টরন্টোর এই হ্নদয় বিদারক ঘটনার কারন কি? অনেকের মতো আমারও কৌতূহল ছিল। আমাদের জানা দরকার, কথা বলা দরকার৷ কাউকেই খুব সহ যে জাজ করার যে চর্চা এটা বাদ দিতেই হবে যদি আমি নিজেকে শিক্ষিত আর সভ্য মনে করি। আর হতে হবে অপরের প্রতি সহানুভূশীল।
মিনহাজের স্বীকারোক্তি পুলিশের কাছে। সে তিন বছর আগে কেমিক্যাল ইইঞ্জিনিয়ারিং পড়া থেকে ড্রপ আউট হয়েছে। মা বাবা তা জানেন না। সারাদিন ল্যাপ্টপে বসে থাকে প্রচুর গেম খেলে। আর তিন বছরের মধ্যে বাবা মা জানতেই পারেনি তাদের ছেলে আর পড়াশুনায় নাই। সে এবার গ্রাজুয়েশন করছে সেটাও খুব সাজিয়ে বলেছে। পরিবারের সবাই কনভোকেশনে যাবে সে ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই সপ্তাহে তার কনভোকেশন। যেহেতু সে পুরাটাই মিথ্যা গল্প সাজিয়েছে, পরিবারের কাছে এই লজ্জা থেকে বাচার জন্য এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
ঘটনাস্থানঃ টরোন্টোতে বাংলাদেশী একই পরিবারের ৪ জনের লাশ পাওয়া গেছে গত রবিবার ২৮ শে জুলাই । এর মধ্যে আছেন বাবা,মা,বোন ও নানী। জীবিত একমাত্র ছেলে মিনহাজ (২৩) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ে। সবাই বলছে একটা হ্যাপি ফ্যামিলি এরা। ছেলেও খুব শান্ত,ভদ্র, মুখ তুলে কথা বলে না। সেই ছেলে সবাইকে চেতনা নাশক ওষুধ খাইয়ে একজন একজন করে জবাই করেছে। আবার নিজেই জানিয়েছে বন্ধুকে মন্ট্রিয়েলে। সে নির্বিকার ভাবে গেম খেলছিল। বন্ধু টরোন্টো পুলিশকে ফোন করেছে মন্ট্রিয়েল থেকে।
সন্তান লালন পালন করা কোন ফর্মূলা দিয়ে যে হবে বলা যায় না। এ যুগের ছেলে মেয়েরা যা চায় বাবা মা তা এনে হাজির করে, দেশে আরোও বেশী করে। কারণ ছেলেমেয়ের সংখ্যা কম, ঘুষের টাকা ওয়ালারা ইনকাম যা করে সব ছেলেমেয়ের জন্য। স্বার্থপর করে বড় করছে। এরা শেখায় না তোমার সব কিছু থাকতেও আরো চাই কেন? না কিছু মানবিকতা শিক্ষা দেয়! কিন্তু আমরা নিজেরাও জানি না দানব কি আমরা নিজেরাই বানিয়ে ফেলেছি কিনা নিজের ঘরেই।
সারাদিন বাসায় থেকেও বাবা মায়ের যদি সন্তানকে নিয়ে বসার বা কথা বলার সুযোগ না থাকে শুধু একদিন দূরে কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেলাম আর তাকে স্বাধীনতা দিলাম একা ঘুরতে তবে ফ্যামিলি বন্ডিং কি আসলে তৈরী হয়! আবার বাবা মা দুজনেই চাকুরী করে সুন্দর কোয়ালিটি টাইম কাটায় সন্তানদের সাথে।
আর সংসারের আসল যে দুজন এই বাবা মায়ের সম্পর্ক যদি মাস্টার আর ছাত্রের তা হলে তাহলে সন্তানদের ভিতর এক ধরনের ক্রোধের জন্ম নেয়। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক সন্তানদের কোথায় নিয়ে যেতে পারে ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। লোকদেখানো সামাজিকতা থাকে সেখানে কোন বন্ধন থাকে না। সব দোষ মায়ের! ছেলে মেয়ে খারাপ পথে গেলে। এসব কথা কোন ছেলে মেয়েরা পছন্দ করে না বাবাদের তা বুঝতে হবে। আবার মায়েরা ও গুনে গুনে সব নালিশ করে বাবার কাছে নিজে স্বামীর কাছে সহী থাকার জন্য।
আমারা যারা দেশের বাইরে আমাদের ছেলে মেয়েদের বন্ধু বান্ধব বিভিন্ন দেশী। দিনে ৮/১০ ঘন্টা এদের সাথে কাটায়। টিচার, সহকর্মী সব ডিফারেন্ট কালচারের। কিন্তু আমরা ঘরে আশা করি আমার সন্তান ১০০% বাংগালী,১০০% ধার্মিক। কিভাবে প্রেসারে রাখি আমরা এসব ছেলেমেয়েদের চিন্তা করেছেন? কথায় কথায় বলি বাংলাদেশে আমাদের সন্মান যাচ্ছে!! আরে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা নিজেদের পরিবেশে,ধর্মীয় আচার ব্যবস্থা আত্মীয় পরিজনের মধ্য বড় হয়, তারপরেও চরম ভাবে সামাজিক অবক্ষয় ঘটাচ্ছে । কি না করে তারা? সেটা তো আপনি আমি শুধু ফেসবুকে সীমাবদ্ধ রাখছি।
এখানকার ছেলে মেয়েরা অনেক বেশী প্রাক্টিক্যাল, বাবা মায়ের সন্মান সামর্থ্য বুঝে চলে। স্পয়েল না সবাই।
ছেলে মেয়ে এতো ব্যস্ত সারাদিন ল্যাপটপে বসে থাকে। মাথা তুলে তাকায় না! কি আশ্চর্য ওর ইতো উচ্ছ্বল থাকার কথা! ও মাথা নীচু করে থাকবে কেন? আর ধর্ম কর্ম করলেও সেটা এক্সট্রিম হলে খুশী না হয়ে সাবধান হউন। দেখুন অনলাইনে সে কি করছে।
আমি ভেংগে যাব তবু মচকাবো না এই নীতিতে যারা আছেন তারা আর যাই হোন সুস্থ্য পরিবার বা সমাজ গঠনের অন্তরায়। শুধু হোয়াট মেয়েকে ভালোবাসে এই দোষে ছেলেকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। আরেকজন ধর্ম বাচাতে ছেলের ৩ বছরের সম্পর্ককে ভেংগে দিল, না হলে মায়ের মুখ দেখবে না। ছেলেও ঘোষনা দিয়েছে ও সারাজীবন মায়ের মুখই দেখবে, বিয়ে করবে না। ছেলে সারাদিন ঘরে বসে থাকে, পড়াশুনা আর চাকুরী বাদ।
আমরা কি আমাদের রক্তে মাংসে গঠিত আমাদের সন্তানদের কাছে জিম্মি? না আমাদের ও অনেক ভুল আছে!
এই লেখার মতামত আমার একান্ত ব্যক্তিগত, অন্যদের অবশ্যই ভিন্ন মত থাকতে পারে। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।