নরওয়ে থেকে:-

 

আমার প্রিয় আব্বা জনাব গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ১৯৬৮ সালে সিলেটের মদন মোহন কলেজ থেকে বি কম পাশ করলেও উনি খুব ভালো ইংলিশ লিখতে ও বলতে পারতেন, গণিতের উপর উনার অসাধারণ অধিপত্ব ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় মৌলবীবাজারের চা বাগানের ম্যানেজারের চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে মায়ের কাছে চলে এসেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী কালীন সময়ে চা বাগান মালিকের অনেক চেষ্টার পরও উনি আর মৌলবী বাজারে ফিরে যাননি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে চা বাগানে কর্মরত কিছু বিহারিরা আব্বাকে মেরে ফেলবার প্ল্যান করেছিল, উনি যেহেতু বাঙালি অফিসার ছিলেন তাই , বাঙালি নিধনের প্লানের একটা অংশ ছিল আব্বাকে মেরে ফেলা। আব্বা হৃদয়বান একজন মানুষ ছিলেন, তাই উনারই কিছু বিহারি কর্মচারী উনাকে রাতের আঁধারে পালতে সাহায্য করেছিল। গ্রামে আসবার পর উনি আমাদের এলাকার স্থানীয় হাই স্কুলে উনার বনধু সহির উদ্দিন কলা মিয়া স্যারের সাথে সহকারীশিক্ষক হিসাবে শিক্ষকতায় যোগ দেন এবং জীবনের শেষ ৩০টা বৎসর ওখানেই গণিত ও ইংরেজির শিক্ষক হিসাবে পার করে দেন। আব্বা গণিত ও ইরেজীতে ভালো হওয়ায় সারা বৎসর সকাল বিকাল আমাদের ঘরে এলাকার ছেলেমেয়েদের লাইন লাগানো থাকতো। ওই সময়ে বুঝিনি তবে এখন আম্মার জন্য সত্যি দুঃখ হয়। আব্বা সব সময় ব্যস্ত থাকায় সত্যিকার অর্থে আম্মাকে তেমন কোনো সময়ই দিতে পারেন নি।
আমি ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সল্ পর্যন্ত মদন মোহন কলেজের ছাত্র ছিলাম, সাইন্সের ছাত্র ছিলাম, গ্রামের ছেলে, শহরে প্রথম এসেছি তাই পড়ালেখা থেকে শহরের অন্য জিনিসগুলোর প্রতি বেশি মনোযোগ ছিল। চাচাতো বোন শানু আপা শাহজালাল উনিভার্সিটিতে ইকোনমিক্সের ভালো ছাত্রী ছিলেন বিধায় উনার সুবিধার্তে চাচার বাসা উনিভার্সিটির কাছাকাছি সুবিদ বাজারের ওদিকে ছিল। চাচাতো ভাই শওকত ভাই আর আমি যেকোনো কিছুর অজুহাত করে বিকেলের দিকে মোটর সাইকেল নিয়ে সিলেট শহরের প্রাণ কেন্দ্র জিন্দাবাজারে বেড়াতে আসতাম। শওকত ভাইয়ের সাথে আরো কত কিছু নিয়ে কত স্মৃতি কিন্তু উনি মিশিগানে থাকেন বিধায় ১৩ বৎসর হয় উনার সাথে আর দেখা হয়না।
কলেজে পড়বার সময় জীব বিজ্ঞানের একটা জেনেটিক তত্ত্ব পড়েছিলাম, তত্ত্বটা কার ছিল মনে নাই , তবে সে তত্ত্ব অনুযায়ী মানুষের ক্ষেত্রে দাদা দাদি কিংবা নানা নানীর শারীরিক কিংবা মানসিক অনেক অনেক কিছু তাদের নাতি নাতনিদের উপর গিয়ে পড়ে।

১৯৭০ সাল থেকে নরওয়ে তেল সম্পদ আহরণ শুরু করে এবং সে সময় থেকেই মূলত নরওয়ে ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হতে থাকে। সেই ১৯৭০ সালের পর থেকে নরওয়েজিয়ানরা পড়ালেখায় অমনোযুগী হতে থাকে এবং বেশি ধনী রাষ্ট্র হবার সাইড এফেক্ট হিসাবে বিগত ৪৯ বৎসরের মধ্যে বর্তমানে ওদের পড়ালেখায় অমনোযুগী হবার পরিমান সবচেয়ে বেশি। ওরা যখন ইংরেজীতে কথা বলে শুনতে অনেক মজা লাগে, কেননা ওদের ইংরেজি বলার ধরণটা অনেক ফানি। কেননা ইংরেজি অনেক শব্দ আর নরওয়েজিয়ান অনেক শব্দ প্রায় একই রকম কিনতু অনেক ক্ষেত্রে অর্থ অনেক ভিন্ন, তাই ওরা অনেক হিসাব করে ইংরেজি বলতে হয় বলেই ওদের ইংরেজিতে কথা বলা শুনতে অনেক মজা লাগে।
তবে যাই হোক আমার মেয়ে সফিনা ক্রিস্টিনে গণিত ও ইংরেজিতে অনেক ভালো এবং এই দু সাবজেক্টে সফিনা ওর ক্লাসের সবার সেরা। হয়তোবা জীব বিজ্ঞানের সেই জীন তত্ত্বের প্রভাব আমার মেয়ের উপর পড়েছে, তাইতো সফিনা ওর দাদার মতো গণিত ও ইংরেজিতে পারদর্শী , আমার মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থী।

Rakuten Kobo Canada

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন