১৯৮৭ সাল দেশ ছেড়ে ছিলাম জীবিকার উদ্দেশ্যে। ফেব্রুয়ারী মাস, দুবাই আসে পৌছুলাম। কাজের সন্ধান চলছে। একটা পার্ট টাইম চাকুরী হলো ; শারজাহতে , দুবাই থেকে ১৫/২০মিঃ দুরত্বের রাস্তা। দুপুরের পর থেকে কাজ রাত ১০তা পর্যন্ত । ওখানে পরিচয় হয় কামাল ভাইয়ের সাথে। একে সাথে কাজ করার সুবাদে শাখ্যতা বাড়ে কামাল ভাইয়ের সাথে। কামাল ভাইয়ের বোন জানু ভাবী মিঠু ভাইয়ের স্ত্রী। পরে জানলাম মিঠু ভাই আমার বড় ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আস্তে আস্তে পারিবারিক বন্ধুত্ব সৃস্টি হয়। সময় কাটতে থাকে।
আমার চাকুরী হয় একটা ইউরোপিয়ান বিমান সংস্থায়। মিঠু ভাই তখন ওনার কোম্পানির সেলস ম্যানেজার। আস্তে আস্তে একসময় জড়িয়ে পাড়ি বিভিন্ন বাঙালি সামাজিক অনুষ্ঠানের সাথে।অনুষ্ঠান করতে টাকার দরকার , আর এইজন্য দরকার স্পন্সর বা কো-স্পনসর। বিশেষত আমাদের প্রতিটি বৈশাখী মেলাতে মিঠু ভাই সব সময় আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। ব্যাক্তিগত ভাবে আর ওনার কোম্পানীর সহয়াতা নিয়ে। বাঙালী কমুনিটির জন্য যার সহযোগিতার হাত সব সময় বাড়ানো ছিল। আর তা ছিলো দল মত নির্বিশেষে সবার জন্য ।
এক সময় মিঠু ভাই দুবাইয়ের পালা চুকিয়ে কানাডা পাড়ী দেবার প্রস্তুতি নেন। একদিন সকালে মিঠু ভাই আমার অফিসে হাজির।
বললেন: হাফিজ আমার আর আমার ফ্যামিলির টিকেট বুক কারো তোমাদের এয়ারলাইন্সে – তোমাদের ভাড়া কম।
টিকেটিং কাউন্টারে আসে ওনাদের বুকিং করলাম। আমি তখন আমাদের ফ্লাইটের এয়ারপোর্ট ডিউটি করি। মধ্যে রাতের ফ্লাইট। নির্ধারিত দিন সময় মতো ওনারা এয়ারপোর্টে পৌঁছুলেন। একসময় যথারীতি বিদায় নিয়ে সবাই বিমানে উঠে পড়লেন। জানু ভাবী আর বাচ্ছাদের সাথে দুবাইয়ের পালা ওখানেই শেষ হলো। তারপর মিঠুভাই কিছুদিন দুবাই ছিলেন ২/১ বছর পর উনিও বিদায় নিলেন।
২০০২ সালে ইমিগ্রেশন নিয়ে আমিও চলে আসলাম কানাডায়। আবার দেখা হলো মিঠু ভাইয়ের সাথে , সেই আগের মানুষ আন্তরিকতার কোনো পরিবর্তন নাই। আবার পরিবারিক যাতায়াত শুরু হলো। কয়েক বছর এই ভাবে চলার পর ব্যাস্ততার কারণে আর ওনার অনুপস্থির কারণে দূরত্ব বাড়তে থাকে। যেন সেচ্ছা নির্বাসন নিলেন বাংলাদেশে। তবে ভাবীর কাছ থেকে তার নিয়মিত খবর পেতাম।
কয়েক মাস আগের কথা আমার এক বন্ধুর ছেলের বাগদান অনুষ্ঠান। আমার কাজ ছিলো , ঠিক করলাম আমার স্ত্রী আগে চলে যাবে আর আমি অফিস থেকে এসে ওখানে যাবো। সেই ভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম , তৈরি হয়ে ঘর থাকে বের হবো। এমন সময় আমার বৌ ফোন করলো :কখন আসবা ? মিঠু ভাই এসেছে, তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তুমি আসলে তোমার সাথে খাবে। আমি কয়েকবার খেয়ে নিতে বলেছি, কিন্তু উনি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
জিজ্ঞাসা করলাম : খাবার সময় কখন ?
:সবার খাওয়া প্রায় শেষ। কিন্তু মিঠু ভাই তোমার সাথে খাবারের অপেক্ষা করছে।
আমি যখন পৌছুলাম সবার খাওয়া শেষ।
আমাকে দেখে মিঠু ভাই বললেন :তোমার আপেক্ষায় ছিলাম। অনেক দিন পর দুই ভাই একসাথে খাবো।
বললাম : আপনার এই শারীরিক অবস্থায় কেন আমার জন্য দেরি করলেন?
:এই বয়েসে আর শরীর। কয় দিন চলবে জানিনা। তোমার সাথে একসাথে খাবার সুযোগ আবার কবে পাবো জানিনা।
দুজনে একসাথে খাবার খেলাম। শারীরিক অবস্থার কারনে বেশি ক্ষন বসলেন না। তখন কি জানতাম আর কোনো দিন দেখা হবেনা।
চির বিদায় মিঠু ভাই। আপনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
Innaa… I met him few times. Liked his sense of humour. May he be rest in peace!!!