আমার নিজের পরিবারে দুর্ঘটনাজনিত প্রাণহানির ইতিহাস আছে, তাই যেকোনো দুর্ঘটনায় কারো প্রাণহানির কথা শুনলেই মনের মধ্যে কেমন যেন করে উঠে, আর সেটি যদি হয় অনেকগুলি নিরীহ মানুষের ক্ষেত্রে তাহলে আরো খারাপ লাগে। এই ধরণের সময় দুনিয়ার ঔষধ পত্র, ডাক্তার-কবিরাজ ছাপিয়ে আমাদেরকে আশ্রয় নিতে হয় আমাদের নিজেস্ব Faith বা Spiritualityর উপর। সে ক্ষেত্রে নিরীহ মানুষের মৃত আত্মার এবং তার রেখে যাওয়া স্বজনদের হারানোর ব্যথা সামলানোর জন্য দোয়া চাওয়া ছাড়া আর খবু একটা কিছু করার থাকে না, তাই সপ্তাহের গোড়ার দিকে ইরানের বিমান দুর্ঘটনায় মৃতদের এবং তাদের স্বজনদের জন্য প্রথমেই আমার দোয়া থাকলো।

আমরা এবং পৃথিবীর সব জায়গায় বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে যখন এই ঘটনা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ, তর্ক বিতর্ক করছি তখন যাদের স্বজন হারিয়েছে তাদের ঘরের চিত্র অন্য রকম, কারণ তাদের জীবন মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে গেছে, তাদেরকে বেঁচে থাকতে হবে আজীবন তাদের প্রিয়জন ছাড়া, প্রিয় মুখটির কথা আর শোনা যাবে না, প্রিয় মুখটি আর দেখা যাবে না। এই ক্ষেত্রে আসলে ভুক্তভোগীদের জুতায় পা রাখা অর্থ্যাৎ Empathaized হওয়া খুব কঠিন কাজ যদি কি না একই ঘটনা আপনার পরিবারের ক্ষেত্রে না ঘটে থাকে।

আমার ৯ বছরের ছোট ভাগ্নেটি দুর্ঘটনায় তার বাবা হারানোর পরেও বেশ কিছুদিন ধরে সে বিশ্বাস করেনি যে তার বাবা আর আসবে না। তারপর দীর্ঘদিন পর আমার সাথে ফোনের কথোকপথনে, একদিন যখন বললো আমি জানি “বাবা আর আসবে না”. আমি কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যাই, মনে হলো যেন ওর বলা শব্দগুলি একেবারে রিদয়ে আঘাত করছে। “what could I say”! ঠিক তেমনি আজও ১৭৬ টি পরিবারের কারো না কারো প্রিয়জন আর ফিরে আসবেনা। কোনো রাজনৈতিক আলোচনা, তর্ক বিতর্কের ঝড়, দোষ নির্দোষের হিসেবে নিকেশে তাদের কি যায় আসে। হাঁ, যদি এই ধরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন কিছু হয় যাতে করে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তাহলে হয়তো কিছুটা শান্তনা পাওয়া যায়।

এখন আমি বলবো কেন ১৭৬ জনের জায়গায় ৪৬৬ জন বলেছি, অথবা ভুলে ভুলে কাটা কাটি কেন বলেছি। এই সপ্তাহে তেহরানের আকাশে ইরানের মিলিটারির ভুলে নিক্ষেপ করা মিসাইলের আঘাতে যেমন ১৭৬ নিরীহ প্রাণের হানি হলো, ঠিক আজ থেকে ৩২ বছর আগে এই আমেরিকার মিসাইলের আঘাতে পারস্য উপসাগরে ইরানের একটি বাণিজ্যিক বাণিজ্যিক বিমান বিধস্ত হয়ে ২৯০ জন নিরীহ প্রাণের হানি হয়। সেই ২৯০ আর এই ১৭৬ মিলে ৪৬৬। তখন বর্তমান ইরানের মতো আমেরিকাও প্রাথমিকভাবে অস্বীকার করে এবং পরবর্তীতে তাদের ভুল স্বীকার করে এবং ২/৩ বছর আন্তর্জাতিক আদালত এবং অন্নান্ন চাপে তারা ভিক্টিমদের পরিবারকে সম্ভবত ৫১ মিলিয়ন ডলারের মতো ক্ষতিপূরণ দেয়, তবে হাঁ, আজ অবধি আমেরিকা তাদের সেই নির্মম ভুলের জন্য ক্ষমা চাইনি। ইরানকি ক্ষমা চাইবে? ইরান কি ভিক্টিমদের ক্ষতিপূরণ দিবে। আমেরিকা, ইরান এবং বিশ্বের অন্নান্ন দেশ মিলে এই ধরণের ভুলের পুনরাবৃত্তি রোধে কি কোনো বাস্তব (শুধু মুখে আর কথায় না) পদক্ষেপ নিবে ! নাকি আপনি আমি বা আমরা সবাই কমবেশি প্রতিনিয়ত এই ধরণের যুদ্ধযন্ত্রের খেলায় স্যান্ডউইচ মাংসের মতো প্রাণহানি বা স্বজন হারার ভয়ে ভীত থাকবো।
ভুলে ভুলে কাটা কাটি কি আসলে হয়। আমি ঠিক satire অর্থে বলেছি, আসলে তা হয় না।

পরমকরুণাময় আমাদের সবাইকে যেন মানুষকে এবং মানুষের জীবনকে মূল্য দিতে উজ্জীবিত করেন এবং আমাদের উগ্র ইগো থেকে বের হওয়ার তৌফিক দেন। আমিন !!!
বি. মুকুল
টরন্টো

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন