নরওয়ে থেকে:-

norway

মোস্তফার বয়স আনুমানিক ২৩ কিংবা ২৪, বাড়ি ইরাকে, ও আমাদের চেয়ে প্রায় ১০ বৎসরের ছোট  । নিজের কাজে অত্যন্ত পারদর্শী এবং অত্যন্ত নম্র ভদ্র একটা ছেলে, প্রায় ৭ বৎসর থেকে ও নরওয়েতে বসবাস করছে। প্রতিদিন রাতে ও আমার দোকানে খেতে আসে, গল্প করে অনেক্ষন , আমি জানি যে ও আমার উল্টাদিকের বার্গার কিং এ কাজ করে। তবে নরওয়েতে আমরা যেহেতো সহজে কেউ কারো দেশ, ধর্ম প্রফেশন সম্মন্দে কথা বলিনা তাই ওকেও কোনোদিন আমি জিজ্ঞেস করিনি ওর আসল বাড়ি কোথায় বা বার্গার কিং এ কি কাজ করে। তবে বার্গার কিং এর পাশ দিয়ে যাওয়া আসার সময় মাঝে মাঝে কাজের মাঝে দেখতে পেলে বুঝতে পারি ও ভালো কোনো পজিশনে কাজ করে। প্রায় সপ্তাহে ওর বাসায় পার্টি থাকে এবং আমার কাছেই সে অর্ডার দেয়। আমার দোকানটা মান্দালে একমাত্র হালাল ফুডের দোকান যেহেতো তাই সকল মুসলিম আমার দোকানের খরিদ্দার। গত ১০ মাসে মোস্তফা যেহেতো অনেক পরিচিত হয়ে গেছে তাই গতকাল মোস্তফাকে জিজ্ঞেস করলাম যে বার্গার কিং এ ও কি কাজ করে??
মোস্তফা হচ্ছে মান্দালের বার্গার কিংয়ের ম্যানেজার , ওর অধীনে নরওয়েজিয়ান থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশীয় প্রায় ২০ জন ছেলে মেয়ে কাজ করে, কাজে লোক নিয়ুগ থেকে সমস্ত কিছুর দায়িত্ব তার উপর। ও ওর বেতনের সাথে সাথে বার্গার কিংয়ের Mandal শাখার বাৎসরিক আয়েরও একটা ছুটো পার্সেন্টেজও পায় যা নরওয়েজিয়ান ক্রনায় বিশাল।
গত দুই বৎসর নরওয়েজিয়ান ইকোনোমি খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে. এই সময়ে মোটামোটি ভালো একটা কাজ পাওয়া প্রায় অসম্ভব, কিন্তু মোস্তফা তার নিজ যোগ্যতা দিয়ে ভালো বেতনের একটা কাজ করছে এবং একটা বড়ো কোম্পানির একটা শাখার পুরো দায়িত্ব সুষ্টভাবে পালন করে যাচ্ছে যা সত্যিই প্রসংশনীয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি আরাবিকদের ভালো পাইনা , এদেরমতো অজুহাত প্রবণ, নিস্কর্মা মানুষ দুনিয়াতে খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। মেক্সিমাম তরুণ এরাবিক ছেলেমেয়ে নরওয়েতে নানা অজুহাতে হয় সরকারের উপর বসে বসে খাচ্ছে নতুবা ক্রাইম এর সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, এরাবিক জনগুষ্টির একজন হয়েও ওইদিক দিয়ে মোস্তফা সম্পূন ভিন্ন।
আপনি যদি যোগ্য হন, কোনো কাজের ব্যাপারে আপনার ধারণা ও যোগ্যতা থাকে, তবে পৃথিবির যেখানেই থাকেন না কেন এগিয়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। অসলো শহর থেকে মোস্তফার জন্য বড়ো আরেকটা কাজের অফার এসেছে , হয়তোবা মাস দুয়েকের ভিতর ও অসলো শহরে বড়ো কোনো প্রজেক্ট নিয়ে চলে যাবে, পরিশ্রমী মোস্তফাকে দেখলে ১০ বৎসর আগের নিজের লন্ডন জীবনের কথা মনে পড়ে যায় , ওর কর্ম উদ্দম ও কর্মীদের দিয়ে সত্যিকভাবে কাজ করিয়ে নেবার যুগ্যতা আমাকে মুগ্ধ করে। মোস্তফা ও ওর ভবিষৎ জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইলো ।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন