আমাদের প্রোফেশনে non-judgmental জিনিষটা খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় এবং ক্লায়েন্টদের সার্ভ করার সময় আমাদেরকে একটা invisible চশমা পরতে হয়, যে চশমা দিয়ে শুধু মানুষকে দেখা যায়, মানুষ ছাড়া তার কৃষ্টি, ধর্ম, বর্ণ, কৃষ্টি , রীতি , বিশ্বাস, চাল, চলন কিছু দেখা যায় না। এই অদৃশ্য চশমাটি পরার কারণ এই যে আমরা যেনো আমাদের নিজেস্ব অবস্থান-এর কারণে আমাদের দায়িত্বে biased না হয়ে যাই এবং আমি যাকে সার্ভ করছি তার চাল চলন, পোশাক আশাক, ধর্ম বর্ণ যাই হোক না কেন সে আমার কাছ থেকে বেস্ট সার্ভিস আশা করে এবং সেটা আমার পেশাগত এবং নৈতিক দায়িত্ব। আমি মনে করি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও এটা অত্যান্ত গুরুত্ব রাখে।
আমাদেরকে প্রথমে মানুষ হতে হবে তার পর আসবে ধর্ম, কর্ম , বর্ণ , কৃষ্টি, কালচার ইত্যাদি। আমার মনে হয় না পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম বা বিশ্বাস আছে যেখানে মানসূহের মতো মানুষ না হয়েও একজন ভালো ধার্মিক হওয়া যায় । শিয়াল কুকুরের মনুষত্ব দরকার নেই কারণ তারা সকালে যে কুকুরের সাথে চলছে বিকালে তাকে কামড় দিয়ে তার খাবার কেড়ে খসছে, কিন্তু মানুষ হয়ে তো আমরা সেটা করতে পারি না। মতের, বিশ্বাসের বা চাল চলনের মিল না থাকলেই যে একজন মানুষ আর একজন মানুষের শত্রূ হবে এবং তাকে কুকুরের মতো কামড়ে দিতে হবে বা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এটা ঠিক না এবং তাই যদি হয় তাহলে আমরা তো উপরুল্লেখিত চশমাবিহীন কুকুরসম। আমরা তো এখন সেই আদিম, পুরাতন পাথর, বা নতুন পাথর-এর যুগে নেই , আমরা তো সভ্য জগতে বাস করছি (যদিও বলতে লজ্জা হস্ছে) .যাহোক সভ্য জগৎ হলেও সেখানে অপরাধ বা অবিচার থাকবে কারণ সভ্য হলেও আমরা ইউটোপিয়াতে বসবাস করছি না কিন্তু সেই অপরাধ বা অপকর্মের জন্য তো আমরা যথাযত প্রতিষ্ঠান তৈরী করেছি যেখানে উপযুক্ত ব্যক্তির অপরাধ অনুযায়ী সাজা হবে এবং তা দেখে অন্যদেরও শিক্ষা হবে, কিন্তু আমরা যদি সেই প্ৰতিষ্ঠানকে তোয়াক্কা না করে বা যে প্রকৃত দোষী তাকে না ধরে তারই গোষ্ঠীর নিরীহ কাউকে শিয়াল কুকুরের মতো আক্রমণ করি তাহলে আমাদেরকে দুই হাত দু পা আর একটি মাথাওলা মানুষ আকৃতির কুকুর ছাড়া কি বলতে পারি।
আমরা অনেক আগে এই অবস্থার থেকে উঠে এসেছিলাম এবং আমাদের চোখে তো মনুষত্ত্বের চশমাটি ছিলো কিন্তু কেন আবার এই পুশুবৃত্তি আমাদের মাঝে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো? আমাদের অতি মাত্রায় ম্যাটেরিয়ালিস্ট জীবনের দিকে ঝুকে যাওয়া একটি কারণ হতে পারে, তবে সাথে সাথে অদক্ষ, নৈতিকতাহীন , ক্ষমতালোভী, ভন্ড, চাটুকার রাষ্ট্রযন্ত্রের অবেবস্থার কারণও একটি বড়ো বিষয়। আমি রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা যখন বলছি তখন রাষ্ট্রের তথাকথিত গণতন্ত্রে অশগ্রহণকারী সকল দলকেই বোঝাসছি যদিও ক্ষমতাসীনদের উপর দায়িত্ব বেশি বর্তায়। রাষ্ট্রের বাইরে আমাদের সমাজের গ্রাস -রুট পর্যায়েও প্রতিটি পরিবার এবং প্রতিটি মানুষের এ বিষয়ে কর্তব্য আছে, আর আমরা সেই কর্তবকে যদি অবহেলা করে সব কিছুই আমার পছন্দের দল বা রাষ্ট্রের উপর ছেড়ে দিয়ে থাকি তাহলে ওই পুশুবৃত্তি একদি আমাকেই গ্রাস করবে।
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সবাই তো একটি পরিচয়েই লড়েছে, সেটি হলো বাংলাদেশী তবে এখন কেন সেই পরিচয় ধরে রাখতে বা সেই পরিচয়কে সম্মান করতে পারছিনা , What a shame!
আমি যেমন একজন কানাডিয়ান এবং একজন বাংলাদেশী ঠিক তেমনি একজন গর্বিত মুসলমান এবং আমি দল মত, ধর্ম -বিশ্বাস সব মিলেমিশে থাকতে বিশ্বাস করি এবং আমি মনে করি এটি আমার পবিত্র ধর্মও সাপোর্ট করে, যেমন পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে, “Come! Let us gather together our sons and your sons, our women and your women, ourselves and yourselves: then let us earnestly pray and invoke the displeasure of God on those who are deceitful!” (Qur’an 3:61) (দুঃখিত হাতের কাছে পবিত্র কোরানের বাংলা অনুবাদ নেই). বাংলাদেশে আমার যেমন নিরাপদে থাকার অধিকার আছে ঠিক তেমনিই বাংলাদেশের আনাচে কানাচে দল মত নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের নিরাপদে থাকার অধিকার আছে, আর সেটা বিগ্ন হলে দেশে যতই বড়ো বড়ো দালান, নিত্য নতুন শপিং মল, ফ্লাইওভার অথবা ডিজিটাল হোক না কেন দেশকে নিয়ে গর্ব করার মতো কিছু থাকবে না। এই কথা গুলি সমস্ত দেশের জন্যই কার্যকর। আমরা যারা কানাডাতে আছি তাঁদেরও এ বেপারে সতর্ক থাকতে হবে , এগিয়ে আসতে হবে একে ওপরের প্রয়জনে। মনে আছে বছর খানেক আগের কথা, Peterborough শহরে একটি মসজিদে দুষ্কৃতিকারীরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলো, এর পর ওখানকার চার্চগুলি তাদের দরজা মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য খুলে দিয়েছিলো মসজিদ পুনর্নির্মাণ না হয়ে পর্যন্ত, শুধু তাই না মসজিদের পুনর্নির্মাণ কাজের খরচ ধরা হয়েছিল ৮০,০০০ ডলার কিন্তু মাত্র দুই দিনেই এর থেকে অনেক বেশি টাকা উঠে যাওয়ায় মানুষকে দান দিতে নিষেধ করে দেওয়া হয়, এবং এই দান শুঘূ মুছলমানরাই করেনি, সমস্ত কমুনিটির লোকেরা করেছে যাদের অনেকেই আবার নাম না জানিয়ে দান করেছেন। মসজিদটির পুনর্নির্মাণের পরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো সেখানে গিয়ে সবার সাথে টোটাল কমিউনিটির এই অসাধারণ সৌহার্দের উদাহরণটি উদযাপন করেছেন। আসুন আমরা সবাই ওই কমিউনিটির লোকদের মতো শপথ নেই যাতে করে নিরাপরাধ মানুষের উপর অত্যাচার না করে বরং বিপদের সময়ে তাদের পাশে এসে দাড়াই এবং বিপদ যাতে না আসে সে বেপারে সতর্ক থাকি।
জোর করে বা পিটিয়ে যেমন কারো মন পাওয়া যায় না তেমন জোর করে কারোর কোনো বিষয়ে আগ্রহও আনা যায় না, প্রয়জন আপনার kindness, compassion, friendly এবং humanly ব্যবহার। আসুন আমরা সবাই সেই চেষ্টা করি। নিরপরাধ মানুষকে নির্যাতন করা শুধু অমানুষেরই কাজ না, বরং যারা এই কাজ গুলি করে এবং করতে মদত দেয় তাদেরকে পশুদের সাথে তুলনা করাটাও পশুদেরকে অবমাননা করা। আসুন আমরা সবাই খুলে যাওয়া বা ভেঙে যাওয়া মনুষত্বের চশমাটা আবার পরে নেই এবং প্রতিটি মানুষকে মানুষের মর্যাদা দেই এবং নিজেকে একজন মানুষের মতো মানুষ হিসাবে গড়ে তুলি। আর একটি কথা, সকলকে মনে রাখতে হবে যে এই পশুবৃত্তি কাজ শুধুমাত্র গুটিকতক লোকে করছে, অধিকংশই ভালো মানুষ আছে তাই আমরা যেন এই গুটি কয়েকের সাথে সারা দেশের বা সারা গোষ্ঠীর মানসুহাকে জড়িয়ে না ফেলি তাহলে আমরা এই গুটি কয়েকের সাথে একা একা লড়তে পারবো না।
লেখাটিতে আমার একান্ত নিজের মনের প্রতিফলন ঘটিয়েছি, কারোর যদি বিন্দুমাত্র খারাপ লেগে থেকে আমি সে জন্য দুঃখিত। আমি ছোট বেলা থেকে বাপ্ দাদা, আশ পাশ, পড়াশুনা এবং সমাজ থেকে যা শিখেছি তাতে করে চলমান অবস্থায় অত্তান্ত পীড়িত এবং এই ব্যাপারে আমার মনের ভাব প্রকাশ করাটাকে আমি আমার দায়িত্ব মনে করেছি।
কষ্ট করে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ !
মুকুল