Mandal, Norway.
লন্ডনে যখন পড়ালেখা করি, থাকতাম ও কাজ করতাম ওয়েস্টমিনিস্টার এলাকায় , প্রতি রবিবারে কলেজ ও কাজ থেকে ছুটি বিধায় কখনো চলে যেতাম ইস্ট লন্ডনের শেডওয়েল এলাকায় সালমা ফুফুদের বাসায় না হয় গ্রিন রোডের সফিনা আপার বাসায়। সালমা ফুফু এবং সফিনা আপা মোটামুটি একই বয়সী , একজন দূর সম্পর্কে ফুফু এবং একজন সম্পর্কে খালাতো বোন হলেও দুজনই আমার উপর সমান অধিকার খাটাতেন, লন্ডনের একাকিত্বের দিনগুলোতে উনারা দুজনই অসম্ভব রকমের স্নেহ করতেন আমাকে। সালমা ফুফুর বাসায় গিয়ে ভালো করে গোসল সেরে ফুফার সাথে বসে মন ভরে দুপুরের খাবার খেতাম আর দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক আলোচনা করতাম। আমি এবং ফুফা একই জায়গায় কাজ করলেও কাজের জায়গায় কাজের সুবিধার্তে আমরা কেউ কাউকেই চিনতাম না। সালমা ফুফু অনেক শখ করে খাবার রান্না করতে, আমার জামা কাপড় দুয়ে দিতেন এবং অন্নান্য অনেক ব্যাপারে সাহায্য করতেন। সালমা ফুফুর সব স্নেহ মমতার একটাই কারণ ছিল, আর তা আমার মরহুম আব্বা। আমার আব্বা সালমা ফুফুদের অনেক স্নেহ করতেন ভালোবাসতেন বিধায় সালমা ফুফু আমার মাঝে উনার হারানো ভাইকে খুজতেন।
দু সপ্তা পর পর যেতাম সফিনা আপার বাসায়, আরজু দুলা ভাই আর আমি মিলে অনেক গল্প করতাম, আর গল্পের ফাঁকে ফাঁকে আরজু দুলাভাই রান্না ঘরে রান্নাতে অতি ব্যস্ত সফিনা আপাকে নানা কথা বলে জ্বালাতন করতেন।
বর্তমানে জানা মতে আমার সালমা ফুফু এবং সফিনা আপা দুজনই স্বামী-সংসার, নিজস্ব বাসা বাড়ি নিয়ে অনেক অনেক ভালো আছেন, তবে ২০০৭-২০১০ পর্যন্ত উনাদের সংগ্রামের দিনগুলোতে উনাদেরকে যে হাসিখুশি সংসার করতে দেখেছি তা সব মেয়েদের পক্ষে সম্ভব না। ধনী , গরিব যেমনই হন না কেনো, ব্যক্তি জীবন কিংবা সংসার জীবনে পারিবারিক সুশিক্ষা মানুষের জীবনে অনেক স্থিতিশীলতা বয়ে আনে , আমার ফুফু এবং বোনের মধ্যে সেই দিনগুলোতে আমি তা দেখতে পেতাম। কত সুন্দর, কত মধুরভাবে এতো কষ্টের মধ্যেও উনারা হাসি খুশি সংসার করে যাচ্ছেন।
আমার বিগত স্ত্রীর সাথে দেখা হবার পর ফুফুর বাসা আর বোনের বাসা দুটোতে যাওয়াই কমিয়ে দেই। একজনকে ভালোবাসি, ওকে ছাড়তে পারবোনা, কিন্তু জানতাম ফুফু কিংবা বোন দুজনই কোনো বিদেশিনীর সাথে আমার প্রেম-টেমের সম্পর্কের ব্যাপারে জানলে হয়তোবা আমাকে বাধাগ্রস্ত করবেন। তাই কমাতে কমাতে একসময় উনাদের বাসায় যাওয়াই বন্ধ করে দেই। আমার এক্স ওয়াইফ সফিনা আপা ও সালমা ফুফুর কথা ভালো করেই জানতো। ওর কাছে সম্পর্কের প্রথমদিকে উনাদের সম্পর্কে কত গল্পই করেছিলাম। নরওয়েতে আমার মেয়ের জন্মের পর নাম কি রাখবো তা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম। লন্ডনের দিনগুলোতে সফিনা আপার অসম্ভব স্নেহকে সারা জীবন ধরে রাখার তাগিদে আমার মেয়ের নামের প্রথম দিকের অংশটা সফিনা আপার নামেই রাখি। ভালোবেসে দেয়া সব ঋণ হাজার সহস্র প্রতিদানেও হয়তোবা শুধ হয়না। তবে আমার জীবনের সবচে বড়ো সম্পদ আমার মেয়ের নামের প্রথম অংশ সফিনা আপার নামে রেখে উনার ঋণ কিছুটা হলেও শুধ করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছি।
সামনে এগিয়ে যেতে হলে সিঁড়ি লাগে, আর সামনে এগিয়ে যাবার দিনগুলোতে যারা সিঁড়ি হয়ে দাঁড়ান, তাদেরকে ভুলে যাবার কোনো প্রশ্নই উঠেনা।