Radio Foorti 88.0 fm =
২০১১ সালের
” ঠাকুর মার ঝুলি ”
=========================
প্রথম ওন এয়ার হয় ২০০৬ সালে।তো আমি বলছি
২০১১ এর কথা …
ভীষণ ভালো মনে আছে। প্রথম মোবাইল হাতে। রাজ্যের আনন্দ যাকে বলে। তো ঐ সময়ে টাচ মোবাইল যা খুশি তাই করা যায় কি মজা, আসলে এখনকার মত তখন হাতে হাতে এতো মোবাইল থাকলেও তখনও টাচের বিষয় টা একটু ভিন্ন ছিলো। এখন তো সেটাও নাই। গড়ে হরিবল সবার হাতে বলা চলে। সাথে গান শোনা… হাজারো কান্ডকারখানা। তার মধ্যে রেডিও এফ এম যোগ। ওয়াও কত রাত যে জেগে একটার পর একটা গান শুনছি তার কোন হিসাব নাই। তখনও ফেসবুক আসক্ত হই নাই। মানুষ মাদকাসক্ত হয় আর কেউ হয় ফেসবুকাসক্ত।
যাক রাতে গান শোনা, রেডিও এফ এম এ ম্যাসেজ দিয়ে গান রিকোয়েস্ট করা। নানান কথা শুনা এ জেনো আরেক নেশা।
নেশা যে কত ধরনের আছে। যাক তখন তো Rj রাসেল, Rj কিবরিয়া, Rj সাব্বির হাসান লিখন, Rj অর্ক, Rj নওসিন, Rj সাদিয়া, Rj লাকি, ও আরেকজন Rj সালমান।
এদেরকে শুনতে শুনতেই সময় শে ———— ষ। মানে ঘুম। রাত জাগাটা সূত্র খুঁজে দেয় এরাই..
তখন কন্ঠে মাতাল হওয়ার যোগাড়। খুলনায় মোটামুটি আমাদের জেনারেশন এর কানে রেডিও এফ এম, এ এদের কাউকে শুনছে না এমন কেউ নাই। এমন কি আমাদের জেনারেশন ছাড়াও পরের জেনারেশন তারাও আকৃষ্ট।
একদিন আমার চাচাত বোন বললো ঐ তুই গল্প শুনবি রাতে হয়। রেডিও ফূর্তিতে ভূত এফ এম বলে একটা প্রোগ্রাম হয় শুক্রবার রাতে ১২ টায় হয় দেখিস আবার ভয় টয় পাসনে জেনো। পরে আমায় দোষারোপ করতে পারবি না।
– যাও করবো না।
এবার সেই শুক্রবার হাজির,
– আমিও ভীষণ উৎসুক হয়ে Rj রাসেল এর প্রোগাম শোনা শুরু করলাম এবং রীতিমতো আমি ওখানের অলিখিত সদস্য হয়ে গেলাম।
তেমনই এক রাতে মনোযোগ সহকারে কানে হেডফোন দিয়ে রাসেল ভাইয়ের আকর্ষনীয় কন্ঠের যাদুতে আমি পুরা অধর্েক।
তার আগে আবার Rj লিখন। শুনতেছি তার জাদুময় কন্ঠের বকর বকর আর ফাক ফোঁকরে বাংলা, হিন্দি, ইংলিশ গান। আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, হাসান …. পুরাই সে —– ই রকম। তার মাঝে মাঝে দারুন দারুন এস এম এস …. ????
তো সেই আকাঙ্ক্ষিত কন্ঠ এবং সময় অনুপাতে শুরু হলো অনুষ্ঠান। কন্ঠে সাথে যে মিউজিক ছিলো ওয়াও অসম্ভব দারুন ভয়ংকর লাগতো নিঝুম রাতে।
আমি আমার রুমে একা। পাশের রুমে যাথারীতি মা- বাবা আছেন। আমার রুমে বিশাল জানালা এবং জানালা গা ঘেঁষে জিয়েল গাছ।
————— ভূ ত এফএম,
হ্যালো, আপনাদের সবাইকে ভূত এফএম এ স্বাগতম! – আমি রাসেল,
এখন ১২ টা বেজে ১ মিনিট,
আজকের এপিসোডে আমাদের সাথে আছেন অতিথি মজিদা খালা।
খালা বলেন ,কেমন আছেন?
– জ্বী ভালো আছি।
জ্বী মনে হয় ভালোই আছেন!
– আচ্ছা, আমরা সরাসরি গল্পে চলে যায়। কি বলেন?
জ্বী,
সেদিন ছিল অমাবশ্যার রাত! হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে যায়।বাইরে থেকে একটা কুকুরের কান্না শুনতে পাচ্ছি!
– এক মিনিট! আপনি কি শিওর এটা কুকুরের কান্না ছিল?
মজিদা খালা কইলো, হ হ আমি কইতাছি, ওই কুকুরডা বাড়ির সামনে আইসা মুইতা দিছিল, আমি গরম পানি মারি দিছিলাম। এজন্যই অয়ত কানতাছে। পাশে তাকায় দেহি উনি নাই।
আমি আইতকা ভয় পেয়ে গেছিলাম, হঠাৎ পাশের রুমে থেকে আওয়াজ আসলো গুডগুড গুডগুড আওয়াজ!
ভাবলাম ফজর কি হইয়া গেলো, উনি গেলেন কই?
– আচ্ছা এই উনি টা কে? তার পরিচয় দেন। আমার দর্শকরা শুনুক।
— উনি হলেন আমার হাবুর বাপ।
– আচ্ছা তারপর কি হলো
– পাশে নাই। আমি পাশ ফিরা শুবো এমন সময় দরজাটা হালকা ফাঁক হইয়া গেলো। হাবুর বাপ আমারে ডাইকা কয় ঐ মজিদা ওঠ, বয় আমার লগে একসাথে ওজু করি। নামাজে যাবো আয়।
ও মাই গড, তাড়াতাড়ি বলুন শ্রোতারা অপেক্ষা করছে। আচ্ছা,,
ইতিমধ্যে আমাদের কাছে বেশসংখ্যাক এসএমএস চলে এসেছে!
ঢাকা মিরপুর থেকে সামিয়া লিখেছে,
রাসেল ভাইয়া আমি রুমে লাইট অফ করে ভূত এফএম শুনছি। পাশে আমার কুকুরটাও আছে। কুকুরের কান্না শুনে আমার কুকুরের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমার কুকুরটাও প্রায় সময় কাঁদতো। পরে ডাক্তার বললো কুকুরটার খুব ডিপ্রেশনে আছে। গার্লফ্রেন্ড চলে গেছে তো তাই। রাসেল ভাইয়া প্লীজ ওর জন্য দোআ করবেন ও জেনো ওর মানসিক অবস্থা থেকে নিজেকে সামলিয়ে সামনে এগুতে পারে।
এটা কোন ম্যাসেজ?
– শালা মানুষের গার্ল ফ্রেন্ড চলে যায়, ভুলে যায়। বিবাহিত গুলান আবার বৌ গুলাকে শো- পিস বানায় বাইরে আরেকজন এর পিছে দৌড়ায়। আবার অনেকে আছে এক সাথে তিনটারে হ্যান্ডেল করে কেমনে পারে??? আল্লাহ এদের একটায় পোষায় না। বিবাহিত পুরুষ, অবিবাহিত পুরুষ রিসার্চ করলে দেখা যাবে শতকরা নব্বই শতাংশ নারী আসক্ত। এ পুরুষ কুকুর ও দুদিন পর নতুন দরজায় নক করবে। ভালোবাসতে পারে না, ভালোবাসা ভালোবাসা করে চিল্লায় ফাটায়। এদের মাথায় ঠাডা পড়ে না ক্যে ????
ধূ ——– রো , আজাইরা ম্যাসেজ, রামছাগল ????
খুলনা থেকে রাতুল লিখেছে,
আরে রাতুল,
সাথে সাথে কল
– এই তুই ও কি
– হ্যা, তুই ঘুমাসনি? তাহলে আয় গিটারে নতুন সুর তুলেছি। তোরে শুনাই। দেখ রাতুল এই রাত দুপুরে টুংটাং শুনতে ভালো লাগবে না। আমি কল দিয়েছি কাল না তোর পরীক্ষা খালাকে বললি।
– বাদ দে। কাল সকালে তোকে নিতে আসবো। যাবি আমার সাথে ?
– ধূরো, রাতুল তুই এক কাজ কর নিরাকে কল দে। ওরে শুনা। কেনো কেনো রু ——
টু টু টু…. লাইন কাটা শেষ।
জানি কাল সকালে আমার খালাতো ভাইটি আমাকে তুলোধুনো করবে। করুক —
আবার শুনতে শুরু করলাম
– খুলনা থেকে সেজুঁতি লিখেছে …
এই মুহুর্তে আমি ছাদের বসে ভূত এফএম শুনছি আমার সাথে আমার ভালোবাসার ভূত আছে। ও আর আমি আইসক্রিম খাচ্ছি। পাশে ছাদে আলো জ্বলছে । কেউ একজন ভীষণ ভাবে পায়চারি করছে। আমি দেখতে চাইলাম কিন্তুু আমার ও এসব পছন্দ করে না, ও ভীষণ জেলাস, আমার ভালোও লাগে, কারনটা ও জেলাস মানে তো আমাকেই তো ভালোবাসে কিন্তু কেমনে জেনো নিরামিষ। এর সাথে বাকি জীবন কাটাবো কেমনে কে জানে।
সেদিনও শুনতে শুনতে রাত প্রায় ২ টার কাছাকাছি। আমি শুনছি। এমন সময় চোখে পড়লো জিয়েল গাছটা নড়ছে। আমার তো এবার শোনা মাথা উঠলো।
কারন গাছের অন্য সব ডাল পাতা স্থীর কিন্তু আমার জানালার কাছের ডালটাই কেনো নড়ে। আমার এবার একটু একটু ভয় ও করছে।
তখন হঠাৎ আবার কানে আসলো ঐ খালা বলছেন তিনি তার স্বামীর ডাকে পুকুর পাড়ে গেছেন ওযু করতে। কিন্তু সে দেখছে তার স্বামী পুকুরের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে তাঁকে ডাকছে। তার পরনে পুরা সাদা ধবধবে পোষাক। তার দিকে হাত লম্বা হয়ে আসছে।
জ্বী, এক্সাটলি কি দেখেছিলেন?
দেখলাম, ও মাই গড,তারপর… তারপর বলে… আমার দর্শকরা অস্থির আগ্রহে কাতর ..
– কি দেখলেন আপনি? দর্শক জানতে চাই!
দেখলাম, হাতটা লম্বা হইয়া আমার দিকে বাড়াইয়া দিছে।
কি বলেন!!! এক্সাটলি এটাই দেখেছেন তো… হাতটা লম্বা হয়ে আসছিলো। এটাই তো।
জ্বী এটাই।
—৷ ওরে সর্বনাশ আমার দিকেও আসছে তো। হায় আল্লাহ, আমার দিকে ও আসতেছে
হাত না লাঠি …. ????
.আমি শুধু হাত লম্বা পর্যন্ত শুনলাম। আমারও মনে হতে লাগলো জিয়েল গাছের একটা ডাল আসলেই লম্বা হয়ে জানালা দিয়ে ঢুকছে। আমার তো জ্ঞান হারাবার মত অবস্থা। কানের থেকে এক টানে হেড ফোন খুলে ফেললাম। এর মধ্যে আমার প্রাণটা যায় যায় অবস্থা। চিৎকার করবো এমন সময় গলার স্বর ও আর বের হয় না। ঠোঁট নড়ে কিন্তু শব্দ বের হয় না।
বাকিটা ইতিহাস …
সকালে চোখ খুলে রু দেখে তার আব্বা চিন্তিত মুখে মাথার কাছে তার হাত ধরে বসে আছে। তার কিছু হলে তার আব্বা শেষ হয়ে যেতো। চোখ খোলা মাত্রই গম্ভীর স্বরে বললো উঠে বস, সকালে মতি মসজিদের হুজুরের কাছ থেকে পানি পড়া নিয়ে এসেছি। জ্বর ১০৪ ডিগ্রি উঠে বসে আছে। আব্বা বললেন মাথায় পানি দিয়ে দেই ঘোর তুই, আমিও ঘুরে শুই, এতোক্ষণে মা কথা বললো। ততক্ষণে বাপ মেয়ের কান্ড কারখানা দেখছিল সে।
– ভীষণ রকমের বিরক্ত হয়ে বললো, দেখো এই কাজটা তুমি করতে যেয়ো না। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পানি ফেলবে আর চিল্লাবে।
মাথায় পানি চলছে…
আমিও এই সুযোগে আবদার শুরু করে দিলাম একটার পর একটা। এই চাই সেই চাই… এটা এনে দাও ওটা খাবো। রীতিমতো আবদারের ঝুড়ি।
জীবনে যা যা আবদার করার থাকে মেয়েরা শুধু বাবার কাছেই হয়ত যা করার করে নেয় । ????
কিন্তু…
কেউ রু কে কিছু জিজ্ঞেস করছে না। অথচ রু এর মনের ভিতর তো তখনও জিয়েল গাছের ডাল তার দিকে এগিয়ে আসছে হাত না না ওটা লাঠি নাকি হাত । হঠাৎ মাকে মা বলে ডাকতেই তিন চার জন কাজিনরা ঢুকলো ঘরে। সাথে রাতুল ও এসছে।
কিরে রু তোর নাকি জ্বর বলে মিটমিট করে হাসছে জ্যোতি —
উফ্ হাসে কেনো এরা… রু বুঝে উঠতে পারে না। আপুনি হেসো না তো আমার কষ্ট হচ্ছে।
তুই তো কষ্ট সহ্যই করতে পারিস না। এ তো নতুন না। তাই তো বিনোদন দিতে আমরা হাজির…
– মনে মনে বলে বাঁদর মার্কা সব গুলান আমি মরে গেলেও এইগুলান পাল্টাবে না, আমি জ্বরে মরে যাচ্ছি আর ওরা হাসছে।
– আসল ঘটনা অনেক পড়ে জেনেছিলাম। ততদিনে রাসেল ভাই এর প্রোগাম শোনা বেশ কমিয়ে দিয়েছি। রাতে শুনতাম না। পরে পুনঃ প্রচার সেটা শুনতাম।
সে দিন রাতে আসলেই ছাদের থেকে আমার কাজিনরা আমাকে ডাকার জন্য আমারই ঘরের জানালা সংলগ্ন গাছের ডালটি নেড়ে একটা ডাল উপরে থেকে নীচে নামিয়ে আমাকে ডাকার চেষ্টা করছিলো। সবার ইচ্ছে ছিলো রাতে ছাদে বসে চাঁদ দেখা হবে আর ঝালমুড়ি খাওয়া হবে। চাঁদ প্রেমী হওয়ারও এটা একটা কারণ বটে। প্রায়ই ছাদে বিছানা করে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকা আর তারা গুনা এবং সিঁড়ি তৈরি করার বদ অভ্যাস বলে যাকে । সে যাইহোক বিষয় টা
ওরা জানতো না যে আমি ঐ দিনে ঐ সময়ে গভীর মগ্ন হয়ে ভূত এফ এম শুনছি।
কি আর করার আমিই ঝালমুড়ি হয়ে গেলাম।
চা —– না ——- চু ——- র
২০২০ সালে এসে মনে হয় এই তো মাত্র কিছু দিন আগের কাহানি … ???? ঝালমুড়ি ????
রাত তো রাতের মতই বেড়ে যায় … ঘুম তো গেছে রামগরুড়ের পিসতুতো ভাই এর কাছে। ছাগলটা নেতিয়ে নাক ডাকছে। রাতটা আসলেই বাড়ছে …
১ঃ ৫০
২০/০৪/২০২০
®
নীলিকা নীলাচল ***