ফেসবুকে আমার শ্রদ্ধেয় আকতার ভাই-এর অতি সম্প্রতি একটি লেখার সূত্র ধরে-ই আজকের লেখা। উনি লিখেছেন। ………
” হাত বাড়িয়ে দিন।
মন খুলে দিন।
যাঁদেরকে চেনেন না তাঁদের সাথে হাসিমুখে পরিচিত হোন।
আপনি শুরু করুন। তিনিও শুরু করবেন। দেখা হলে পারলে কোলাকুলি করেন। হাতে হাত রেখে কথা বলেন।
আমরা সবাই ভালো । সবাই হাসি-খুশী থাকতে চাই। সংকোচের কারণে পারি না। সংকোচ আমাদেরকে আরো সংকুচিত করে দিচ্ছে।
আমরা আসলে সবার মাঝে মিলেমিশে থাকতে চাই।
চলার পথে, এলিভেটরে, বাসে, ট্রেণে, মসজিদ, মন্দির, গীর্জায়, লেকের ধারে, নদীর পাড়ে, জঙ্গলে, বনে, বাঁদাড়ে, মেলায়, খেলায়, ভেলায়, ঠেলায়, দোকানে, মলে, জলে, স্থলে যেখানে যাঁকে পাবেন তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দিন।
স্পর্শ দিন। স্পর্শ নিন।
ছোট বড়ো সবাইকে সালাম আদাব করুন। হ্যালো হাই বলুন। বাই, যাই বলুন। চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। বাচ্চাদের সাথে বেশী বেশী আলাপ করুন। বাচাদেরকে আগে সালাম আদাব দিন।
আমরা সবাই খুব কষ্টে আছি। একঘরে হয়ে যাচ্ছি। একে অপরের সাথে কথা বললে কষ্ট কম হয়। নিজেও বাঁচুন। অন্যকেও বাঁচান।
মানুষ ছাড়া মানুষ বাঁচে না। একে একা বাঁচতে পারবেন না।
আগ বাড়িয়ে কথা বললে আপনি ছোট হয়ে যাবেন না। আপনি আগে কথা বললে আপনারই মান-সন্মান বাড়বে। ছোট হয়ে যাবেন না।
এড়িয়ে যাবেন না। পালিয়ে যাবেন না।
হাসিমুখে কথা বলুন। মন দিয়ে দশটা শুনুন। হাসিমুখে দুইটা বলুন। নিয়ৎ ঠিক রাখুন। কাজ-কথা আর ব্যবহারে সততার পরিচয় দিন। আপনার চারিদিকে ফুলের বাগান হবে। নানা রঙের ফুল ফুটবে।
আমার সাথে এখন সবাই কথা বলেন। অনেকে কষ্টের কথাও বলেন। অনেক কিছু শেয়ার করেন। আমিও সবার সাথে কথা বলি। এ ক্ষেত্রে আমার লাজ লজ্জা বলতে কিছুই নাই।
আমরা সবাই ফুলের মালার মতো। এককভাবে একটা ফুল তেমন ভালো দেখায় না। এককভাবে একটা ফুল খুবই নিঃসংগ।
একই সুতায় ফুলের মালা গাঁথা থাকলে গলায়ও দেয়া যায়–খোপায়ও পড়া যায়।“………
…………….
আকতার ভাইয়ের এই লেখাটির উপর শতাধিক লাইক ,কমেন্ট দেখলাম। আমিও তাদের মধ্যে একজন। তবে এক ভদ্রমহিলার একটি মন্তব্যে তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন,” চেষ্টা করছিলাম ভাই ২০১৩ তে যখন প্রথম আসছিলাম। আমার ফ্লোরে, এলিভেটরে লবিতে। তারপর দেখলাম উনারা উচ্চ বংশীয়, দেশে রাজা উজির ছিলেন। আমি কি চোর ক্যাটাগরিতে কানাডায় আসছি কিনা, আমার ধর্ম ঠিকঠাক আছে কিনা এসব বিষয়ে উনারা খুব চিন্তিত। পরে lesson learnt, সব বাদ। no eye contact.”

টরন্টো কানাডা আসছি প্রায় ১৫ বছর। এ দেশে আসার পর অনেক চরাই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছি। যদিও এটা কোন সাকসেস স্টোরি না তবু-ও আল্লাহ তায়ালা বিদেশ-বিভুয়ে বৌ-বাচ্চা নিয়ে চলার তৌফিক দিয়েছেন। এটাতেই আমার সন্তুষ্টি।
তাহলে আবার সমস্যা কি ?? না কোন সমস্যা নয়, আসলে বিগত ১৫ বছরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পরিবেশে কাজ করেছি,পরিচিত হয়েছি দেশবিদেশের অনেকের সাথে। এ সময়ে আমার অনেক দেশি বন্ধুবান্ধব বা পরিচিত জনের সাথে কথা বলে নিজেকে আরো দ্রুত এগিয়ে নেবার চেষ্টা করেছি। তখন অনেক দুঃখজনক অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছি। এদের অনেকের কাছ থেকে কিছু ভালো পরামর্শ বা মতামত আশা করেছি কিন্তু বদলে যা পেয়েছি সেটি খুবই তিক্ত। তবে এ সব কথার অবতারণা করে কাকেও ছোট-বড় করতে চাই না। আকতার ভাইয়ের লেখার উপর ঐ ভদ্রমহিলার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আমার অর্জিত তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলি আবার মনে পরে গেল।

টরোন্টোতে আমরা বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত জনসংখা একেবারে কম নয়। বাংলাদেশ থেকে অনেকে প্রথমে এদেশে এসেই প্রথমে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা অর্জিত ক্ষেত্রে চাকুরী পায় না। জীবনযাত্রা নির্বাহের জন্য এদেশে এসেই তাই অনেকে সারভাইভাল জব শুরু করেন। কিন্তু আমি দেখেছি এ সব ক্ষেত্রে যারা আগে এসেছে তাদের কাছে প্রত্যাশিত সাহায্য পান না। উপরন্ত অনেক উন্নাসিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে নবাগতকে ছোট দেখানোর চেষ্টা করেন। ভাব দেখান যে তিনি দেশে অনেক বড় কিছু করে এসেছেন ,দেশে তার অনেক বড় ব্যাবসা-চাকুরী ছিল। তিনি নবাগতকে সাহায্যের পরিবর্তে তাকে অনেক ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করেন। এ মানসিকতা চাইনিজ বা ভারতীয়দের মধ্যে দেখা যায় কিনা আমি জানি না। সেটা থাকলে তারা এদেশে সকল ক্ষেত্রে এতো উন্নতি করতে পারত না।

আমার এক পরিচিত জন একটি অনুষ্ঠানে আগতদের আলাপচারিতায় লক্ষ্য করলেন যে কেউ কেউ দেশে কি করতেন তার বিরাট ফিরিস্তি উল্লেখ করলেন। ঢাকার গুলশানে তার বাড়ি ,পারিবারিক বিরাট ব্যাবসা ইত্যাদির কথা বললেন। অবশেষে যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হল যে তিনি দেশে কোথায় থাকতেন, কি করতেন বা এখানে কি করছেন। জবাবে তিনি বলেছিলেন ,আমি দেশে কমলাপুর বস্তিতে থাকতাম আর রিকশা চালাতাম ! আর এখানে তিনি ডিশ ওয়াশিং শুরু করেছেন !! উপস্থিত সবাই তার জবাবে একেবারে “থঃ” হয়ে গেছিলেন।

এ ধরণের অনেকের কাছেই তাদের কানাডা আগমনের পর সাহায্যের বদলে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শুনেছি। আমাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন অতি আবশ্যক। কানাডায় নবাগত বা অন্য যে কেউ কোন সাহায্য চাইলে যেন সেটা সে পেতে পারে এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা উচিত। আখতার ভাই যেভাবে উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন সেভাবে সবাই যেন মানবিক গুণাবলীর বহিঃ প্রকাশ করতে পারি সৃষ্টিকর্তার কাছে সেই প্রার্থনা করি।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন