ভাবিয়াছিলাম সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্য মানুষের মন্তব্য ও মতামতকে গুরুত্ব দিয়া আপন মস্তকের অবশিষ্ট চারিটি কেশ আর টানিয়া ছিড়িব না। তন্মধ্যে বিগত অনেকগুলি দিবস-রজনী যে কোনও গ্রুপ হইতে শুরু করিয়া বেশিরভাগ গনমাধ্যমিক বন্ধুদের আনফলো সাপেক্ষে বিশ্বজ্ঞান সম্পর্কে অনব্যহত থাকিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছিলাম।নিজের সম্পর্কে গুজব ছড়াইয়া অনাবশ্যক দীর্ঘ্য নাসিকা সম্পন্ন এলাকার আন্টিদের রসালো আড্ডার বিষয় বনিয়া যার পর নাই আনন্দে দিনাতিপাত করিতেছিলাম।অষ্টাদশ শতাব্দীতে পুনরায় ফিরিয়া যাইবার সুপ্ত আকাঙ্খা যবে সত্য হইতে পারে বলিয়া ঠাহর করিতে শুরু করিলাম তথাপি দিগম্বর-চক্ষে দেখিতে না পাওয়া এক অতিক্ষুদ্র শত্রু আসিয়া আমার জীবনের সকল সাধে নর্দমার জল ঢালিয়া দিল।
যদ্যপি নিজগৃহে লোটা-তস্করের ন্যায় বন্দি হইয়া গেলাম তদ্যপি এই গনমাধ্যম ব্যাতীত নিজের এই বিশালাকৃতির মস্তক অন্যত্র সিধাইতে অক্ষম হইলাম।আর বহুদিন পরে চেহারা সংক্রান্ত এই বইয়ে প্রবেশ করিবামাত্রই সমসাময়িক মানবকুলের চিন্তাধারা দেখিয়া করোনা অর্জনের লক্ষ্যে সুদূর চীনে যাইবার তরে হিয়া কাঁদিয়া উঠিল।
প্রথমত, নয়নাভিরাম এ দুনিয়ায় অতিরিক্ত কিছু সময় যদি কামাইয়া লইতে পারি তবে ক্ষতি কি আছে? এর বদৌলতে যদি কিছুদিন আপন বাসস্থানে কিছুকাল অবস্থান করিতে পারি তবে এর চাইতে আহ্লাদের বিষয় আর নাই। চর্মচক্ষে সারাজীবন দেখিয়াছি, সকলে কতই না কষ্ট করিয়া একটি সংসার সংরক্ষন এবং পরিচালনা করেন। বাড়ী কিনেন, আসবাবপত্র কিনেন, বিবাহ করেন এবং সংসার পাতেন। এই সুযোগে বহুকষ্টের ফসল এই সংসার না হয় একটু উপভোগ করিয়া লইলাম।
দ্বিতীয়ত, কিছু জনৈক পরম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি মন্তব্য করিয়াছেন নারীজাতির জইন্য গৃহ অবস্থান অতি সহজ। যাহারা আমার মত অষ্টাদশ শতাব্দীর জীবনযাত্রায় দিনাতিপাত করিতে চান, তাহাদের প্রতি কোনও ক্ষোভ নাই। তবে যাহারা বর্তমান সময়ের প্রথম বিশ্বের সকল প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করিতেছেন, মোটরযান হাঁকাইয়া, স্মার্টফোনে যোগাযোগ করিয়া, গনমাধ্যম কাঁপাইয়া দৈনন্দিন জীবন যাপন করিতেছেন তাহাদের মুখে কি এই বুলি মানায়? নারী জাতির (আমি ব্যাতীত) প্রতি বিরুপ ধারনা এবং কটাক্ষ করিবার পূর্বে একটিবার ভাবিয়া দেখিবেন,আপনার জীবনে তাহার অবদান কতখানি অনস্বীকার্য।আর যখন কটু মন্তব্য করিবেন নারীদিগের সম্পর্কে এবং কেহ সেই মন্তব্যের প্রতিবাদ করিলে তস্করের মতন বলিবেন না- ”রসিকতা করিয়াছি মাত্র”।বলিলে এ ধরনের যুক্তি আপনার নিজের বহু যত্নে গড়া ব্যাক্তিত্বে আঘাত হানিবে। কিছু বিদ্বান ব্যাক্তি স্ত্রীলোকদিগকে উপদেশ (?) দিয়াছেন বাড়িতে গোল রচনা না করিতে,যাহাতে পুরুষগন কিছুকাল ঘরে টিকিতে পারেন। যে পুরুষকে নিজগৃহে টিকাইতে হইলে তাহাকে বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাবের মত করিয়া আপ্যায়ন করিতে হইবে এবং তাহার আশেপাশে পা টিপিয়া, হাসি লুকাইয়া, তাহার দোষ না ধরিয়া, হুজুর হুজুর করিয়া থাকিতে হইবে, সেই পুরুষের আপন অর্ধাঙ্গিনিকে না ধরিয়া বাহির হইয়া করোনা নামক বান্ধবীকে জড়াইয়া ধরা উচিত।
তৃতীয়ত, পরবর্তী প্রজন্মের সুস্থ বিনোদনের বিষয়টিকে মনে হইতেছে একেবারেই এড়াইয়া যাইতেছি। তবে এ এক পুরাতন ব্যাধি। আমরা হইলাম সেই জাতি যাহারা বাচ্চাদিগের আনন্দের জন্য টিম হর্টনে লইয়া যাইয়া নিজ বন্ধুদের সহিত সামাজিক ও বাংলাদেশের রাজনীতি লইয়া কফির কাপে ঝড় তুলি।উইকএন্ডের পার্টিতে শরীর কুটকুট করা ফ্যাশনেবল জামা পড়াইয়া এককোনে চুপচাপ বসিয়া থাকিতে উপদেশ দিয়া বাংলা সংস্কৃতির প্রেম শিক্ষা দিই। আর কোনও বাচ্চা অতিরিক্ত প্রশ্ন করিলে ধমক দিয়া বসাইয়া রাখি। উপরন্তু থিয়েটারে কোনও হিন্দি ছি:নেমা আসিলে তো কথাই নাই- বাচ্চা কাচ্চা বাক্স-প্যাটরা, বিস্কুট- চানাচুর লইয়া সপরিবারে দেখিতে চলিয়া যাই। এইটা চিন্তা করিবারও অবসর লই না যে ছি:নেমার বিষয়বস্তু কোমলমতি শিশুদের জইন্য উপযুক্ত কি না। তাই জোরহস্তে অনুরোধ করিতেছি এই সময়টা শিশুর বয়স অনুযায়ী এমন কর্মে নিবেদিত হউন যাহা শিশুটি আসলেই উপভোগ করিবে।
প্রতিদিনের এই গৃহবন্দি পরিস্থিতি ধীরে ধীরে মস্তিস্কের কীটসমূহে নতুন প্রাণের সন্চারণ ঘটাইতেছে তাই এই “হাবিজাবি” লিখিয়া নিজেকে একটুখানি শান্ত করিতেছি। আমার ধারনা গুরুচণ্ডালী দোষে দুষ্ট এই পোষ্টখানি কেহই পাঠ করিবার চেষ্টা করিবেন না। যদিবা কেহ পাঠ করিয়া থাকেন তো চিরকৃতজ্ঞ থাকিব। সেইসাথে আশা করিব যেন এই মনের কথায় যত ভুলচুক ও দ্বিমত রহিয়াছে তাহা নিজগুনে ক্ষমা করিবেন।এছাড়াও যত মানব মানবীর জীবনে কষ্ট পৌছাইয়াছি সকলের নিকটই আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
জগতের সকল প্রাণী সুস্থ ও সুখী জীবন যাপন করুক।আমীন।