মানডাল নরওয়ে :-
সানি আমার আমেরিকা প্রবাসী ছোট ভাই মাহদীর বয়সী , ওর বাসা আমার বাসা থেকে ৫০০ গজ দূরে। প্রতিদিন ও ওর কাজ শেষ করে বাসায় যাবার সময় আমার দোকানে এসে সামান্য সময় আমাকে জ্বালাতন করে যায়। ওকে দেখলেই আমার ছোট দুই ভাইয়ের কথা মনে পড়ে তাই নির্ধিদায় ওর জ্বালাতন সহ্য করতে হয়। ও পুরান ঢাকার ছেলে, পুরান ঢাকার ছেলেরা যেমন হবার কথা ও তার থেকে এক মাত্রায় এগিয়ে। খুবই রসিক সানি অত্যন্ত বাস্তববাদী একজন মানুষ তাই খুব কম বয়সেই নিজের পরিশ্রমে ও ওর নিজের জীবনটা অনেক সুন্দর করে গড়ে নিয়েছে যা সুজুগ পেলেও সব বাংলাদেশী ছেলেমেয়েদের পক্ষে করা সম্ভব হয়ে উঠেনা। ও ভালো জায়গায় ভালো পজিশনে কাজ করে এবং লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে, ওর সুনির্দিষ্ট লক্ষ থাকবার কারণেই বাংলাদেশ থেকে সাইপ্রাস হয়ে গত ৬ বৎসরে নরওয়েতে এসে এমন ভালোভাবে থাকতে পারছে, হেসে খেলে জীবন পার করতে পারছে , আরো বড়ো হবার, আরো সুন্দরভাবে জীবন যাপন করবার স্বপ্ন দেখতে পারছে যা বেশির ভাগ ছেলে মেয়েরাই পারেনা। কেন পারেনা ?? পারেনা কারণ দেশের বাইরে এসে পরিশ্রম করে একটু ভালোভাবে থাকার সুজুগ পেলেই বেশিরভাগ বাংলাদেশির মাথা পুরাপুরি আউলা হয়ে যায়। তখন অনেকেই গত কয়েক বৎসর আগের কথা ভুলে নিজেকে অনেক বড়ো ভাবতে শুরু করেন। জীবনের মূল লক্ষ্যকে ভুলে গিয়ে বিপথগামী হন।
পুরান ঢাকার ছেলে হইলেও সানির বিশেষ ২টা গুন্ আছে , ওর যে জিনিসগুলো আমার সবচেয়ে ভালো লাগে তা হচ্ছে ও বড়দের যথাযথ সম্মান দিতে জানে এবং কথা দিলে কথা রাখে যা বেশিরভাগ বাংলাদেশির কাছ থেকেই প্রত্যাশা করা যায়না। দেখবেন আজ আপনি যাকে কোনো উপায়ে উপকার করেছেন, সে মানুষটাই কয়েকদিন পরে আপনারই সবচেয়ে মাথা ব্যথার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের মানুষেরা প্রকৃতিগতভাবে হোক আর জাতিগতভাবেই হোক না কেন খুবই আবেগ প্রবন, এর যেমন ভালো দিক আছে, ঠিক তেমনি খারাপ দিকও আছে। আমরা কাউকে কিছু দিতে গেলে, না বুঝে শুনেই অনেক বেশি দিয়ে দেই আবার পরে সে মানুষটারই পেছনে লেগে থাকে ধ্বংস করে মাটিতে মিশিয়ে না দেয়া পর্যন্ত পিছ পা হইনা।
দেশ ও জাতিকে কিছু দিতে গেলে আগে নিজেকে ঠিক করুন। নিজেকে সুশিক্ষিত করুন, নিজেকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলুন , কেননা আপনি নিজে দু নাম্বারি হয়ে জাতিকে ঠিক করবেন তাতো হয়না। আজকে ফিলিস্তিনি মুসলমানের জন্য কেঁদে কেটে একাকার করে দিবেন আবার কালকেই অন্যায়ভাবে, জুরপূর্বক পাশের হিন্দু বাড়ি দখল নিতে গিয়ে মালাউনের বাচ্চা গালি দিয়ে নিজের প্রতিবেশী, নিজেরই স্বজাতি আরেক ভাইকে মারপিট করে বাস্তুচ্যুত করবেন তা তো মানা যায়না ! আপনি যদি ভালো মানুষ না হয়েই থাকেন তবে অন্তত ভালো মানুষের অভিনয় করে অন্যদের ধোঁকা দিবেন না প্লিজ।
নিজেকে ঠিক করে নিজে ভালো থাকতে পারলে আপনার বৌ বাচ্চা ভালো থাকবে, নিজে যদি সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে নিজের মতো করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো থাকেন তবে সমাজ ভালো থাকবে, আর সমাজ ভালো থাকলে দেশ ও জাতি ভালো থাকবে। যাদের নিজেদেরই ঠিক নাই তারা সারাদিন অন্যের দুষ খুজেঁ, তাই আগে নিজেকে ভালো করুন, নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করুন, নিজের বৌ বাচ্চা, মা বাবার অধিকার সংরক্ষণ করুন, তারপর দেশ এবং সমাজ ঠিক করতে যান। বাপ্ ভাইয়ের ঘাড়ের উপর খেয়ে ঘুমিয়ে, নিজের পড়ালেখা ঠিক না রেখে, নিজেদের সম্পত্তি অনাবাদি রেখে নিজের বিফল জীবনের জন্য সারাদিন যদি মা বাপ্ আর সরকারের ছৌদ্ধ গুষ্টি উদ্দার করেন তবে বেঁচে থাকতে তো শান্তি পাবেনই না, মরার পরও আপনার বিফল আত্মা ভুত হয়ে আপনাকে অশান্তিতে রাখবে।
দেশে থাকেন আর বিদেশে থাকেনই না কেন। অন্যের দোষ-গুন্ খোঁজার আগে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের আত্মার ভিতরটা ভালো করে একটু দেখে নিবেন ।
টাকা পয়সা থাকুক আর নাইবা থাকুক, সাউথ নরওয়েতে আমরা কিছু বাংলাদেশী আছি, যারা ভালো আছি, মানুষিক ভাবে ভালো আছি , কেননা আমরা আপনাদের মতো অভিনয় করিনা। আমরা নিয়মিত আয়নার সামনে দাঁড়াই, আমরা আমাদের নিজেদের কে নিয়মিত প্রশ্ন করি। আমরা আমাদের নিজেদের ভালো রাখবার চেষ্টা করি। আমরা আমাদের সুখে দুঃখ্যে একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়াতে দ্বিধাবোধ করিনা। আর কাউকে যদি কোনো কথা দেই, তবে সময় মতো কথা রাখবার চেষ্টা করি।