ক্রিস্টিয়ানস্যান্ড, নরওয়ে থেকে:-
চিটাগং শহরের বাঁশখালীতে জন্ম নেয়া এক স্বপ্নবাজ তরুনের নাম জয়দেব পাল, চিটাগংয় শহরের বাঁশখালীর যে ৬ জন স্বনামধন্য বীর মুক্তিযুদ্ধা ( শামসুল আলম চৌধুরী, মোহাম্মদ ইসহাক, মহেন্দ্র রুদ্র, সুনীল পাল, পরিমল দত্ত, আসিব দাশ ) ছিলেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন আমাদের নায়ক জয়দেব পালের বাবা বীর মুক্তিযুদ্ধা শ্রদ্ধেয় সুনীল বিকাশ পাল। মুক্তিযুদ্ধা বাবার একমাত্র ছেলে জয়দেব পাল ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন জীবনে বড়ো কিছু হওয়ার, পরিবার এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করার।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে প্রাইমারি স্কুলে পড়ালেখা শেষ করে ১৯৯৫ সালে ভর্তি হন আগ্রাবাদ সরকারি হাই স্কুলে, সেখান থেকে ২০০০ সালে মেধা আর উৎকর্ষের সাথে এস এস সি পাশ করার পর ভর্তি হন চিটাগংয়ের হাজি মহম্মদ মহসিন কলেজে। ২০০২ সালে চিটাগংয়ের মহসিন কলেজ থেকে পাশ করার পর চলে আসেন সিলেটে, ভর্তি হন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে । সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর দেশেই অনেক চাকরির অফার ছিল জয়দেব পালের। কিন্তু স্বপ্ন যে আকাশ ছোঁয়ার, তাই উনি আর থেমে থাকেননি দেশের গন্ডিতে। বিশ্বের বিভিন্ন উনিভার্সিটেতে মাস্টার্সের জন্য আবেদন করেন উনি , সুযোগ পেয়ে যান নরওয়েজিয়ান উনিভার্সিটি অফ লাইফ সাইন্সে, ২০১০ সালের আগস্টে চলে আসেন নরওয়ের রাজধানী অসলোতে।
সেই যে দেশ ছেড়ে আসা , তারপর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি জয়বেদ পালের, একের পর এক স্বপ্নরা হাতছানি দিতে থাকে সাফল্যের পূর্বাকাশে। নরওয়েজিয়ান উনিভার্সিটি অফ লাইফ সাইন্সে পড়ালেখার পাশাপাশি বন্ধুরা মিলে যত্নকরে গড়ে তুলেন নিজেদের মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যার ব্রাঞ্চ ছিল নরওয়ে এবং বাংলাদেশে, স্বপ্ন ছিল নিজেদের কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে অনেকদূর যাওয়ার, তাই সব কষ্টভুলে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন কোম্পানির জন্য, ব্যবসার পরিচিতি এবং প্রসারের জন্য গিয়েছেন অনেক দেশে। তবে শেষমেশ নিজেদেরই এক বন্ধুর প্রতারণায় ব্যবসায় জলাঞ্জলি দিতে হয়, নিজের সামনে নিজের স্বপ্নে গড়া কোম্পানিকে দূমড়ে মুচড়ে শেষ হতে দেখতে হয়। তবে স্বপ্নবাজ পুরুষেরা কক্ষনো থেমে থাকেনা। স্বপ্নবাজদের কক্ষনো থেমে থাকতে নেই। ২০১২ সালে বিয়ে করে সংসারী হন জয়বেদ পাল, নিজের সুশিক্ষিত স্ত্রী আর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সুখের সংসার গড়ে তোলেন নরওয়ের রাজধানী অসলো শহরের উপকণ্ঠে লীলাস্ট্রোম শহরে। যুক্ত হোন মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি ইয়ারা ( Yara ) এর সাথে গ্লোবাল সেলস ম্যানেজার হিসাবে। নিজের কর্ম নিষ্ঠা আর একাগ্রতার জন্য খুব সহজেই স্থান করে নেন মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি ইয়্যারার গ্লোবাল একাউন্ট ম্যানেজমেন্টে সেকশনে সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে। ইয়্যারা নরওয়ের নামিদামি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর একটি এবং ইয়্যারা এর বাৎসরিক ইনকাম নরওয়ের অন্য অনেক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর থেকে অনেক বেশি।
আমি যখন প্রশ্ন করি যে জয়দেব ভাই,, আপনার আগামীর স্বপ্ন কি?
উনার একটাই উত্তর, আমি জয়দেব পাল আমার ব্যাক্তি জীবনে অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই, আমি আমাকে দিয়ে আমার পরিবার, আমার চট্টগ্রাম শহর , আমার দেশ ও দেশের মানুষকে বিশ্বের বুকে পরিচিত করতে চাই, সামগ্রিক ভাবে আমি বাংলাদেশের জন্য আগামীতে কিছু করতে চাই।
ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা জয়দেব পাল আগামীতে নরওয়ে আওয়ামীলীগকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে অবধান রাখতে চান, সাথে করে নিজেকে, নিজের সুশিক্ষা এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আগামিতে নরওয়ে আসা ছেলেমেয়েদের নিয়েও কাজ করতে আগ্রহী উনি।
বাংলাদেশের বিভিন্ন উনিভার্সিটি থেকে পাশ করে অনেক ছেলেমেয়েই বিষন্নতায় ভুগেন। মনে রাখবেন, আপনার/আপনাদের মতোই দেশের নানান প্রাইভেট/পাবলিক উনিভার্সিটি গুলো থেকে পাশ করে বের হয়ে আপনাদের মতোই অতি সাধারণ ছেলেমেয়েরাই পৃথিবীর নানা দেশে সস্মানে কাজ করে যাচ্ছেন এবং দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছেন। আপনার সুশিক্ষা, আপনার স্বপ্ন এবং আপনার সুচিন্তিত চিন্তাধারাই আপনাকে জয়দেব পাল সহ অন্য অনেক বাংলাদেশীর মতো করে নরওয়ে, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডার বিভিন্ন মাল্টি ন্যাশনাল প্রতিষ্টানে ভালো কোনো এক পদে এক প্রতিষ্টিত কর্মজীবী, এক সুপ্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশির মর্যাদা এনে দিতে পারে।
মনে রাখবেন,- যারা সত্যিকার অর্থে চেষ্টা করেন, তারা জীবন সংগ্রামে কক্ষনোই বিফল হোন না।
নরওয়ের ক্রিস্টিয়ানস্যান্ড থেকে আপনাদের সবার জন্য শুভ কামনা।