দরিদ্রতম দেশগুলি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ববাজারে দেওয়ার মতো তেমন কিছুই থাকে না । বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলি ভাত,কাপড়,শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে এবং এই সাধারণ প্রত্যাশিত প্রয়োজনীয় আশা পূরণের ব্যবস্থা ও দেখা যায় না। এ সব দেশে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার, প্রয়োজনীয় পরিষেবার অভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যা এবং নানাহ টালমাটাল ঘটনার দ্বারা দারিদ্র্যের মধ্যে আবদ্ধ থাকে । এ সব দেশগুলিতে শিক্ষা নিম্নমানের,সরকার ভাসমান থাকার জন্য যে কোনও উপায় অবলম্বন করে , আন্তর্জাতিক স্তরে অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর হয়ে ওঠা যে কোনও তৃতীয় বিশ্বের জাতির জন্য অপরিহার্য। অনেক দেশের দুরবস্থার দিকে তাকালে মনে হবে “অনার্যের যুগ” বাস করতেছে।

একটি দেশ ‘উন্নত’ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য চারটি প্রধান বৈশিষ্ট পূরণ করতে হয় । শহর ও গ্রামের উন্নয়নের বলিষ্ঠ অবকাঠামো , বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন এবং পরিষ্কার পানীয় জলের অ্যাক্সেস থাকা দরকার । কিন্তু অনুন্নত দেশগুলিতে এ সবের অভাব ;যেমন : সুদান একটি তেল সমৃদ্ধ কিন্তু “সম্পদ-অভিশপ্ত” দেশ , সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভাজন, দুর্নীতি এবং খাদ্যের অভাব চরমে। এ দেশ মৌলিক কৃষি এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। খরা ও বন্যায় কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি, ভোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকে না; ফলে বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভর করে। সুদান আজও গৃহযুদ্ধ থেকে বের হয়ে আসতে পারে নি।

দুর্নীতি :
একটি দেশ ধনী হতে হলে অবশ্যই সৎ, নির্ভরযোগ্য প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। অপেক্ষাকৃত ধনী দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছ জবাবদিহি সরকার ব্যবস্থা ও সততা থাকে । যদি কোনো দেশে সরকার, আইন, আদালত, ব্যাংক – এসব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিগ্রস্ত হয় , জনগণ ন্যায়বিচার আশা করতে পারে না । দুর্নীতিগ্রস্থ দেশগুলিতে জনগণ সরকার বা জনগণের কর্তৃত্বের দ্বারা নির্যাতিত, ন্যায্য দাবিদাওয়া না পেয়ে এক সময় অতিষ্ঠ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লবে জড়িয়ে পড়ে। মানুষ দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারকে বিশ্বাস করে না, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা জাতির সামগ্রিক উন্নতির জন্য না ভেবে নিজেদের স্বার্থের চিন্তা করে। যদি ও আমলাতান্ত্রিক (তাবেদারী) সরকার কোনোক্রমে বিতাড়িত হয়,তবে এদের দোসরগণ ক্ষমতা হারিয়ে ক্ষিপ্র হয়ে নানাহ অজুহাতে দেশে অরাজকতা বা বিশ্রঙ্খলতা সৃষ্টি করে,যার দৃষ্টান্ত বর্তমান বাংলাদেশ।

শিক্ষিত ও শ্রমশক্তির উন্নতিকরণ :
যদি দরিদ্র দেশগুলিতে নিম্ন- শিক্ষার মান এবং অদক্ষ শ্রমশক্তির তুলনা করা হয়, তবে একটি ইতিবাচক পারস্পরিক সম্পর্ক পাওয়া যায় । প্রজন্মের পর প্রজন্ম অপর্যাপ্ত শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বেড়ে উঠা জনগণ মৌলিক কাজগুলি সম্পাদন করার জন্য দক্ষতা এবং জ্ঞানের অভাব নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে, এ সব দেশে শ্রমশক্তি ও বেকারত্ব মারাত্মকভাবে উচ্চ স্তরের হয় ।একটি দেশ ধনী হতে পারে না যদি সেখানে দৃঢ় শিক্ষা সংস্কার বা কর্মশক্তি কাঠামো না থাকে।

দেশের উন্নয়নের অবকাঠামো পরিবর্তন :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য বা অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশের দিকে নজর রাখা হলে সর্বত্রই উন্নয়নের উচ্চ-গ্রেড অবকাঠামো দেখা যাবে।

একটি দেশ এবং তার অর্থনীতি কার্যকরভাবে পরিচালনা করার জন্য রাস্তা ও মহাসড়ক, হাসপাতাল এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ সহ অবকাঠামো প্রয়োজন। উদাহরণ স্বরূপ : রাস্তাঘাট ছাড়া সারা দেশে দক্ষতার সাথে পণ্য পরিবহন করা যায় না। পর্যাপ্ত পরিমান বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন এবং শক্তিশালী চিকিৎসা ব্যবস্থা ছাড়া কঠিন রোগের নিরাময় এবং হাসপাতালের মতো ভবন সচল থাকে না। আমাদের বাংলাদেশে পর্যাপ্ত ডাক্তার ও হাসপাতাল থাকা সত্বে ও ভাল চিকিৎসার জন্য বহু লোক বিদেশে পাড়ি জমায়।

নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন :
যে কোনো দেশের বৃহত্তর সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য। ধনী দেশগুলির তুলনায় দরিদ্র দেশগুলিতে অভ্যন্তরীণ অপরাধ অনেক বেশি। কারণ: এ সব দেশে দুর্নীতির কারণে আইন-শৃঙ্খলার সঠিক ব্যবহার হয় না । অনুন্নত দেশগুলিতে পুলিশ অফিসারদের বেতন যতই বাড়িয়ে দেয়া হোক না কেন,ঘুষ প্রথা ও চালু থাকে । আইন প্রয়োগকারীরা সহজেই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, তাদের সরকার এবং অর্থনীতি আক্ষরিক অর্থে যথেষ্ট সম্পদ অর্জনের সুযোগ পেয়ে থাকে।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক পণ্যের রফতানির ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল, যা মোট রপ্তানির ৮২ শতাংশ।বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে পোশাক শিল্প চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পোশাক শিল্পে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

অস্থিরতার জন্য ব্যবসায়ীমহল সময় মতো বিদেশে পোশাক রফতানি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে,যার ফলে বিদেশী ব্যবসায়ী বাংলাদেশের পরিবর্তে অন্য দেশ থেকে তাদের পণ্য নিয়ে ব্যবসা করছে,এতে বাংলাদেশের রেমিটেন্স হ্রাস পাচ্ছে । উৎপাদনশীল সক্ষমতায়, বিশেষ করে মানব ও পুঁজি উন্নয়ন, অবকাঠামো ও জ্বালানি খাতে সমন্বিত বিনিয়োগ করতে হবে এবং বেসরকারি খাতের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

মানুষের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা : বাংলাদেশ বন, খনিজ, পানি, কৃষি, মৎস্য, শক্তি, জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশগত সম্পদসহ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। তবে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এর প্রাকৃতিক সম্পদ ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে।

নিম্ন আয়ের দেশে উন্নয়ন : ১৯৭১ সালে দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি থেকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। কাজেই এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে দেশ উন্নত দেশগুলির একটিতে পৌঁছতে পারবে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সুবিধা ও অসুবিধা : গত ১০০ বৎসরে শিল্প, চিকিৎসা এবং কৃষিতে অনুন্নত দেশগুলি বিশেষ ভূমিকা রেখেছে । তবে জনসংখ্যার বৃদ্বির সাথে উৎপাদন সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারছে না। এ ছাড়া দ্রুত নগরায়ন হওয়াতে কৃষি ভূমির পরিমান ক্রমশঃ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে খাদ্য সংকট বেড়ে যাচ্ছে এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি জনসংখ্যার চাপ এতোই বেড়ে যাচ্ছে যে উন্নত দেশ গুলিতে ও এই বর্ধিত জনসংখ্যা ছড়িয়ে পড়ছে
সমাপ্তি

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধহালচাল : তৃতীয় বিশ্বের গণতন্ত্র ও দুরবস্থা
নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম - জন্ম:- ১৯৪৮ সাল । এনায়েতপুর, কচুয়া, চাঁদপুর, বাংলাদেশ। শিক্ষা:- এম, কম ( ব্যাবস্থাপনা ), ঢাকা ইউনিভার্সিটি। এম, এ (অর্থনীতি ) জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি। চাকুরী জীবন:-ইসলামাবাদ, পাকিস্তান,বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া,আমেরিকা ও কানাডা। বর্তমানে :- অবসর জীবন- কানাডাতে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত বই:-আমার সংগ্রামী জীবন,সাদা ঘোড়া,জীবন চক্র,শুচিতা ও জীবনের মুখোমুখি।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন