অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন এখন বাগান করার জন্য কি কি প্রস্তুতি নেয়া যাই !  খুব ভালো একটা প্রশ্ন যা হয়তোবা অনেকেরি জানার আগ্রহ আছে !  আমি বেশি গভীরে না গিয়ে ভালো সবজি বাগান করার জন্য কিছু সহজ টিপস নিচে উল্লেখ করবো !

1. আপনি কানাডার যে অঞ্চলে বা প্রভিন্স এ বসবাস করছেন তার plant hardiness zone কি তা জেনে নিন সবার আগে !  এই জোন এর তাপ মাত্রা, ফ্রস্ট ফ্রি দিন, লাস্ট ফ্রস্ট এর তারিখ, বৃষ্টি ও আবহাওয়া জেনে সবজির ধরণ  ও জাত নির্বাচন করুন ! এই জোন 0-11  স্কেল  এর মধ্য, 0 হলো সব চেয়ে ঠান্ডা ও 11 হলো সবচেয়ে গরম এলাকা  !

2. মাটির গুনাগুন –  ভালো সবজির চাষ ও উচ্চ ফলনের জন্য মাটির গুনাগুন অন্যতম নির্ণায়ক  ! মাটির জৈব পদার্থ শতকরা হার, মাটির রস ধারণ ক্ষমতা, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, মাটির অম্লত্ব (soil pH), মাটির তাপমাত্রা  অতীব গুরুত্ব পূর্ণ !

সবজি উৎপাদোনের জন্য মাটিতে কমপক্ষে 30-50  ভাগ জৈব পদার্থ  থাকতে হবে  !  জমিতে অতিরিক্ত পানি যাতে না জমে সে ব্যবস্থাও থাকতে হবে !  এর জন্য পর্যাপ্ত গোবর বা কম্পোস্ট সার জমিতে প্রয়োগ করতে হবে !

মাটির pH 6 -7.5  এর মধ্যে হলে ভালো হয় কারণ এই pH এ প্রায় সকল ধরণের গাছের খাদ্য উপাদান (গাছের বৃদ্ধি ও ভালো উৎপাদনের জন্য 16 রকমের নিউট্রিয়েন্ট দরকার  হয়) মাটিতে গাছের শিকড় নিতে পারে !  জমি দোআঁশ থেকে এঁটেল দোআঁশ হলে ভালো হয় !

3. সবজি উৎপাদনের জন্য পরিমিত পানি বা জমিতে উপযুক্ত রস থাকতে হবে !  প্রয়োজন না হলে প্রতিদিন পানি দেবার দরকার নাই !  কিছু সবজি গাছে অতিরিক্ত পানি দিলে বিভিন্ন রোগ বালাই এর উপদ্রপ দেখা যায় যেমন টমেটো , মরিচ , জুকিনি ও লাউ গাছে অতিরিক্ত পানি দিবেন না !  পানি দেবার জন্য সঠিক  সময় নির্বাচন করুন !  সন্ধ্যা বা রাতে পানি দিবেন না !  সব থেকে ভালো সকাল বেলা রোদ কড়া বা বেশি হবার আগেই পানি দিন ! পাতার উপর সরাসরি পানি না দিয়ে যথা সম্ভব গাছের গোড়ায় চারিদিকে পানি দিন !

4. সার প্রয়োগ –  ফসলের ধরণ বা শ্রেণী  অনুযায়ী ও মাটির উর্বরতা  অনুযায়ী গাছে সঠিক পরিমানে সার প্রয়োগ করুন !  সার একবারে না দিয়ে 2-3  বার বিরতিতে  প্রয়োগ করুন !  পাতা জাতীয় সবজি ও ফল খাওয়া হয় এমন সব সবজির স্যারের চাহিদা ভিন্ন !  বাজারে বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক সার পাওয়া যায় যেমন NPK 20-20-20  বা 20-25-20  ইত্যাদি ফরমুলেশন  !  Miracle growth অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন ! কয়েক বার বিরতিতে জৈব সার বা কম্পোস্ট গাছের গোড়ায় দেয়া যেতে পারে প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর এতে ভালো ফলন পাওয়া যাই !  জৈব সার গাছে সব ধরনের micro nutrient এর যোগসন দিয়ে থাকে !

5. পোকা মাকড় ও রোগ দমন –  এটি ভালো ফসল ঘরে তুলবার  জন্ গুরুত্ব পূর্ণ !  সঠিক ভাবে রোগ বালাই চিন্নিত করণ ও সঠিক দমন ব্যবস্থা সঠিক সময়ে না নিলে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যাবে না !  এর জন্য যারা অভিজ্ঞ তাদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে !  সাধারণত বাকিয়ার্ড সবজি বাগানে পোকামাকড় যেমন snail, slug, leaf hopper, leaf minor, mite, beetle, bug ও aphid এর উপদ্রব হয়ে থাকে ! পোকা￰ মাকড়ের জন্য অনেকে নিম তৈল বা অন্যান্য কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন !

রোগ বালাই যেমন powdery mildew, rust, rot, wilt, split,  anthracnose ও আরো অনেক রকমের রোগ ফসল ভেদে হয়ে থাকে !

6. পরাগায়ন বা pollination সমস্যা –  bisexual plant এ পরাগায়ন সমস্যার  কারণে কচি ফল ঝরে যায় !  ভালো বাগানী হতে হলে আপনাকে ফুলের পরাগায়ন সম্পর্ককে মুটামুটি  ভালো জ্ঞান রাখতে হবে !  ফুলের সেক্স  বা শ্রেণী সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে !  Gourd বা Squash জাতীয় সবজির ভালো ফলন পেতে হলে আপনার পরাগায়ন জ্ঞান থাকতে হবে ! লাউ গাছে ভালো ফলনের জন্য 3G বা 5G কাটিং পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে !  ফুলের পরাগায়ন নিয়ে অন্য একদিন বিশদ আলোচনা  করবো !

7.  সবজির জাত নির্বাচন –  আগেই বলেছি আপনার এলাকার plant hardiness zone অনুযায়ী ফসল ও তার সঠীক জাত নির্বাচন করুন ! বাজারে হাইব্রিড ও দেশি জাতের বীজ বা নার্সারি  গুলোতেও  চারা কিনতে পাওয়া যায় !  বীজের প্যাকেট এর গায়ে চারা উৎপাদন রোপন ও পরিচর্যা বিষয়ে লিখা থাকে !  সব থেকে ভালো পরিচিত কারো কাছ থেকে বীজ বা চারা সংগ্রহ করা !

8. Crop Rotation  বা শস্য  পর্যায়ক্রম  –  একই জমিতে একই জায়গায় বছরের পর বছর একই সবজি না করে তা পরিবর্তন করা !  অগভীর  মূল বা শিকড় জাতীয় সবজি গভীর মূল বা শিকড় জাতীয় সবজির জায়গায় পর্যায় ক্রমে  চাষ করা !

9. সূর্যের আলো –  অধিকাংশ সবজি গাছে প্রচুর সূর্যের আলো দরকার হয় গাছের নিজের খাবার তৈরির জন্য !   সাধারণত দিনে  6-8  ঘন্টা সূর্যের আলো থাকে এমন জায়গা সবজি উৎপাদনের জন্য নির্বাচন  করুন ভালো ফলন পেতে হলে !

10. জমি চাষ –  সবজি চাষের জন্য জমির বা বাগানের মাটি উত্তম রূপে চাষ করে আগাছা মুক্ত করতে হবে !
বিভিন্ন সবজির জন্য ছোট ছোট বেড করে নেয়া যেতে পারে !  অনেকে Square পদ্ধতিতে ছোট ছোট ইউনিট করে সবজির চারা রোপন করে থাকেন যা দিয়ে crop rotation অনুসরণ  করা যেতে পারে !

উপসংহার – এই সময়ে যারা আগাম সবজি চাষের চিন্তা করছেন তারা মুলা সবজি, কেল, ব্রকলি, জুকিনি,   লাউ এর চারা, ফুলকপি, সার্ড, বিন, সিম ও টমেটো  মরিচ. শসার চারা করার প্রস্তুতি নিতে পারেন !  শসার জন্য Parthenocarpic জাতের বীজ বা চারা কিনবেন  !  এতে pollination বা পরাগায়ন দরকার হয়  না !

লালশাক, পুঁইশাক, টমেটো, জুকিনি ও লাউ এর জন্য একটু গরম আবহাওয়া ও প্রচুর সূর্যের আলো হলে ভালো হয় !

মনে রাখবেন বাগানের পিছনে যত শ্রম ও ভালোবাসা দিবেন বাগান আপনাকে তার চাইতে বেশি দিবে !

একটি বাসা একটু খানি সব্জির বাগান
জুড়িয়ে দিবে পুরো পরিবারের মন প্রাণ !

সবাই ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন !

১ মন্তব্য

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন