নরওয়ে থেকে:-
আমার ঠিক পেছনে যে দেয়ালচিত্রটা দেখতে পাচ্ছেন তা ম্যান্ডাল শহরের এক জনপ্রিয় ক্লাবের বাহিরের বসার জায়গার পেছনের দেয়ালে আঁকা সজীব সুন্দর একটা দেয়াল চিত্র । ছবি তুলতে আমি পছন্দ করি তাই যখনি কোনো সময় পাই হাতে ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি, মানুষজন, প্রকৃতি এবং যা কিছু ভালো লাগে তারই ছবি তুলি। গত দশ বৎসর জূড়ে এতো ছবি তুলেছি যে অনেক বন্ধু বান্দবদের অনেক প্রিয় মুহূর্তগুলোর অসংখ্য ভালো ছবি সমূহ যে আমার কাছে জমা আছে তা আমি নিজেও জানতাম না।
রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তাদের কাছে গ্রীষ্মে ছুটি পাওয়াটা দায় তারপরও সময় পেলেই গত গ্রীষ্মে শহরে বেরিয়ে পড়তাম ছবি তুলার নেশায়।
তো গ্রীষ্মের ঠিক আগে আমারই বয়সী এক চিত্র শিল্পী দেখি শহরের এক ক্লাবের দেয়াল জুড়ে খুব সুন্দর ছবি আঁকছে,, ওর নাম হচ্ছে কিম,, কম বয়সী সুদর্শন এক নরওয়েজিয়ান ,, ওকে বললাম যে ও অনেক সুন্দর ছবি আকতে পারে , আমার কথা শুনে ও লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলে (থ্যাংক ইউ শরীফ ,, আই এপ্রিশিয়েট ইওর কমপ্লিমেন্ট)।
জেনে রাখা ভালো , আমি কাউকে ভালো কিছু করতে দেখলে সে মানুষটাকে তা সরাসরি বলে দেই ,, আমার মতে যারাই ভালো কিছু করেন তারা সরাসরি তাদের কাজের মর্যাদা পাওয়া উচিত এবং এতে করে ওই মানুষটা আরো বেশি ভালো কাজ করার অনুপ্রেণা পান।
সারা পৃথিবীজুড়ে ক্যান্সার একটা মহামারীরূগ ,, নরওয়েতে ক্যান্সার রোগটা আরো বেশি মহামারী,, গত সপ্তাহে পত্রিকায় দেখলাম কিম নাকি ক্যান্সারে মারা গেছে ,, নিজ কাজের প্রতি নিষ্টাবান, কম বয়সী , সুদর্শন এমন একটা ছেলেকে অসময়ে এমনভাবে চলে যেতে দেখলে খারাপ লাগে। এক মুহূর্তের জন্য হলেও বুকের ভেতরটা কেমন জানি কেঁপে উঠে।
ধ্রুব সত্য মৃত্যর ব্যাপারটাকে আমরা সবাই জানি,, আমরা সবাই ভালোভাবে বুঝি যে আমাদের সবাইকেই একদিন না একদিন চলে যেতে হবে,, তারপরও অন্য কারো ভালো দেখলে আমরা হিংসায় জ্বলেপুড়ে মরে যাই,, অন্য কাউকে ভালো কিছু একটা করে দেবার ক্ষমতা থাকলেও তা করে দিতে চাইনা,, নিজের ওডেল সম্পদ থাকলেও পাশের বাড়ির গরীব কারো জমি হাতিয়ে নেবার জন্য মুখিয়ে থাকি , সম্পদের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে মৃত্যু জিনিসটার মতো ধ্রুব সত্যটাকে আজ সবাই ভুলতে বসেছি।
সবাই ভুলে গেছে যে দাদাও গেছে, বাবাও গেছেন, শিগ্রই আসছে নিজের পালা।
যে গ্রাম, শহর কিংবা দেশে আমরা জন্মেছি, সে গ্রামের, শহরের কিংবা দেশের জন্য সামান্য হলেও কিছু একটা করে যেন মরতে পারি। মারবার আগের নেয়া শেষ নিঃস্বাশ টা যেন কোনো কিছুই না করতে পারবার দীর্গস্বাশ না হয়।