গতকাল রাতে হটাৎ করে আমার বাবার লেখা একটি পুরাতন ডাইরির একটি পাতা চোখে পড়লো এবং সেটা দেখে আরো কিছু পড়লাম। খুব সুন্দর করে উনি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি বর্ণনা করে গেছেন। আসলে আমাদের সবার চলে যেতে হবে এবং আমাদের অবর্তমানে পড়ে থাকবে শুধু আমাদের কাজকর্মের স্মৃতি এবং যদি কিছু লিখে যেতে পারি। আমি আমার বাবার মতো দৈনিক ডাইরি লেখক নোই এবং সেজন্য আমি গর্বিত নোই। যাহোক এই সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে মাঝে মধ্যে ২/১ টি লেখা হয়ে থাকে। আমি লেখাতেও তেমন ভালো নোই, যাকে বলে সাধারণ মানের একজন Amateur লেখিয়ে। তবে ২/১ জনের কাছে এই মান নিয়েই যা লিখি তা নাকি ভালো লাগে, সেটা তারা আমাকে খুশি করার জন্য বলুক বা সত্যি সত্যিই বলুক সেই অনুপ্রেরণাতেই মাঝে মধ্যে লেখা।
যাহোক মূলবিষয়ে আসা যাক। বাবার ডাইরি কিছুক্ষন পড়ার পরে বসলাম গত বছর অর্থাৎ ২০১৬ এর হিসাব মিলাতে। সব মিলিয়ে বছরটি আমার বা আমাদের জন্য খুব খারাপ যায়নি। আমি লেখাটি যদিও গত বছরের ২/১ টি খারাপ খবর দিয়ে শুরু করবো তবে মূল ফোকাস থাকবে বছরের শেষের দিকে ২টি ভালো খবরের বিষয় কারণ এ দুটি খবরের মধ্যে কিছু জানার থাকতে পারে এবং খবর ২টি নিঃসন্দেহে উৎসাহমূলক।
গত বছরের সবথেকে খারাপ খবর হলো আমার একমাত্র খালার ইন্তেকাল (ইন)। আর একটি হস্ছে পারিবারিক সম্পত্তির বিষয় নিয়ে একটি আলোচনা এবং বোঝা পড়ায় খুব কিছু কাছের আত্মীয়ের মুখ উন্মোচন যেটা আমার কাছে অকল্পনীয় ছিল। যাদেরকে আমার বাবা ভাই চাকরি দেওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত ধরণের সম্ভাব্য সাহায্য করেছেন তারা বাবা চাচাদের অবর্তমানে তাদেরকে অসম্মান করে কথা বলতে দ্বিধা বোধ করেনি, নিছক কিছু পয়সার কারণে। আরো একটি হলো বিগত ৬/৭ বছরের মধ্যে আমার প্রথম একটি স্পিড টিকেট, ৮০র রাস্তা দিয়ে মহা আঁনন্দে ১১৩ তে চালিয়ে আশা। ৪০১ হলে সমস্যা ছিল না। যাহোক এছাড়া বড়ো ধরণের আর কোনো কিছু ঘটেনি তাই পরম করুনাময় আল্লাহ্তালাকে অসেষ ধন্যবাদ।
এবার ভালো কিছু ঘটনার ২টি উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে আলাপ করি। দুটি ঘটনার দুটি সুন্দর টেলিফোনের সংবাদ নিয়ে। একটি দেশের, আর একটি এখানের। প্রথমে দেশেরটি নিয়ে শুরু করা যাক। সাধারণত দেশের ফোনে কম বেশি টুকি টাকি সমস্যার কথাবার্তা থাকেই, সে আত্মীয়র ফোন হোক আর বনধু-বান্ধবের ফোন হোক। তবে ঠিক গত রাতের আমার মাতৃতুল্য বড়ো বোনের ফোনের খবরটি ছিল বর্ষসেরা। তার ছেলে এবছর স্নাতক পরীক্ষা দিয়েছিলো রাজশাহী বিশবিদ্যালয় থেকে। সে বর্তমানে ঢাকাতে ভোক্তা অধিকার আইনের একটি ক্যাম্পেইনএ ঢাকাতে অবস্থান করছে। তার মাকে তার বনধুরা ফোন করে জানিয়েছে যে তার পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে, সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে এবং এ বছর তার ক্লাসে প্রথম হয়েছে। এ রকম খবর অনেকেরই হয়ে থাকে এবং অনেকের কাছে হয়তো মামুলি বেপার কিন্তু আমার বোন এবং দুলা ভাইয়ের জন্য খবরটি অত্যান্ত গুরুত্বপর্ণ। আমার বোন তথাকথিত গৃহকর্তী, প্রথম জীবনে মায়ের সাথে আমাদের বড়ো করে তোলা আর পরবর্তীতে তার ছেলে এবং স্বামীকে দেখাশোনার বিনা বেতনের নিরলস চাকরিটি করে জাস্ছে। দুলাভাই একজন সহকারী জেলা তথ্য অফিসার, অতএব বুজতেই পারছেন একটি সাধারণ পরিবার তাই তাদের জন্য দেশের বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে ছেলেকে এ পর্যন্ত নিয়ে আশা বিরাট বেপার। এবার ছেলেটি যে শুধু ভালো ফলাফলই করেছে তা নয়, সে এই বয়সে যে বইগুলি পড়েছে, যে সোশ্যাল এক্টিভিটিস গুলি করেছে বা যে মন মানসিকতায় গড়ে উঠেছে তা আমার নিজের করতে অনেক সময় লেগেছে।
আমার ভালো লাগার কারণ হস্ছে আমি তার ছোটবেলার খুব বেশি সঙ্গী হতে পারি নি তবে আমার ঠেকে শেখা কিছু আদর্শের স্পর্ষ তাকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং so far সেটাতে সে সফল। আমাদের ভাতিজা বা ভাগ্নে ভাগ্নি আমাদের নিজের সন্তানের মতো। আমি আগে এই ব্লগে আমার ভাতিজার সাথে একটি ক্যানু ট্রিপের কথা লিখতে গিয়ে ছোটদের সাথে সম্পর্কের কথা এবং তাদেরকে derail হওয়ার পথ থেকে সরে থাকার কিছু কথা লিখেছিলাম। যে পদ্ধতিগুলি আমরা অবলম্বন করছি আল্লাহর রহমতে এখনো পর্যন্ত তা কাজে আসছে। আমি যেটা বলেছিলাম যে ওদেরকে এমন কিছু বিষয়ে ইন্টারেস্টিং করে তুলতে হবে যাতে করে সে বিষয়টি যেমন ক্ষতির কারণ না হয় আবার ওই দিকে বেস্ত থাকার কারণে আশেপাশের বাজে জিনিসগুলিতেও যেনো ধরা না খায়। কেউ কোনো গেরান্টি দিতে পারবে না তবে একেবারে কাজ না হলেও Harm Reductionর কাজ হবে। ভাগ্নেকে বলেছিলাম সে SSCতে GPA ৫ পেলে এবং সামাজিক ও সাধারণ জ্ঞানের উপর দক্ষতা অর্জন করলে তাকে একটি ভিন্নধর্মী পুরষ্কার দেওয়া হবে। উল্লেখ, সে দুটিতেই সফলকাম হয়েছিল।
পুরস্কার স্বরূপ তার SSC পাশের পর তাকে তার আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট করে নেপাল ভ্রমণে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমি তার বাবদ খরচের টাকা দিয়ে তাকে অনেক ভালো কিছু কিনে দিতে পারতাম কিন্তু আমার মনে হয় সেটির প্রভাব খুব বেশি দিন থাকতো না। নেপালে গিয়ে সে পরিচিত হয়েছে আমার বিশিষ্ট বনধু মি: বামন যে কিনা ওখানে একটি prestigious প্রাইভেট ইংলিশ স্কুলের শিক্ষক এবং বর্তমানে মার্কিন স্কলারশিপের অধীনে আন্তর্জাতিক ভাবে যুবকদেরকে ইংরেজি ভাষা শেখার মাধ্যমে ফেইস বুকের অপ্রয়জনীয় দিকে থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে এবং very সাকসেসফুল। তার আমন্ত্রণে তার একটি ক্লাসে আমাকে ২ ঘন্টার জন্য তার young ছাত্রদের জন্য কিছু বলতে বলা হয়, সেখানেও ভাগ্নে ছিল। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ৩টি বড়ো ধরণের উপত্যাকা পার হয়ে আমার ওই বনধুর মামার বাড়িতে যেখানে সে দেখেছে অতো পাহাড়ের উঁচুতে বিরূপ পরিবেশে কিভাবে মানুষ তাদের জীবন ধারণ করছে। দেখেছে একটি মা কিভাবে তার ২ টি অটিস্টিক মেয়ে নিয়ে সংসার করছে এবং তার মুখে হাসিও আছে। এ ছাড়া নেপালে অবস্থানের প্রতিটি কর্মকাণ্ডেই সে উৎসাহিত এবং বিস্মিত হয়েছে। সে দেখেছে জীবনটি অনেক বড়ো, আর এই বড়ো জীবনটিকে শুধু পড়াশুনা, একটি চাকরি এবং ফেইস বুকের মধ্যে আবদ্ধ রাখলে চলবে না।
ছোট বা বড়ো বেলায় আমরা অনেক নীতি বাক্য বা বাণী শুনে থাকি এবং অনেক সময়ে দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখি, আমি নিজেও করেছি কিন্তু সেটাকে অনুসরণ তেমন করা হয় না কিন্তু আমার জীবনের অতি কঠিন সময়ে এমনি কিছু বাণী এবং কিছু বই আমাকে অনেক সাহায্য করেছে তাই আমি ভাগ্নেকে শুধু ভ্রমণ নয় ভ্রমণের সাথে কিছু জিনিসের প্রমাণও দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যেমন ” কাটা হেরি ক্ষান্ত কেন কোমল তুলিতে, দুঃখ বিনা সুখ ল্যাব হয়কি মোহিতে” আবার Nitzshe(1844-1900)-র লেখা, “To reach anything that is worthwhile, to reach anything that is valuable you have to go through an extra ordinary amount of effort.”…….any existence that is too comfortable is worthless. যেদিন সকালে আমরা ৩টি উপত্যাকা পার হয়ে পাহাড়ের অনেক উপরে গ্রাম দেখতে যাই সেদিন সকালে আমর মনে হোলো তাকে উপরোক্ত বিষয়ের একটি উদাহরণ দেওয়া হোক। ওই পাহাড়ের উপরে উঠতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছিল কিন্তু যখন উপরে পৌঁছে গেলাম তখন উপর থেকে নিচের নয়নাভিরাম বিস্তীর্ণ দৃশ্য এবং মার্চের গরমে উপরে বিশুদ্ধ নির্মল হওয়া উপরে উঠার সমস্ত কষ্ট মুছে দিলো এবং মনে হলো ওখানে খুব সহজে যাওয়া গেলে হয়তো অতো ভালো লাগতো না। তারপর কোনো এক সুন্দর সকালে গেলাম পোখরার সারাংগোট পাহাড়ের চূড়ায় সূর্যোদয় দেখতে। দেখলাম আস্তে আস্তে পাহাড়ের উপর দিয়ে কিভাবে সূর্য উঠলো। পোখরাতে যাওয়ার একটি যাত্রা পথ কষ্টের হলেও আমরা ইচ্ছাকৃত ভাবে ৮ ঘন্টার বাস যাত্রায় গিয়েছিলাম কারণ এতে করে সাধারণ মানুষের খুব বেশি কাছে যাওয়া যায়। সব মিলিয়ে সে অনেক মজা করেছে এবং অবাক হয়েছে।
অবশেষে ফেরার আগে আমরা যখন কাঠমুনডু-র একটি হোটেলের ৪ তলায় বসে রেস্ট নিশ্ছি তখন নিচে দেখা গেলো একজন সাদা ভিনদেশি মহিলা হোটেলের লন চেয়ারে বসে কি যেন লেখালেখি করছেন, তাকে দেখে ভাগ্নে প্রশ্ন করলো সে ওখানে কি করছে। আমি না জানলেও বললাম সে হয়তোবা কোনো কিছু নিয়ে গবেষণা করতে এসেছে তাই সে সেগুলি নিয়েই কাজ করছে। ও বললো খুব সূদনর তো, আমি কিভাবে এরকম করতে পারি। আমি বললাম তুমিও যদি ভালো করে পড়াশুনা করো এবং নিজেকে চৌকষ করে তুলতে পারো তাহলে তুমিও একদিন এরকম গবেষণার কাজে এখানে বা অন্য কোনো দেশে যেতে পারবে, তবে প্রথম বিষয় হলো একটি বিশ্ববিদ্দালয়ে ভর্তি হওয়া, খুব ভালো রেজাল্ট করা এবং তার সাথে একজন ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করা। সে বলেছিলো সে চেষ্টা করবে তবে তার মেধা দিয়ে সেটা হবে কিনা সে জানে না। আমি বলেছিলাম সেটা হবে কি না সেটা বড়ো বেপার নয়, গুরুত্বপূর্ণ বেপার হলো তার ১০০% effort দেওয়া, এবং সেটা সে দিয়েছিলো; কাল রাতের তার মায়ের টেলিফোনের খবরটি ছিল সেই effort এর একটি ফল।
সবাই তার জন্য দোআ করবেন।
হ্যা, এবার আসি আমার দ্বিতীয় ভালো খবরটি নিয়ে। এটি অবশ্য নতুন ইম্মিগ্রান্ট এবং বাংলাদেশি এক ছোট ভাইকে নিয়ে। উনার সাথে পরিচয়ের বেপারটি এদেশে নেটওয়ার্কিং এর একটি সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। গত কয় এক সপ্তাহ আগে আমার অফিসে কাজের মধ্যে একটি ফোন বেজে উঠলো। বেশি বেস্ত বা গুরুত্বপুর কোনো কাজের মধ্যে থাকলে উত্তর দেওয়া হয় না কিন্তু সেদিন ফোনটা ধরলাম। ওপর প্রান্ত থেকে বললো, ” ভাই আমি সাইফুল, আমার চাকরি টি হয়ে গেছে, অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হলো, আপনাকে আপনার continious সাপোর্টের জন্য অনেক ধণ্যবাদ”। উনি উনার পড়াশুনা শেষে Durham Region এ CMHA তে সোশ্যাল ওয়ার্কার হিসাবে FT চাকরিতে জয়েন্ট করেছেন। এমন একটি খবর শুনলে আর ধণ্যবাদ লাগে। খুবই ভালো লাগলো। ছেলেটির নাম সাইফুল আলম, বাংলাদেশের relatively young psychologist. তার সাথে পরিচয় হয় ৪ বছর আগে, উনি এবং উনার স্ত্রী শারমিন যখন প্রথম এদেশে ইমিগ্রান্ট হয়ে আসেন। খুবই respected, friendly এবং cooperative একটি ফ্যামিলি। পরবর্তীতে উনাদের ফ্যামিলির আরো অনেকের সাথে পরিচয় হয়, তাদরে মধ্যে শার্লিন এবং মিঃ মাহাবুবও অমায়িক লোক। যাহোক উনার সাথে পরিচয় এবং নেটোয়ার্কিং-র গুরুত্ব বিষয়ে এবার কিছু বলি।
আজ থেকে ৭/৮ বছর আগে আমরা সোশ্যাল ওয়ার্ক এবং সোশ্যাল সার্ভিস এর কিছু প্রফেশনালদের নিয়ে মাঝে মধ্যে বসতাম, চাকরি বাকরি বিষয়ে আলোচনার জন্য। তখন ডানফোর্থে থাকা বনধু রেজোয়ান অনিককের সাথে পরিচয় হয়। উনি একজন কৃষিবিদ, MBA এবং বাংলাদেশের কোনো একটি NGO-র বড়ো ধরণের কর্মকর্তা ছিলেন। ওই সময়ে উনি প্রজেক্ট ডেভেলপমেন্ট এর উপর পড়াশুনা শেষ করে সম্ভবত PT কোনো কাজ করছিলেন। যাহোক আমরা একদিন ফ্রন্ট স্ট্রিট এর একটি টিম হর্টন-এ উনার resume নিয়ে বসেছিলাম। এই সেখান থেকেই প্রফেশনাল থেকে পার্সোনাল হয়ে গেলাম আমরা, হলো পারিবারিক শখ্যতা। উনি আমারি মতো open-minded এবং Adventurous একজন লোক, ভাবিও একজন ভালো মানুষ। আর তার ৪ বছরের ক্ষুদ্র রাজকুমার সমতুল্য ছেলেটিও অসাধারণ, তার মুখ থেকে মামা ডাক শুনলে প্রাণ জুড়িয়ে হয়। বেস্ততার কারণে খুব যোগাযোগ না হলেও সামারে আমাদের বেশ একসাথে ঘুরতে যাওয়া হয়। উল্লেখ অনিক ভাই এখন এখানে একটি প্রতিষ্ঠানের ইন্টেরিম ED-র পদে আছেন এবং উনার কাজের ধরণ সম্মন্ধে আমি জানি, এ পদে উনি উনার থেকে বেশি অভিজ্ঞতাসম্পর্ণ সাদা কানাডিয়ানদের টপকে এসেছেন। sorry অনিক ভাই তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার জন্য।
হটাৎ করে একদিন অনিক ভাই ফোন করে বললেন তার এক স্কুল বন্ধু Guelph থেকে Community Service-এ ডিপ্লোমা করে placement করতে জাস্ছে তাই তার কিছু পরামর্শের দরকার। আমি তাকে আমার ফোন নম্বর দিতে বললাম। তার নাম জাকারিয়া উদ্দিন জুয়েল।সে ও এখন বনধু হয়ে গেছে। মিঃ জুয়েল আর একজন দক্ষ এবং friendly বেক্তি। আলাপের পর উনি উনার placement শুরু করলেন, শেষ করলেন। উনার ম্যানেজার পরে আমার কলিগ হলেন। এর পর প্রায় দু বছর পরে উনি একদিন ফোন করে বললেন সেটেলমেন্ট-এ উনি যে কাজ করছেন তাতে তেমন কোনো ভালো সম্ভাবনা দেখছেন না, তাছাড়া উনার কাজটি PT তাই উনি আমার সাথে দেখা করতে চান এবং এ বেপারে আলাপ করতে চান।
অবশেষে দেখা হলো একদিন, কথা হলো। তাকে আমাদের অর্থাৎ Mental Health-এর তৎকালীন job trend, possibility এবং challenge এর কথা বললাম। উনি রাজি হলেন এ বিষয়ে একটি try মারতে। বললাম Geroge Brown -এ একটি শর্ট সাটিফিকেট কোর্সের কথা। আর বললাম, যেহেতু উনি একটি চাকরি করছেন তাই Resume টা একটু পরিবর্তন করে উল্লেখিত ফিল্ডে FT চাকরির আবেদন করতে। ঠিক অল্প কিছুদিনের মধ্যেই উনি আমার পাঠানো একটি FT চাকরিতে আবেদন করে চাকরি পেয়ে গেলেন, এর পর আর তাকে থামতে হয় নি। সে চাকরি ছাড়লেন, আরো ২/১ টি চাকরি পেলেন এবং উনার কাছ থেকে কিছু টিপসও পাওয়া গেলো। উনি খুব ভালো লেখেন এবং এই ব্লগের নিয়মিত লেখক। পরিবার নিয়ে খুব ভালোই আছেন। সম্প্রতি ব্র্যান্ড নিউ বাড়িতে উঠেছেন। Good Luck Jewel ভাই, নামের সাথে কামের জুড়ি রেখেছেন। উনি প্রথম কাজটি ছেড়ে দেওয়ার সময় উনার ED-কে বলে আমার পরিচিত আর একজন ইমিগ্র্যান্ট ভাইয়ের ইন্টারভিউ এর বেবস্থা করেছিলেন। Thanks জুয়েল ভাই। এছাড়া উনি আমাকে দুজন বাংলাদেশি ভাইকে রেফার করেছিলেন এবং এদের দুজনই বর্তমান ভালো কাজ করছেন। এদের মধ্যে একজন হলো মোস্তফা ভাই, যিনি আমাদের প্রথম আলোচনার সারমর্ম Tim Horton-র একটি টিস্যু পেপারে লিখে নিয়াছিলেন এবং সে মতে আগাতে থাকেন, অবশেষে তার পছন্দনীয় কাজ পান। খুবই সৎ এবং পরিশ্রমী, যখন কোনো প্রয়জনে ডাকি তখন সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেন। এবং দ্বিতীয় জন হলো আমার এ বছরের সুখবর দাতা জনাব সাইফুল আলম।
৪ বছর আগে জুয়েল ভাই সাইফুল ভাইকে রেফার করেছিলেন। সাইফুল আর তার স্ত্রী শারমিনের সাথে দেখা হয় আমাদের বাসাতে। আলাপ করে জানলাম উনি সাইকোলজি-র আর শারমিন সোশ্যাল ওয়ার্কের এবং দুজনেরই দেশে কাজের অভিজ্ঞতা আছে। আলোচনা হলো, কিছু অপসন বের করা হলো এবং উনারা ঝাঁপিয়ে পড়লেন নতুন করে ক্যারিয়ার গড়ার দৌড়ে। শারমিন আগেই তার পড়াশুনা শেষ করলেন তবে কাজ এখনো শুরু করা হয়নি কারণ তাদের ঘর জুড়ে এসেছে দুটি ফুট ফুটে রানী। অপেক্ষা তাদের বেড়ে ওঠা। এদিকে সাইফুল তার পূর্ববতী পড়াশুনা থেকে কিছু ক্রেডিট অর্জনের মাধ্যমে শেষ করলেন BSW. পড়াশুনা চলাকালীন গবেষণার কিছু কাজ করলেন। তার একটি গুন্ হলো সে খুব কমুনিকেটিভ এবং প্রোএক্টিভে, যেকোনো বেপারে মাঝে মধ্যে ফোন করতেন যদিও অধিকাংশ বেপারে সে already ভালো সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। তাকে শুধু বললেই হলো কি এবং কিভাবে করতে হবে, তার পর সে নিজেই সেটা ঠিক ঠিক করে ফেলবেন।
মাঝে মধ্যে কথা বার্তা বলা, আমার বেক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করা, ইত্যাদি ছাড়া আমি তার জন্য আর কিছুই করিনি, যা করার করেছে সে নিজে আর অবশ্যই তার স্ত্রী এবং পরিবারের অবদান। ওরকম কথা তো অনেককেই বলি, কেউ কাজে লাগায় আবার কেউ কোনো কারণে কাজে লাগাতে পারে না। অনেকে আবার মনে করে হাতে ধরে কাজ না দিলে কাজ হবে না। এমন হয়েছে একই জাগাতে ২ জনকে পাঠিয়েছি, একজন ফিরে এসেছে কিছু মন্তব করে আর একজন লেগে থেকে এখন ভালো কাজ করছে। আমি বা আমার মতো এখানে অনেক দেশি ভাই বোন আছেন যারা আপনাকে বলতে পারেন কিছু তথ্যের কথা, কিছু দিক নির্দেশনা এবং তাদের অভিজ্ঞতার কথা কিন্তু বাদ বাকি আপনার নিজের হাতে, যেমনটি করেছি আমি, করেছেন অনিক ভাই, জুয়েল ভাই, মোস্তফা ভাই এবং সাইফুল ভাই সহ আরো অনেকে। যাহোক সাইফুল ভাই আমি আপনার জন্য খুব বিষেশ তেমন কিছু না করলেও আমাকে আপনার পরিবারের ধন্যবাদের কাতারে রাখার জন্য অনেক ধন্যবাদ, এটা অনেক অর্থ বহন করে। আশা করি ২০১৭-র কোনো একটি সুন্দর দিনে আমার ফোনটি আবারো বেজে উঠবে এবং ওপর প্রান্ত থেকে শোনা যাবে ওই সুন্দর একটি বাক্য, “ভাই আমার স্বপ্নের চাকরিটি হয়ে গেছে” । সেই আশা রেখে সবাইকে ইংরেজি নতুন বছরের শুভেসছা জানিয়ে এখানে শেষ করছি। সবাই ভালো থাকবেন।
মুকুল
টরন্টো, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬