রহমত সারা দিন রিক্সা নিয়ে রাস্তায় থাকে । কোনো দিন ভাড়া চুকিয়ে ১০০ টাকা বা কোনো দিন সামান্য বেশি টাকা নিয়ে ঘরে আসে । সংসারে তার স্ত্রী হাসি ও দুই ছেলে মেয়ে রেনু ও হারু । মা বাবার ইচ্ছা ছেলে মেয়েদের যে করেই হোক পড়া শুনা শিখিয়ে সাবলম্বী করিয়ে তুলবে । ঝড় আর বৃষ্টি, কিছুতেই বাধার সৃষ্টি করেনা রহমতকে,রিক্সা নিয়ে রাস্তায় যেতেই হবে । তার মনে অদম্য সাহস, তার স্ত্রী হাসির স্বপ্ন ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবে । মিয়া বাড়ির কেরামত আলী মিয়ার ছেলে রফিক ও মজনু কি সুন্দর ছুটিতে বাড়ি এসে ঘুরে বেড়ায় । তারা পড়া শুনা করে চাকুরী করে এবং ঘরে সুন্দরী বৌ এসেছে । রহমত ও হাসির টাকা পয়সা নাই,গরিব মানুষ ,তাই বলে কি মনে চায় না তাদের ছেলে মেয়েরা পড়া শুনা করে সুন্দর করে চলুক? ছেলে মেয়েদের নিয়ে হাসি স্বপ্ন দেখে আর দুই চোখ জলে সিক্ত হয়ে উঠে । মাঝে মাঝে আদর করে বলে তোরা কি ওদের মতো ভালো হতে পারবি না ? ছেলে মেয়েরা বলে, হ্যা,পারবো ।
রহমত অনেক কষ্ট করে টাকা জমিয়ে রিক্সা কিনেছে । কিন্তু গ্রামের বাড়ি,সামান্য রিক্সা চালিয়ে সংসার ও ভালো চলে না । জমি যা ছিল,নদী গর্ভে বিলীন,শুধু ভিটা বাড়িটুকু আছে। রহমত রিক্সা চালিয়ে যা রোজগার করে,হাসি তা থেকে দুই চার টাকা করে জমিয়ে মাটির ব্যাংকে লুকিয়ে রাখে, ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যতের পড়াশুনার খরচের জন্য । গরিব সংসার,তবে দুজনেই ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে ।
কিন্তু বিপদ দেখা দিলো, এক রাতে সামান্য ভিটা বাড়ি টুকুও নদী ভাঙার কবলে হারালো । তার প্রতিবেশী রমিজ তাদের পরিবারকে এই বিপদে আশ্রয় দিয়েছে । অনেক দিন থেকে সে পরিবার নিয়ে তার বন্ধু রমিজের ছোট্ট রান্না ঘরে কোনো রকমে মাথা গুঁজে থাকে । রমিজের এক ছেলে,দুই মেয়ে,দৈনিক মজুর,নুন আন্তে পান্তা পুরায় সংসারের অবস্থা । রমিজ ও রহমত যা রোজগার করে তাই দুই পরিবার শেয়ার করে । কিন্তু এ ভাবে আর কতদিন চলবে । রহমত সিদ্ধান্ত নিলো সে তার পরিবার নিয়ে ঢাকা চলে যাবে । ঢাকা বড়ো শহর,কোনো না কোনো ব্যবস্থা হবে এবং তাদের স্বপ্ন, ছেলে মেয়েদের বড়ো শহরে রেখে পড়া শুনা করাবে । কিন্তু কেউ জানা শুনা বা থাকার কোনো ব্যবস্থা নাই । তবে ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা করে দেখবে যদি কিছু করা যায় ।রমিজ ও তার স্ত্রী অভয় দেয় যে কোনো বিপদে ফিরে আসলে আশ্রয় দেবে ।
একদিন রহমত তার স্ত্রী হাসি, দুই ছেলে মেয়ে রেনু ও হারুকে নিয়ে ঢাকায় এসে আজিমপুর কলোনির এক বিল্ডিঙের সিঁড়ির নিচে আশ্রয় নিলো । বর্ষাকাল, বাহিরে অনেক বৃষ্টি, কোথায় যাবে এই দুর্দিনে, অনেক অনুরোধ করার পর দারোয়ান তাদের সিঁড়ির নিচে থাকতে দিলো । পরদিন দারোয়ান তাড়িয়ে দিলে সে বিপদে পড়ে এবং অন্য বিল্ডিঙের নিচে আশ্রয় নেয় । এই করে রোজগারের এবং থাকার কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা করতে পারে না । হাসি এ বাসায়, সে বাসায় কাজ করার চেষ্টা করে এবং মাঝে মধ্যে ছুটা কাজ করে । কিন্তু তাদের মূল সমস্যা থাকার । এক মাসের ও অধিক সময় ঢাকা শহরে এ ভাবেই পার হলো; কোথায় যাবে,কি করবে ভেবে পাচ্ছে না । হাসি তার লুকানো ব্যাঙ্ক ভেঙে কয়েক শত টাকা এই দুর্দিনে রহমতকে দিলো । রহমত চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে,”এই সামান্য টাকা আমার ছেলে মেয়েদের জন্য রাখা হয়েছে,আমি তা খরচ করতে পারি না ।” হাসি অভয় দিয়ে বলে,” আমরা দু’জনে কাজ করে পুনরায় জমা করবো ।”
রহমত নিউ মার্কেটের মোড়ে প্রতিদিন বিভিন্ন রিক্সাওয়ালাকে তার সমস্যার কথা বলে । ভোর হলে সে প্রতি দিন লাইন ধরে কাজের জন্য ।কোনো দিন কাজ পাওয়া যায়, কোনো দিন খালি হাতে চলে আসে । এ দিকে এ পয্যন্ত সে তার ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ও পারেনি । অবশেষে ,আফজাল নামে এক রিক্সাওয়ালা তার পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করে থাকার ব্যাবস্থা করে ও তার মালিকের সাথে পরিচয় করিয়ে রিক্সার ব্যবস্থা করে।
রহমতের মতো দেশে হাজার হাজার মানুষ করোনার কবলে পড়ে আজ দিসে হারা । হাজারো মানুষ গ্রাম থেকে ভেসে এসে বিভিন্ন শহরে রোজগারের জন্য ভিড় করেছে , এখন কোরোনার কারণে নানাহ সমস্যায় জর্জরিত । একদিকে করোনা , অপরদিকে বন্যা আর পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকার বাড়ি ঘর,মাঠ,ঘাট,বাজার, বন্দর প্লাবিত হচ্ছে । এবারের ঈদুল আজহা কেমন হবে? বাংলাদেশে গরু কিনার হিড়িক শুরু হয়েছে । তবে করোনা ও অর্থনৈতিক কারণে বিক্রেতা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত । এবার কোনো কোনো গ্রামে ও গরুর বাজার বসেছে । লোকজন গরু নিয়ে দর কসাকসী করে , কিন্তু ক্রেতা প্রকৃত দর থেকে অনেক দূরে । টেলিভিশনে , ইন্টারনেটে কেনা কাটার দৃশ্য দেখানো হইতেছে । ভিডিওতে দেখলাম ২০১৯ একটা গরু বাংলাদেশে ৩৪ লক্ষ টাকা বিক্রি হয়েছে । এ ধরণের বা তার ও বেশি টাকা খরচ করার মতো বাংলাদেশে হাজার হাজার ধনী পরিবার (বিত্তশালী ) রয়েছে ।
যদি আমাদের এ সব ব্যাবসায়িক উদ্যোগী বিত্তবানরা দেশে তাদের অর্থ বিনিয়োগ করে ,তাতে দেশে বেকার সমস্যা কমে আসবে , দেশ অর্থনৌতিক ভাবে অনেকটা এগিয়ে যাবে এবং অসহায় লোকদের কাজের ব্যবস্থা হবে । দেশের শিল্পের উন্নতি, জনগণের উন্নতি,বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে আঁতাত হয়েছে,এতে দেশে শিল্পের প্রসার হলে আমাদের যুবক ছেলে মেয়েরা শ্রম দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে । বতমানে বাংলাদেশে ৭০% বা তার ও বেশি লোক কৃষির উপর নির্ভশীল অথচ সিঙ্গাপুরে ১% নির্ভরশীল এবং বাকি ৯৯% শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরে কাজ করে । আমাদের দেশে ও কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যাবহারে চাষাবাদ শুরু হয়েছে ।
এ বার করোনা ভাইরাসের (কোবিদ-১৯) কারণে এখানে ঈদুল ফিতর ও জমাতে নামাজ পড়া হয় নি । তবে অনেকে ঘরে পরিবার সদস্যদের নিয়ে জামাত করে অথবা নিজে একা নামাজ পড়েছে । এখানে বিভিন্ন পরিবার বিভিন্ন নিয়মে ঈদ উদযাপন করেছে, বন্ধু বান্ধব যার যেই এসে দূরত্ব রেখে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে গিয়েছে । রং বেরঙের কাপড় পরে কোলাকুলি বা আলিঙ্গন, গল্প,আড্ডা এবার হয় নি । এই ভিন দেশে টরন্টো শহরে প্রায় দুইশত বা তার ও অধিক মসজিদ রয়েছে । এখানে কোনো কোনো মসজিদে দুইটি বা তিনটি জামাত ও হয় । তবে আমাদের দেশের মতো খোলা মাঠে ময়দানে নামাজ হয় না । ঈদুল আজহার যে মূল আনন্দ কোরবানি দেয়া,তা করোনার কারণে খুব একটা এবার এখানে শুনা যাচ্ছে না ।
দুই মিলিয়ন বা তার ও অধিক লোক সারা পৃথিবী থেকে প্রতি বৎসর পবিত্র মক্কায় “লাব্বায়েক,আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক,লাশরীকা লাব্বায়েক…” ধ্বনিতে মুখরিত করে আরাফাত ময়দানে সারা দিন হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যায় মুজদালেফা গিয়ে মাগরিব ও এসার নামাজ একত্রে শেষ করে সারারাত খোলা মাঠে অবস্থান করে । ভোরে ফজর নামাজ আদায় করে ধর্ম প্রাণ মুসল্লিরা মিনায় গিয়ে তিন দিনের জন্য তাঁবুতে অবস্থান নেয় ও মিনাতে শয়তানকে উদ্দেশ্য করে ফাথর নিক্ষেফ করে এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাজ শেষ করে কোরবানি দিয়ে থাকে । এবার সৌদি আরব স্থানীয় লোকদের নিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে হজ পালন করবে বলে জানিয়েছে । এবারই প্রথম নয়,এর পূর্বে ও বহুবার কলেরা, ও অন্যান্য কারণে মক্কায় হজ্ব বন্ধ ছিল ।
এখানে টরন্টো মসজিদে দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ হবে বলে স্থানীয় মসজিদ কমিটি জানিয়েছে । মসজিদে আজ জুমার নামাজ হয়েছে । দিনের ১২টার দিকে গিয়ে নাম রেজিস্ট্রেশন করে বাসায় এসে ওযু করে পুনরায় মসজিদে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে নম্বর দেখিয়ে দুই মিটার দূরে দূরে নিজের জায়নামাজ নিয়ে আবার কেউ কেউ প্লাষ্টিক কাগজের উপর দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছি । আমাদের স্থানীয় মসজিদ কমিটি জানিয়েছে আগামী শুক্র বারে সকাল ৭:৩০ ও ৮:৩০ দুই জমাতে ঈদের নামাজ হবে । তবে সিট নম্বর ইন্টারনেটে অথবা একদিন আগে অর্থাৎ বৃহস্পতি বার গিয়ে নিতে হবে । বুড়ো ও বাচ্চা ছেলে মেয়েদের নামাজে না গেলে ও হবে এবং বাসায় কোবিদ-১৯ কন্ডিশনে নামাজ পড়া যাবে । এইতো হলো এবারের ঈদের নামাজ ও আনন্দ । টেলিফোন,ফেসবুক বা ইমেইল এড্ড্রেসে ঈদ মোবারক জানানো যাবে । তবে একত্রে ঈদের কোলাকোলি,খাওয়া দাওয়া হৈ চৈ ঈদের আনন্দ এবার হবে না । বর্তমান (কোবিদ-১৯) পরিস্থিতিতে কবে নাগাদ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে একমাত্র উপরওয়ালা জানেন । কানাডায় নিয়ম কানুন কিছুটা স্ট্রীক্টলী মেনে চলা হচ্ছে যে জন্য এখানে করোনা ভাইরাস কিছুটা নিম্ন গতির দিকে ।
বহু বৎসর থেকে রুটি রোজগারের কারণে , আমি বাংলাদেশের বাইরে । দেশের আত্মীয়স্বজন,বন্ধু বান্ধবকে নিয়ে একত্রে নামাজ পড়ে আনন্দ করার সে সময় কোথায়? মনে পড়ে ১৯৮৬ সনে আমি আমেরিকার নিউজার্সি কয়েক জনের সঙ্গে মেস করে থাকি ।রোজার মাস শেষ হয়েছে,আগামী দিন ঈদুল ফিতর । আসে পাশে কোনো মুসলমান বা মসজিদ আছে কিনা কিছুই জানিনা । রাতে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো সকালে আমরা গাড়ি নিয়ে ফিলাডেলপিয়ার দিকে যেতে থাকবো । রাস্তায় কোনো মুসলমান কে পাইলে জিজ্ঞাস করবো কোথায় ও নামাজের জমায়েত হয় কিনা । সকাল সকাল ঘর থেকে বের হলাম, অনেক দূর যাওয়ার পর আমাদের নজরে আসলো কতিপয় আফ্রিকান মুসলমান রাস্তার উপর নামাজের জানামাজ নিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় । আমাদের বুঝতে অসুবিধা হলো না যে এখানে নামাজ হবে । গাড়ি থামিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে নামাজে হাজির হলাম । প্রচন্ড ঠান্ডা,কোনো রকমে নামাজ শেষ করে গাড়িতে উঠে heat দিয়ে বসে ইমামের সংক্ষিপ্ত খোৎবা শুনে ঘরে ফিরে আসি ।
বাংলাদেশে ঈদের আনন্দ ভিন্ন ধরণের । অনেক আগে থেকেই ঈদের একটা প্রস্তুতি চলতে থাকে । মা বাবা ঈদের জামা কাপড় কিনে দিবে । এটা সব ছেলে মেয়েরাই আসা করে । কোরবানির ঈদে চাঁদ দেখার কোন উপসর্গ থাকে না । ঈদের দিন পূর্ব থেকে ঠিক করা থাকে । সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির লোকদের সঙ্গে পুকুরে গোছল সেরে ঘরে এসে নতুন কাপড় পরে সামান্য কিছু খেয়ে ঈদ্গার ময়দানে মুরুব্বিদের সঙ্গে যেতে হবে । ঈদে পাজামা, পাঞ্জাবি, মাথায় সুন্দর টুপি , হাতে আতর দিয়ে নামাজের জন্য তৈরী হতাম ।
জায়নামাজ নিয়ে ঈদগার মাঠে গিয়ে একত্রে বসে মুখে উচ্চারণ করা “লাব্বায়েক,আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক,লাসারিকা লাব্বায়েক.. । ” গ্রামে ঈদগা মাঠে যেহেতু একটি মাত্র জমায়েত হবে,কাজেই কোনো তাড়া হুড়া নাই । নামাজ শেষে গ্রামের মুরুব্বি দাদা “জমিরউদ্দিন প্রধান ” দাঁড়িয়ে সবাইকে তার বাড়ির উঠানে খাওয়ার জন্য দাওয়াত করে বলতেন ,”মুসুল্লিগণ, আপনারা সবাই আমাদের বাড়িতে আমন্ত্রিত ।“সেই দাদা বহুদিন হয় দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন,আল্লাহ জান্নাতবাসী করুন । আমরা সবাই গিয়ে খিচুড়ি ও নানান রকমের খাবার খেয়ে বাড়ি যাই ,আজ গরু,ছাগল কোরবানি(স্যাক্রিফাইস) করতে হবে । প্রতিটি বাড়িতে লোক সংখ্যা অনুপাতে একের অধিক কোরবানি দেয়া হতো । ছোট,বড় সবাই কোরবানি নিয়ে মহা ব্যাস্ত । সবাই খবর নিতেছে কার গরুর মাংস কেমন, কার মাংস কত দ্রুত রান্না হবে খাবার জন্য ।
ঈদের গরু কেনার জন্য প্রস্তুতি চলতে থাকে আগে থেকেই । ছেলে মেয়েদের স্কুল ছুটি হবে, বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে খেলা দুলা করবো ,আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যাবো । মা বাবা বা আত্মীয়স্বজন ঈদের বকশিস দেবে । ঈদে খালুদের বাড়িতে যাবো ।কিন্তু মাঝখানে এক বিরাট বোয়ালজোরি খাল পার হতে হবে । খালে অথৈ পানি,নাই কোনো পারাপার ব্যবস্থা । অনেক সময় এ দিক সেদিক তাকিয়ে কোনো নৌকা দেখতে পাচ্ছি না । গামছা ,পরে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম । সাঁতার জানা আছে ভাগ্যিস, নতুবা ফেরত বাড়ি আসতে হতো । যাক, সাঁতার কেটে ওপর পাড়ে গিয়ে কাপড় পরিবর্তন করে হাটতে শুরু করলাম । খাল থেকে এক মাইল দূরে তাদের বাড়ি । বাড়িতে গিয়ে কাজিন মুখলেস,জয়নাল,দুলাল কে পেয়ে পথের অসুবিধা সবই ভুলে গেলাম । হরেক রকমের মজার খাওয়া ,সেমাই, বিভিন্ন ধরণের হালুয়া,পোলাউ, মাংস, এ ঘর,সে ঘর টানা টানি ,”আমাদের ঘরে এস,একটু খেয়ে যাও ।” সারা দিন কাজিনদের সঙ্গে এ বাড়ি সে বাড়ি, শেষে বিকেলে খেলার প্রতিযোগিতা । দৌড়ের প্রতিযোগিতা কার আগে কে যাবে । খেলা শেষে সবাই মিলে আবার আমাদের বাড়িতে আসার পালা । আবার ফেরত জার্নি, বোয়ালজোরি খাল পার হতে অসুবিধা হলো না । ওরা পার্শবর্তী এক বাড়ি থেকে নৌকার ব্যবস্থা করেছে । খাল পার হয়ে প্রায় এক ঘন্টা হেটে বাড়ি এসে দেখি সারা বাড়ি লোকে ও ছেলে মেয়ে হৈ চৈ এই ঘরে সেই ঘরে খাওয়া দাওয়ার হিড়িক । রাত বারটা/একটা পয্যন্ত ঘুম নাই । এই তো আমাদের ছোট বেলার ঈদের আনন্দ ।
পর দিন নানুর বাড়ি না গেলে তো ঈদের আসল মজাই হলো না । নানু আর খালা,মামা,মামী সবাই অপেক্ষা করে আছে । সকালে নানুদের বাড়ি গিয়ে সারা দিন মামাতো ভাই ও প্রতিবেশি ছেলে মেয়েদের সঙ্গে হৈ চৈ করে কাটানো হলো ।
তিন/চার দিন পয্যন্ত দেশের গ্রামে ঈদের আনন্দ চলতে থাকে । অনেক সময় গ্রামে হাডুডু,দাড়িয়াবান্ধা খেলা, পুঁথি পাঠ; পুঁথি পাঠের মধ্যে” শাহিদে কারবালা “ পড়ার মতো লোক আগে থেকে ব্যবস্থা করা হতো । শাহিদে কারবালার কিছু অংশ আমার এখন ও মনে পড়ে,”লাখে লাখে সৈন্য মরে,কাতারে কাতার, গুনিয়া দেখিলাম সবে ৪০ ও হাজার ।” উপস্থিত শ্রোতাদের অনেকে আবার হো হো করে কেঁদে চোখের পানি ও ফেলে ।
আবার অনেক সময় মানসা দেবী ,বেহুলা,লখিন্দার ও সাপের গল্প বলা হতো । মানসা দেবীর কিছু স্মৃতি, আমাদের বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয় । অনেকে ধারণা করে মানসাতে এখন ও সাফ আছে । কাজেই কেউ ওর ধারে কাছে যাইতে সাহস পায় না । আর ও কত মজার গল্প, এ সব গল্পের আসর শুরু হলে আর শেষ হয় না,কার না শুনতে ইচ্ছা করে ।