যায় না, আমাদেরও তেমন ভাগ করা যাবে না। আমরা সবাই মানুষ, আমাদের সবার রক্ত লাল, আমরা সবাই এক বিশ্ব, এক পৃথিবীতে থাকি। আমরা সবাই, একে অপরকে সাহায্য করবো, যার যার জায়গা থেকে নিজের, পরিবারের, কাজের, সমাজের, দেশের এবং বিশ্বের একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করবো, নিজে আইসলাসনে থাকবো, পরিবারকে রাখবো, যার যার দেশের আইন মেনে চলবো, সুসাস্থের সকল নিয়ম মানব, সরকারকে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বাত্মক সাহায্য করবো, যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই কিনবো, যাদের প্রয়োজন তাঁদেরকে সর্বোচ্চ সাহায্য করবো তবেই না আমরা মানুষ। পশু পক্ষী সহজেই পশুপাখি, তরুলতা সহজেই তরুলতা, কিন্তু মানুষ অনেক চেষ্টায় তবেই না মানুষ। মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে, সুন্দর এই পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবনে সৃষ্টিকর্তা আমাদের যে পরীক্ষায় ফেলেছেন, তাতে আমরা মানবজাতি অচিরেই জয়ী হবো, এটি আমরা বিশ্বাস করবো। । এক দেশ আর এক দেশকে , এক জাতি আর এক জাতিকে দোষারোপ করার সময় এটি নয় – এটি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলার সময় ।
ছবিটি করোনা ভাইরাস চলাকালীন কানাডার একটি ছবি।
ছোঁয়াচে , প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কোনো চিকিৎসা নেই – এই ধারণাকে পাল্টে দিচ্ছে জাপান, কিউবা, চীন, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র সহ কয়েকটি দেশ। কিউবা, চীন এবং জাপান বাজারে প্রচলিত কিছু ঔষধ এবং ইঞ্জেকশন দিয়ে করোনা রোগের চিকিৎসা চালাচ্ছে। চীন এই রোগ সফলতার সাথে মোকাবিলা করতে পেরেছে। গতকাল এবং আজকে পর্যন্ত দেশটিতে কোনো নতুন করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা যায় নি। চীন এই রোগ মোকাবেলায় তিরিশটি ওষুধের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকার মধ্যে কিউবার ইন্ফেরোর আলফা টু-বি-ইনজেকশন, জাপানের ইনফ্লুয়েঞ্জার ট্যাবলেট ফভিপিরবির এই রোগ নিরাময় করতে সক্ষম হচ্ছে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা এস.এন. জি ০০১ ইনহেলার জাতীয় একটি ওষুধ দিয়ে আগামী সপ্তাহ থেকে চিকিৎসা শুরু করবে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেছে। থেমে নেই পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা, অক্লান্ত পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছে করোনার কার্যকরী ভ্যাকসিন তৈরির। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ সফল হবে অচিরেই – সৃষ্টিকর্তা পথ দেখাবেন খুব শিগগির। আসুন আমরা বিশ্বাস করি, সবার উপরে মানুষ উপরে নাই। মেঘ দেখে কেউ করিস না ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে।
–
মাহমুদা নাসরিন , আরসিআইসি & কমিশনার অফ ওৎস, শিক্ষক এবং সমাজকর্মী। , ক্যানবাংলা ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস, [email protected], টরেন্টো, কানাডা